বাসস
  ০৩ আগস্ট ২০২৩, ১০:৪৯

দুর্লভ মুদ্রা সংগ্রহ করা তার নেশা

॥ কামাল আতাতুর্ক মিসেল ॥
কুমিল্লা (দক্ষিণ), ৩ আগস্ট, জুলাই, ২০২৩ (বাসস): সবসময় চোখকান খোলা রাখেন, আর সেকরার দোকানে থাকে নজরদারি। কখন কোথায় বিক্রি হচ্ছে পুরাতন মুদ্রা কিংবা স্বর্ণকারের কাছে এসে গলিয়ে ফেলা হচ্ছে মূল্যবান কোন পুরা বস্তু সেদিকে তার দৃষ্টি সজাগ। সুযোগ বুঝে খাতির জমিয়ে নেন সেসব বিক্রেতাদের সঙ্গে। আর সেই অজুহাতে কিনে ফেলেন মূল্যবান ধাতব মুদ্রা ও ঐতিহাসিক সামগ্রী। রাখেন নিজের সংগ্রহে। এভাবেই ব্যক্তিগতভাবে এসব মুদ্রা সংগ্রহ করেছেন কুমিল্লার ৬৭ বছর বয়সী কুমিল্লা নগরীর ছাতিপট্টি এলাকার বাসিন্দা শাহ আলমগীর খান।
প্রায় ৬০ বছর ধরে বিভিন্ন দেশের ধাতব মুদ্রা ও মেডেল জমা করেন তিনি। সেগুলোর কোনোটির বয়স ২৫০ বছরের বেশি। কোনোটির বয়স সর্বনিম্ন ১০০ বছর। তার মধ্যে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা। মুদ্রার সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে।
নেশাটা জন্মে ছোট বেলা থেকেই। শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান বাসসকে জানান, পিতা আজম খান অলংকারের ব্যবসা করতেন। তাদের ব্যবসার বয়স ৭৭ বছর। সে নিরিখে তিনি ধাতব মুদ্রাগুলো সংগ্রহ করেন। এগুলো শখ থেকে সংগ্রহ করেন তিনি। এ ছাড়া তার সংগ্রহে রয়েছে ১১৬ বছরের পালং খাট, ২৫০ বছরের রুপার টাকা রাখার বক্স, রুপার পানদানি, গহনার বক্স, রুপার নৌকা, চেয়ার, সেতার, পায়ের মল, গলার হার, হুক্কা, কাঁটা চামচ, চামচ, গ্লাস, সুরমাদানি, আতরদানি ও কুপি প্রভৃতি। তার বাড়ি যেন প্রাচীন সামগ্রীর যাদুঘর। তার দাবি, এ সংগ্রহ আরও বাড়াবেন। ধাতব মুদ্রা ও প্রাচীন জিনিসপত্র দেখতে প্রায়ই তার বাড়িতে মানুষজন আসেন।
পালং খাটের বয়স ১১৬ বছর। ১৯৬৭ সালে বাবা আজম খান ও ১৯৮৮ সালে মা তাহেরা বেগম মারা যান। মায়ের মৃত্যুর পর এটি আর তেমন ব্যবহার হয় না। অনেকে এসেছেন এটি নিয়ে যেতে। এ খাটের কাছে এলে মা-বাবার কথা মনে হয়। তাদের স্মৃতি ধরে রাখতে এটি যুগের পর যুগ সংরক্ষণ করছেন। তার সন্তানদেরও অনুরোধ করেছেন ধাতব মুদ্রা ও বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি না করে সংরক্ষণ করতে।
কুমিল্লা যাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল আবেদীন বলেন, ২৫০ বছরের ধাতব মুদ্রা, প্রাচীন রুপার পানদানি, টাকা রাখার বক্সগুলো প্রমাণ করে এ এলাকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। ওই এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা। এগুলো সংরক্ষণ করা জরুরি।
ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, কুমিল্লা ও এর আশপাশের এলাকা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ, লোকজন শৌখিন ছিলেন। তার অংশ হিসেবে শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান ধাতব মুদ্রা সংগ্রহ করছেন। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক যাদুঘরর উপপরিচালক ড. আতাউর রহমান বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে সংরক্ষণে থাকা নিদর্শনগুলো দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তারা চাইলে এগুলো যাদুঘরে সংরক্ষণ করতে পারেন।