শিরোনাম
দিনাজপুর, ২১ জানুয়ারি, ২০২৪ (বাসস): জেলার বিরামপুর উপজেলার সাঁওতাল পল্লীর বাসিন্দারা জারিগানের মাধ্যমে জানতে ও বুঝতে পারলেন বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে। তারা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে একমত হয়েছেন।
উপজেলার বেনুপুর গ্রামের মুড়াপাড়া সাঁওতালপল্লিতে বাড়ির উঠানে খড়ের বিছানায় বসে আছে গ্রামের শিশু ও নারী-পুরুষ। মাথার ওপর কুয়াশাভেজা কাপড়ের শামিয়ানা। সবার চোখ সামনের দিকে। গানে-গানে বাল্যবিবাহের কুফল ও বিয়ে বন্ধের কৌশল জানিয়ে দিচ্ছেন বাউলশিল্পী অছিম উদ্দিন ও আসমত আলী। ঢোলে (লাল) তাল মেলাচ্ছেন ওস্তাদ বরুণ চন্দ্র শীল। জারিগান শেষে দর্শক সারির সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন, এলাকায় আর বাল্যবিবাহ হতে দেবেন না।
শনিবার বিকেল থেকে রাত আড়াটা পর্যন্ত চলে এই জারিগানের আসর। ইউনিসেফ বাংলাদেশের সহযোগিতায় ও বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্রের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আলোর ঠিকানা আন্তর্জাতিক শ্রোতা ক্লাব নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে স্থানীয় কৃষিশ্রমিক, গৃহিণী, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পল্লীচিকিৎসক, সংস্কৃতিকর্মী, সংবাদকর্মী ও সমাজকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জারিগানের মাধ্যমে সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন কুসংস্কার, বাল্যবিবাহের কুফল ও বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে অপরাধীদের শাস্তি সম্পর্কে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনি সহায়তার কথা তুলে ধরেন শিল্পীরা। জারিগানের সুর আর ছন্দের মাধ্যমে বাল্যবিবাহের শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠান শেষে সাঁওতালপল্লীর বাসিন্দারা ভবিষ্যতে তাঁদের গ্রামে বাল্যবিবাহ হতে দেবেন না বলে হাত তুলে অঙ্গীকার করেন।
ঠিকানা আন্তর্জাতিক শ্রোতা ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইবনে মুরাদ জানান, তিনি বাংলাদেশ বেতারের একজন নিয়মিত শ্রোতা। সামাজিক কুসংস্কার রোধে বাংলাদেশ বেতার সামাজিক সচেতনতামূলক নানা অনুষ্ঠান করে। গ্রামীণ জনপদে যেসব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন, তাদের মধ্যে কুসংস্কারের প্রচলন বেশি। এসব পরিবারে বাল্যবিবাহের ঘটনাও বেশি ঘটছে। তাদের বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে শ্রোতা ক্লাবের পক্ষ থেকে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এলাকাবাসীকে সচেতন করতে তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে এমন উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
অনুষ্ঠানে অন্যন্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিরামপুর উপজেলার জোতবানি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য মকবুল হোসেন বিরামপুর উপজেলা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদের সভাপতি জয়েন উদ্দিন মন্ডলসহ গ্রামের অন্যান্য শ্রোতা সাধারণ।
একইভাবে এ ধরনের অনুষ্ঠান বিরামপুর উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের চন্ডিপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি পল্লীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে আদিবাসী নারী-পুরুষেরা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে একমত পোষণ করে সকলেই হাত তুলে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন।