বাসস
  ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০

সাড়া জাগিয়েছে সৌধের ‘শৃঙ্গার ও পার্থিব প্রণয়ের গান’

লন্ডন, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৪(বাসস):ব্রিটেনে দক্ষিণ এশীয় শিল্পের শীর্ষস্থানীয় সাংস্কৃতিক সংস্থা সৌধের অভিনব প্রযোজনা ‘শৃঙ্গার ও পার্থিব প্রণয়ের গান : ঠুমরি থেকে ট্রুবাডোর’ বেশ সাড়া জাগিয়েছে। মাতিয়েছে বিশ্বখ্যাত রয়্যাল আলবার্ট হল। 
গত ১৫ই জানুয়ারি হলের এলগার রুমে কানায় কানায় পূর্ণ দর্শকেরা পিনপতন নিরবতা নিয়ে উপভোগ করেন প্রেম ও জগতের বিচিত্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রাচীন সঙ্গীত, কবিতা ও চিত্রকলা দিয়ে রচিত এক নতুন শিল্প-ভাষ্য।
পরিবেশনা শেষে দর্শকরা নিজেদের উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন। গ্রীক সঙ্গীত রচয়িতা এলিস বলেছেন, ‘আড়াই ঘন্টার এক বিশুদ্ধ সম্মোহন ছিল পুরো প্রযোজনা।’ ব্রিটিশ কেনিয়ান দর্শক সুরিন্দা বলেছেন, ‘আমার সারা শরীর ও মন কাঁপছে, এমনই অমোঘ এই সঙ্গীত ও পুরো পরিবেশনার অভিঘাত।’
ব্রিটিশ সঙ্গীত শিল্পী নিক পার্কিন বলেন, এমন সম্মোহনী পরিবেশনা অবশ্যই রয়্যাল আলবার্ট হলের বৃহত্তম মঞ্চে পরিবেশিত হওয়া উচিত।’ 
সাজদা ফ্যাস্টিভালের পরিচালক রাহুল লউদ বলেছেন, ‘এটি মুষ্টিমেয় কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক শিল্প-প্রকল্পের একটি যা একজন দর্শক খুব কমই দেখার সুযোগ পায়।’
এই শিল্প-উদ্যোগের পরিচালক টি এম আহমেদ কায়সার বলেন, অনুষ্ঠানের তিন সপ্তাহ আগে থেকেই পরপর দু’বারই সব টিকেট বিক্রি হয়ে যাওয়া আমাদের কাছে ছিল খুব আনন্দের ঘটনা! অনুষ্ঠানের পর থেকে আমরা এখনো দর্শকদের উদার প্রতিক্রিয়া পেয়ে যাচ্ছি। 
টি এম আহমেদ কায়সারের পরিচালনা ও গ্রন্থনায় মঞ্চস্থ এই নতুন শিল্প-প্রকল্পে খ্রিস্টপূর্ব ৩শ’ বছর আগে গ্রীক ভাষায় রচিত ইতিহাসের প্রথম সঙ্গীত সিকিলোস এপিটাফের সঙ্গে উপনিষদের স্তোত্র, এর সঙ্গে পৃথিবীর আদি-কবি এনহেদুয়ান্নার (খ্রীস্টপূর্ব ২,০০০) কবিতা, চতুর্থ শতকের সংস্কৃত কবি কালিদাস ও সপ্তম শতকের কবি আমারুর ইন্দ্রিয়-প্লাবী কবিতার উপস্থাপনা হলজুড়ে স্বর্গীয় অথচ সমানভাবে রক্ত-মাংসের এক পার্থিব ঘোর তৈরি করে। তাছাড়াও, সপ্তদশ শতকের ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীত রচয়িতা সদারঙ্গের জনপ্রিয় ভিমপালশ্রী বান্দিশের সঙ্গে বারো শতকে দক্ষিণ ফ্রান্সের অক্সিটান ভাষায় ভাকারেস ও বার্নার্ট বেন্টাডন রচিত ট্রুবাডোরের সমবায়ী অথচ শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশনা অনেকদিন মনে থাকবে বলেও মন্তব্য করেছেন একাধিক দর্শক। 
পঞ্চম শতকে প্রাক-ইসলামি যুগের কবি ইমরুল কায়েসের কবিতার সঙ্গে মোহ-জাগানিয়া মধ্যযুগের আরবী সঙ্গীত, দুই হাজার বছরের প্রাচীন চীনা বাদ্যযন্ত্র গুজেঙের সঙ্গে মধ্যযুগের মঙ্গোলিয়ান লোকসঙ্গীত, চীনা টাঙ রাজ্যকালের কবি দু কুইনাঙের কবিতা, এগারো শতকে ইতালির সিসিলি সম্রাট ফ্রেডেরিকোর শরীরী প্রণয়ের পংক্তিমালা, এগারো শতকের কাশ্মীরী কবি বিলহানা ও ষোল শতকে ভারতের অন্ধ কবি সুরদাস রচিত ভজন ছাড়াও, মধ্যযুগের বাঙালি কবি চন্ডীদাস, বাসুদেব ঘোষের সম্মোহনী শ্রীকৃষ্ণ-কীর্তন, মধ্যযুগ পরবর্তী কাম-প্রপঞ্চ প্রবণ ঠুমরি, হোলি, নিধুবাবুর টপ্পা, লালনের গানের অভিন্ন এবং অভূতপূর্ব উপস্থাপনা আবার এইসব বিচিত্র সঙ্গীত ও কবিতার সমন্বয়ে ইন্দ্রিয়-সুখের নতুন নতুন অর্থ নির্মাণের উদ্যোগও এই প্রযোজনায় এক দার্শনিক গভীরতা যোগ করেছে। 
সৌধের এই নতুন শিল্প-উদ্যোগে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন দুই হাজার বছরেরও প্রাচীন চীনা বাদ্যযন্ত্র গুজেঙ বাদক ইজিয়া তু, গ্রীক-লেবানিজ কন্ঠশিল্পী লারা ইদি, নিয়াপলিটান ট্রুবাডোর শিল্পী রসেলা বন্ডী, ভারত থেকে আসা হিন্দুস্তানী ধ্রুপদী শিল্পী ও ওস্তাদ রাশিদ খানের সঙ্গীত শিষ্যা কোয়েল ভট্রাচার্য ও পন্ডিত শুভঙ্কর ব্যানার্জির সঙ্গীত শিষ্য কুন্তল দাস, বৃটিশ-বাংলাদেশী সঙ্গীত শিল্পী গৌরি চৌধুরী, ফারজানা সিফাত, অমিত দে ও সৌমেন নন্দী। অপূর্ব কবিতা পাঠ করেছেন কবি ও কথাশিল্পী শ্রী গাঙুলী এবং আবৃত্তিকার তানজিনা নূর-ই সিদ্দীক। কীবোর্ডে ছিলেন সুনীল যাধব।