শিরোনাম
সিলেট, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪ (বাসস): পবিত্র ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষের ছুটিতে প্রকৃতি কন্যা সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রে গুলোতে উপচে পড়া ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে।
ঈদের ছুটিতে বরাবরের মতো এবারও পর্যটক দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। ঈদের দিন বৃহস্পতিবার থেকেই বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ভিড় করেন ভ্রমণপপিপাসীরা,তবে এই দিন সিলেটসহ স্থানীয় পর্যটকের সংখ্যাই বেশি ছিলো।
ঈদের দিন থেকে শুরুকরে আজ শনিবার ঈদের তৃতীয় দিনেও পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের উপস্থিতির কোন কমতি নেই। সিলেট নগরীর বাহিরে গোয়াইনঘাট উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। আর ঈদ ও নববর্ষের ছুটিতে এতে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে উপজেলার সব কটি পর্যটনকেন্দ্র।
শনিবার ঈদের তৃতীয় দিনেও চা বাগান সহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে মেঘ-পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন দর্শনার্থীরা।
গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং, বিছনাকান্দি, সোয়াম ফরেস্ট রাতারগুল ছাড়াও পানতুমাই ঝরনা, জাফলং চা বাগান ও মায়াবী ঝরনা পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
পর্যটকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, পাহাড়, পাথর আর স্বচ্ছ জলের সমাহার দেখে তাঁরা বিমোহিত হয়েছেন। পরিবার-পরিজন বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে তারা এসেছেন প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
শুক্রবার ঈদের ২য় দিন সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটক দর্শনার্থীমুখর হয় উঠে জাফলং,বিছনাকান্দি, রাতারগুল। তবে বিছনাকান্দি রাতুলগুলের তুলনায় পর্যটক উপস্থিতি বেশি ছিলো জাফলংয়ে।
সবুজের আস্তরণে মেঘালয়ের বিস্তৃত চোখ জোড়ানো সবুজ টিলা,পাহাড়,বয়ে চলা স্বচ্ছ জলরাশি,নুড়িপাথরের কলতানের সৌন্দর্য অবলোকনের জন্য ভ্রমণে জাফলং ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। গ্রীস্মের তাপদাহেও প্রকৃতি প্রেমিরা ছুটে এসেছেন প্রকৃতির কাছাকাছি। বরাবরের মতো এবারও এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে তাঁরা বিমুগ্ধ। পাহাড়,টিলার সাথে সাদা মেঘের লুকোচুরী। বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই প্রকৃতি যেন সেজেছে তার আপন মহিমায়। আগন্তকদের মধ্যে পরিবার-পরিজন আর বন্ধুবান্ধব নিয়ে ভ্রমণপিয়সীরা স্থানগুলো দর্শন করছেন। প্রতিটি স্পষ্টই লোকে লোকারন্য। প্রকৃতির এমন কাছাকাছি আসতে পেরে তারা খুশি। বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার দিনব্যাপী গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং, বিছনাকান্দি, সোয়াম ফরেস্ট রাতারগুল ছাড়াও পানতুমাই ঝর্ণা,দেশের একমাত্র সমতল জাফলং চা বাগান ও মায়াবী ঝর্ণাতেও পর্যটকদের পদচারণা ছিলো চোখে পড়ার মতো।
তবে সব চাইতে বেশি পর্যটকের ভিড় ছিল জাফলং জিরো পয়েন্ট। যাদের বেশিরভাগ দর্শনার্থীই ছিলেন উঠতি তরুণ-তরুণী। নদী, স্বচ্ছ জল, আর ভারতের মেঘালয়ের ওমঘট নদীর উপর ঝুলন্ত ব্রিজ,টিলা পাহাড়ের পাশাপাশি এখানকার খাসিয়া পল্লী,মায়াবী ঝরণাও মন কাঁড়ে ভ্রমণপ্রেয়সীদের। পর্যটক সমাগম বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানকার হোটেল মোটেল রিসোর্টে কোন রুম খালি নেই আগামী ৪ দিন পর্যন্ত।অগণিত পর্যটকরা আগেই ফোন ও অনলাইনে বুকিং দিয়ে রেখেছেন সবকটি হোটেল মোটেল রিসোর্টের রুম সমুহ। জাফলং জিরো পয়েন্টের আশপাশের সবকটি খাবার হোটেল রেস্টুরেন্টের জমজমাট বিকিকিনি চোখে পড়ে। এখানকার হোটেল রেস্টুরেন্টের মালিকরা জানিয়েছেন পর্যটক,দর্শনার্থীদের সমাগম বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের হোটেল রেস্টুরেন্টের বিকিকিনি বেড়েছে। পর্যটকদের কথা বিবেচনা করে সূলভ মূল্যে সব ধরনের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। পর্যটকরাও তাদের রুচি অনুসারে পছন্দ সহকারে খাবার খাচ্ছেন।
জাফলং বল্লাঘাট পর্যটনকেন্দ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি হোসেন মিয়া জানান, ঈদ উপলক্ষে প্রচুর পর্যটক জাফলংসহ আশপাশের পিকনিক স্পটে বেড়াতে এসেছেন। আমাদের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সাথে সর্বোচ্চ সৌজন্যতা প্রদর্শন করে পর্যটন কেন্দ্রিক ব্যবসা চালিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে সবক'টি পিকনিক স্পটে পর্যটক,দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ায় পর্যটকদের নিরাপত্তায় স্হানীয় উপজেলা প্রশাসন পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। টুরিস্ট পুলিশ, থানা পুলিশ সদস্যরা মাঠে সার্বক্ষণিকভাবে তৎপর রয়েছেন।
এ ব্যাপারে জাফলং টুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ মো. রতন শেখ জানান, ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ঈদেরদিন থেকেই পর্যটকে মুখরিত জাফলং। আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা কাজ করছে। গোয়াইনঘাট থানা অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন,বেড়াতে আসা পর্যটকরা যাতে কোনভাবেই চুরি ডাকাতি ছিনতাই,মাদকসহ ভোগান্তিতে না পড়েন সেদিকে আমাদের নজর রয়েছে। পর্যটক দর্শনার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনা করে ইউনিফর্ম ও সাদা পোষাকের একাধিক টিম নিয়োজিত রয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহি অফিসার তৌহিদুল ইসলাম বলেন,জাফলং বিছনাকান্দি,রাতারগুলসহ গোয়াইনঘাটের পর্যটন স্পটে বেড়াতে আসা পর্যটক উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলা প্রশাসন তরফ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আগত পর্যটকদের দোরগোড়ায় গিয়ে সেবা দিচ্ছে।
এদিকে সিলেটের জাফলংয়ে কয়েকজন নারী ইভটিজিংয়ের শিকার হওয়ায় এক তরুণকে দুই বছরের কারাদ- দুই কিশোরকে মুচলেকা নিয়ে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বিকালে জাফলংয়ে ঘটনায় দ-প্রাপ্ত তরুণ হচ্ছে- সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল গ্রামের অহিদুর রহমানের ছেলে জাহিদুর রহমান (২১)। বাকি দুজন কিশোর হওয়ায় তাদের পরিবারকে খবর দিয়ে নিয়ে এসে মুচলেকা দিয়ে পরিবারের জিম্মায় দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (জাফলং এরিয়া) মো রতন শেখ (পিপিএম) সিলেটভিউ-কে জানান- সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে একটি পরিবার জাফলংয়ে বেড়াতে এসে দুই কিশোর ও এক তরুণের ইভটিজিংয়ের শিকার হন ওই পরিবারের নারীরা। বিষয়টি তৎক্ষণাৎ ভিকটিমরা ট্যুরিস্ট পুলিশকে জানালে আমরা ইভটিজারদের আটকে উপজেলা প্রশাসনকে খবর দেই। পরে উপজেলা আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্যাট গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তৌহিদুল ইসলাম এসে ওই তরুণকে দুই বছরের কারাদ- প্রদান করেন।