শিরোনাম
নাটোর, ১৭ আগস্ট, ২০২৪ (বাসস): নাটোরের উত্তরা গণভবনে হাওয়ায় দোলা বাহারি ঝুমকো লতা সুরভী ছড়াচ্ছে। ইটালিয়ান গার্ডেনে ফোটা এই ফুল-শঙ্খ পদ্ম গদা চক্র নামেও পরিচিত। এই ফুলের রুপ আর গন্ধ অনুভূতিতে আলোড়ন তোলে দারুনভাবে। তাই বোধহয় একে বলে প্যাশন ফ্লাওয়ার।
অপরুপ স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন নাটোরের উত্তরা গণভবন। সারাবছর ধরে পাখির কুজন আর দুষ্প্রাপ্য অসংখ্য বৃক্ষরাজি গণভবনের সৌন্দর্যকে নিয়ে গেছে সুউচ্চ চূড়ায়। ঋতুভেদে অসংখ্য ফুল ফোটে আর পাখি গান গায়। বর্ষা-শরতের এই সন্ধিক্ষণে ফুটেছে ঝুমকো লতা। এর অপরুপ সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে কবি ফররুখ আহমদ লিখেছিলেন:
‘ঝুমকো লতা কানের দুল
উঠলো ফুটে বনের ফুল
সবুজ পাতার ঘোমটা খুলে
ঝুমকো লতা হাওয়ায় দোলে’
গণভবনে প্রায় শতবর্ষী ঝুমকো লতার গাছটি শুধু ফুলেই অনন্য নয়, পাতাগুলোর ভিন্নতাও চোখে পড়ার মত। এর পাতা অনেকটা যেন করতল! করতলে যেন তিনটি আঙুলের সমাহার! তিনভাগে বিভক্ত পাতার চারপাশে খাঁজকাটা। আর ফুল? মনেহয় গাঢ় বেগুনী আর সাদার বর্ণচ্ছটায় শতাধিক পাপড়ি। ফুলের কেন্দ্র জুড়ে হলুদ আভার পাঁচটি পরাগরেণু। পরাগরেণুর উপরে কলসির মত ডিম্বাশয়। ডিম্বাশয় থেকে নির্গত গর্ভদন্ডটি তিনটি হলুদ-বেগুনী রঙের গর্ভমুন্ডে বিভক্ত। প্রায় ছয় সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের এই ফুলের মিষ্টি গন্ধ প্রাণ পাগল করা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই ফুল পূজনীয়-যা শঙ্খ চক্র গদা পদ্ম নামে পরিচিত। এই ফুল যেন ভগবান বিষ্ণু’র হাতে থাকা শঙ্খ চক্র গদা পদ্ম’র প্রতীক। শঙ্খ হচ্ছে পানির মত নমনীয়তার প্রতীক, চক্র হচ্ছে সমুদ্র তরঙ্গের প্রতীক, গদা অশুভ দমনে শক্তির প্রশস্ততার প্রতীক আর পদ্ম হচ্ছে সৃজনশীলতার প্রতীক। এই নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম রচনা করেছেন নজরুল সংগীত :
‘জাগো জাগো শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম-ধারী
জাগো শ্রীকৃষ্ণ-তিথির তিমির অপসারি’
হোমিও ও আয়ুর্ব্বেদ শাস্ত্রে বলা হয়েছে, ঝুমকো লতার পাতা এবং কান্ডের আবরণ শরীরের ¯œায়ুতন্ত্রের উপরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের নিঃস্বরণ বৃদ্ধি করে প্রশান্তি এনে দেয়, ঘুম বৃদ্ধি করে। এটি ব্যথা নিরাময় করে, শ্বাসকষ্ট আর এলার্জি দূর করে। কৃমিনাশকও বটে।
আমাজন বনের গাছ ঝুমকো লতা কালের পরিক্রমায় এখন উত্তরা গণভবনে। ঝুমকো লতা ফুলের সঙ্গে বৃষ্টির যেন মিতালী। তাই বর্ষায় হয়ে ওঠে আরো একটু বেশী ¯িœগ্ধ। ঝুমকো লতার এই ¯িœগ্ধতা এখন উত্তরা গণভবনের বাড়তি আকর্ষণ।