শিরোনাম
॥ মনসুর আহম্মেদ ॥
রাঙ্গামাটি, ২৭ এপ্রি, ২০২৩ (বাসস): পবিত্র ঈদ উল ফিতরের পরে পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে পাহাড়ী কন্যা রাঙ্গামাটি। বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত কয়েকদিন পর্যটকের আগমন একটু কম থাকলেও বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাঙ্গামাটিতে আবারো আশানুরুপ পর্যটক আসতে শুরু করেছে । ধীরে ধীরে পর্যটকের পদচারণার এখন মুখর হয়ে উঠছে পার্বত্য জনপদ রাঙ্গামাটি।
এখানকার হোটেল মোটেলগুলোও ইতিমধ্যে আশানুরুপ বুকিং হয়ে গছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ রাঙ্গামাটি পর্যটন কর্পোরেশনসহ স্থানীয় বিভিন্ন হোটেল ও মোটেল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া জেলার সাজেক, বিলাইছড়ি, কাপ্তাইসহ অন্যান্য উপজেলাগুলোতে ও বেড়েছে পর্যটকের আগমন। রাঙ্গামাটির লেক পাহাড় ঘেরা প্রাকৃতিক নৈসর্গিক অপরূপ সৌন্দয়ে মুগ্ধ করছে পর্যটকদের।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে আসা পর্যটক রাজিব ও মিঠু বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে(বাসস) বলেন, ঈদের পর পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে রাঙ্গামাটিতে বেড়াতে এসে খুবই ভালো লাগছে। এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপতায় আমরা মুগ্ধ। এরকম সৌন্দর্য বিদেশের মাটিতেও দেখা যায়না। রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায়ও খুশি আগত এ পর্যটক পরিবার।
রাঙ্গামাটিতে আগত পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্পটের মধ্যে রয়েছে, রাঙ্গামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ঝুলন্ত সেতু, শুভলং ঝর্না, পেদা টিং টিং, জেলা পুলিশ কর্তৃক পরিচালিত পলওয়েল পার্ক, বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের ঐতিহ্যবাহী তীর্থস্থান রাজবন বিহার, জেলা প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত রাঙ্গামাটি শিশু পার্ক, ডিসি বাংলো, নানিয়ার উপজেলার বুড়িঘাটের বীর শ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের স্মৃতিসৌধ, জেলা পরিষদ কর্তৃক পরিচালিত শহরের ভেদভেদির মিনি চিড়িয়াখানা, কাপ্তাই লেক, টুকটুক ইকো ভিলেজ, বার্গী লেক, ডিভাইন রিসোর্ট, বেড়াইন্ন্যা বড়গাঙ, রাইন্ন্যাটুগুনসহ জেলার আসামবস্তী-কাপ্তাই সড়কের পাশে গড়ে উঠা লাভ পয়েন্টসহ লেকের পাড়ে গড়ে উঠা বিভিন্ন পর্যটন স্পট।
এছাড়াও কাপ্তাই হ্রদের পানি ও পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য রাঙ্গামাটির পর্যটকদের মন ভরিয়ে দেয়। পাহাড়ের কাপ্তাই লেকবেষ্টিত রাঙ্গামাটির প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ রাঙ্গামাটিতে আগত পর্যটক। এছাড়া রাঙ্গামাটিতে আগত পর্যটকদের জন্য নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে কাপ্তাই লেকে বিভিন্ন ধরনের ট্যুরিস্ট বোট, যেখানে পরিবার নিয়ে রাতে কাপ্তাই লেকে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। আকর্ষণীয় এসব ট্যুরিস্ট বোটে দল বেধেঁ রাত্রী যাপণ করছে রাঙ্গামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটক।
রাঙ্গামাটি পর্যটন কর্পোরেশন এলাকার বোট ইজারাদার মোঃ রজমান আলী বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে(বাসস) বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঈদের সময় রাঙ্গামাটিতে পর্যটকের আগমন একটু কম থাকলেও গত কয়েকদিন থেকে রাঙ্গামাটিতে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এতে আগের তুলনায় তাদের বিভিন্ন নৌযানের ব্যবসা অনেক ভালো হচ্ছে এবং জেলায় আগত পর্যটকদের বোট সমিতির পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
রাঙ্গামাটি জেলা শহরের স্থানীয় হোটেল স্কয়ার পার্কের স্বত্তাধিকারী মোঃ নিয়াজ উদ্দিন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে(বাসস) জানান, বর্তমানে তাদের হোটেলসহ শহরের প্রায় সকল হোটেল-মোটেলের বেশীরভাগ কক্ষই বুকিং রয়েছে। গত কয়েকদিন থেকে জেলায় পর্যটকের আগমন বেড়েছে বলে জানান তিনি। পর্যটকের আগমনে হোটেল ব্যবসায়ীরা খুশি।
রাঙ্গামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ম্যানেজার সৃজন বিকাশ বড়–য়া বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে(বাসস) জানান, ঈদের দিন থেকে মেঘলা আবহাওয়ার কারণে প্রত্যাশিত পর্যটক না আসলেও বর্তমানে জেলায় পর্যটকের আগমন অনেক বেড়েছে। বর্তমানে পর্যটন কর্পোরেশনের রুম প্রায় ৭০/৮০ শতাংশ বুকিং রয়েছে বলে জানিয়েছেন রাঙ্গামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ম্যানেজার। আগামীতে পর্যটকের আগমন আরো বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।
ঈদ পরবর্তীতে রাঙ্গামাটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসা পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদসহ বিভিন্ন এলাকায়। বোটে চড়ে হ্রদ ও পাহাড়ের মিতালীতে পর্যটকদের মন কেড়ে নিয়েছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অপরুপ লীলাভূমি রাঙ্গামাটি জেলার পর্যটন শিল্পের বিকাশে পরিকল্পিতভাবে সরকারীভাবে আরো নতুন নতুন পর্যটন স্পট গড়ে তোলাসহ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া গেলে পর্যটন খাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকেই অনেক রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি পার্বত্য জেলা দেশের একমাত্র পর্যটনের কেন্দ্র স্থল বলে মনে করেন এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকরা।
রাঙ্গামাটির সকল বিনোদন কেন্দ্রে এখন মানুষের আগমন বাড়তে শুরু করায় পাহাড়ী কন্যা রাঙ্গামাটি এখন পর্যটকদের পদচারণায় অনেকটাই মুখরই বলা চলে।