শিরোনাম
কক্সবাজার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : দেশের প্রবাল সমৃদ্ধ একমাত্র দ্বীপ সেন্টমার্টিনের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সরকার পর্যটক সীমিতকরণের কাজ করছে। পাশাপাশি এ দ্বীপে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারের এমন পদক্ষেপের মধ্যেও সেন্টমার্টিনে স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পড়েছে।
তবে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে চারটি আবাসিক হোটেলের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। কোস্টগার্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশ ও বীচকর্মীদের সহযোগিতায় পরিচালিত এ ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানের নেতৃত্ব দেন টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ডেইলপাড়ায় নির্মাণাধীন নামবিহীন একটি বহুতল ভবন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সিনবাদ, কিংশুক, স্যান্ডি বীচ রিসোর্টের নির্মাণ কাজও বন্ধ করা হয়েছে। নির্মাণাধীন এসব হোটেলের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসাথে সৈকত দখল করে দেওয়া বেশ কয়েকটি ঘেরা উচ্ছেদ করা হয়েছে।
সরেজমিন সেন্টমার্টিন দ্বীপে গিয়ে দেখা যায়, জাহাজ থেকে নেমে জেটি দিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে ঢুকতেই দেখা গেল বাজারঘেঁষে ডেইল পাড়ায় নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন।
প্রায় ২০ কাঠা জমিতে ইতোমধ্যে দুই তলার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। নির্মাণ শ্রমিকরা জানান, ভবনটিতে অত্যাধুনিক ও বিলাসবহুল আবাসিক হোটেল নির্মাণ করা হচ্ছে।
এখনও নাম দেওয়া হয়নি। ঢাকার এক ব্যক্তি হোটেলটি নির্মাণ করছেন।ভবনটির মালিক পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ তদারকি করছেন রিয়াজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। তিনি জানান, তিন মাস ধরে তিনি নির্মাণকাজ তদারকি করছেন। এ সময়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে বাধা দেওয়া হয়নি।
একইভাবে পূর্ব পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন। ইতোমধ্যে ভবনটির এক তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। স্থানীয় সৈয়দ আলম ভবনটির মালিক। সৈয়দ আলম জানান, এ ইকো রিসোর্টের নির্মাণকাজ এক বছর আগে তিনি শুরু করেন। আর্থিক সংকটে আপাতত নির্মাণ বন্ধ রয়েছে।
সম্প্রতি সেন্টমার্টিন দ্বীপ ঘুরে এ ধরনের ২৭টি হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ নির্মাণাধীন দেখা গেছে। এর মধ্যে ২০টিই বহুতল ভবন। এ ছাড়া সেমিপাকা স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে আরও সাতটি। এসব ভবন পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই প্রকাশ্যে নির্মিত হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশের ১৩টি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) একটি সেন্টমার্টিন।
এ অর্থ হলো দ্বীপের পানি, মাটি, বায়ু বা প্রাণীর ক্ষতি করে, এমন কোনো কাজ সেখানে করা যাবে না। এ কারণে সেন্টমার্টিনে স্থাপনা নির্মাণে ছাড়পত্র দেয় না পরিবেশ অধিদপ্তর।
দ্বীপের হোটেল মালিক সমিতি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সেন্টমার্টিনে বহুতল ও এক তলা মিলিয়ে হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ ও রেস্তোরার সংখ্যা আড়াইশর বেশি। এর মধ্যে গত দুই বছরে তৈরি হয়েছে ১৩০টি। ২৭টি নির্মাণাধীন আছে। পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, একটি স্থাপনা নির্মাণেও তাদের ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি।
সেন্টমার্টিনে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ঠেকানোর কাজ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের। পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে দ্বীপটিকে রক্ষার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের।
কক্সবাজারে জেলা প্রশাসন ও টেকনাফে উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয় রয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপেই পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি কার্যালয় আছে, পুলিশ ফাঁড়ি আছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ সোলাইমান হায়দার বলেন, তিনিও শুনেছেন, বেশ কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। শিঘ্রই পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নোটিশ দেওয়া হবে।
দ্বীপ ঘুরে দেখা যায়, নির্জন সৈকতের বালিয়াড়ি ও কেয়াবন উজাড় করে অবকাঠামো তৈরি, গভীর রাত পর্যন্ত সংরক্ষিত এলাকায় আলোকসজ্জা, লোকজনের হইচইয়ে ডিম পাড়তে আসতে পারছে না মা কচ্ছপ। সৈকতের বালুচর দিয়ে পর্যটকবাহী ইজিবাইক (টমটম) ও মোটরসাইকেল চলাচল করে। ফলে শামুক, ঝিনুক, লাল কাঁকড়াসহ জীববৈচিত্র ধ্বংস হচ্ছে।
দ্বীপের পরিবেশকর্মী আব্দুল আজিজ বলেন, সাধারণত ডিসেম্বর থেকে সৈকতে মা কচ্ছপ ডিম পাড়তে আসে। এ মৌসুমে কচ্ছপ তেমন একটা চোখে পড়েনি।
পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণের স্বার্থে সরকার সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিু এ চার মাস সেখানে পর্যটক সীমিত থাকবে। নভেম্বরে পর্যটকরা যেতে পারবেন, কিন্তু রাত যাপন করতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি পর্যটক সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন না। ফেব্রুয়ারি মাসে সেন্টমার্টিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজে পর্যটক যাওয়া বন্ধ রাখা হবে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তিনি সবকিছু করবেন।