ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা ও প্রশিক্ষক তানিয়া

২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:২৮ | বাসস

তানিয়া ইশতিয়াক খান। ছবি: বাসস

চাঁদপুর, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): তানিয়া ইশতিয়াক খান (৩০), স্বপ্ন ছিল উদ্যোক্তা হবেন। পড়ালেখা শেষ করার আগেই জুনিয়র অফিসার হিসেবে যোগ দেন একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস থাবা বসায়। ছেড়ে দেন ব্যাংকের চাকরি।   

উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন। ‘খানস্ ধাবা’ নামের অনলাইনভিত্তিক খাদ্যপণ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হয় ব্যবসা। বিগত ৫ বছরে তিনি নিজেই শুধু উদ্যোক্তা হননি, বহু নারী উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণও দিয়েছেন। তারা এখন প্রত্যেকে উদ্যোক্তা।

উদ্যোক্তা তানিয়া চাঁদপুর জেলা শহরের নতুন বাজার এলাকার ব্যবসায়ী ইশতিয়াক খানের চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয় সন্তান। 

তানিয়া চাঁদপুর শহরেই বড় হয়েছেন। প্রাথমিক সম্পন্ন করেছেন স্থানীয় কদমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক পড়েছেন লেডি দেহলভী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ এবং ২০১৮ সালে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও ২০২০ সালে স্নাতকোত্তার সম্পন্ন করেন চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে।

স্নাতকে অধ্যয়নরত অবস্থায় বিয়ে করেন শহরের পুরান বাজারের আরেক বেসরকারি চাকরিজীবী মো. আশিক খানকে। তানিয়া নাইরা খান ও আরিশফা খান নামে দুই কন্যা সন্তানের জননী। স্বামী-সন্তান নিয়ে বর্তমানে থাকেন শহরের পুরান বাজারের শ্বশুর বাড়িতে। আর নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি বড় পরিসরে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চালু আছে শহরের বড় স্টেশন যুমনা রোডের মাথায়।

তানিয়া বলেন, স্নাতক শেষ করে ২০১৯ সালে বেসরকারি ইউসিবিএল ব্যাংকে জুনিয়র অফিসার হিসেবে চাকরিতে যোগ দিই। একবছর পরেই বিশ্বজুড়ে দেখা দেয় করোনা। সেই প্রভাব পড়তে শুরু করে বাংলাদেশেও। ব্যাংকে কর্মঘন্টা পরিবর্তন হয়। মহামারির কারণে এবং গর্ভবতী থাকায় চাকরি থেকে ছুটিতে যাই। পরবর্তী সময়ে চাকরিও ছেড়ে দেই। এর আগে কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় নারীদের দুঃখ ও কষ্টের গল্প শুনে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখি। এরই মধ্যে ২০২০ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারি নিজের জন্মদিনে ‘বিজয়ী’ নামে নারী উদ্যোক্তা তৈরির একটি অনলাইন প্লাটফর্মের যাত্রা শুরু করি। 

তিনি জানান, মহামারি শুরু হওয়ার আগ থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন ছিল। সে আলোকে ‘খানস্ ধাবা’ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের নাম নির্ধারণ করেন। করোনাকালীন অবসর সময়ে স্থির করেন ব্যবসা শুরু করবেন। ঘরে বসেই প্রথমে স্পন্সের মিষ্টি তৈরি করেন। এই মিষ্টি তৈরি করে বিক্রির জন্য পোস্ট করেন ‘খানস্ ধাবা’ নামক ফেসবুক পেজে। এরপর থেকেই শুরু হয় বিক্রি। প্রথম ৩ কেজি মিষ্টি বিক্রি করেন ২৫০ টাকা দরে।

এই উদ্যোক্তা জানান, পেজে পোস্ট করার পর থেকে হাতে তৈরি এই মিষ্টির অর্ডার বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে এসে নিজ বাসার নিচতলায় একটি কক্ষে দিয়ে ব্যবসার প্রসার ঘটান। সেখানে মিষ্টির সাথে হাতে তৈরি পুডিং, কেক, কাবাব, রোস্ট, ডিম-পোলাও-সহ নানা সু-স্বাদু খাবার বিক্রি করতে শুরু করেন। এর মধ্যে পুডিং, কাবাব, রোস্ট ও ডিম-পোলাও প্যাকেজ হিসেবে ৯৯ টাকা দরে বিক্রি করেন। এতে তিনি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করেন।

এই উদ্যোক্তার পেজের সু-স্বাদু খাবারের সুনাম ছড়িয়ে পড়লে আরও কর্মহীন নারী তার সাথে যোগাযোগ শুরু করেন। তাদের সাথে চলে তার অনলাইন ভিত্তিক যোগাযোগ। এরপর তিনি নিজে অন্য নারীদের উদ্যোক্তা তৈরির জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং নারীদের প্রশিক্ষিত করে তুলেন।

তানিয়া জানান, এই উদ্যোক্তা সংগঠনের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৩ হাজার নারী বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং নিজ নিজ প্রশিক্ষণের ওপর কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এই বিজয়ী সংগঠনকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রূপ দিতে ২০২২ সালে মহিলা অধিদপ্তর এবং ২০২৩ সালে জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে নিবন্ধিত করা হয়।

তানিয়া ইশতিয়াক খান শিক্ষিত ও কর্মহীন নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি নিজে উদ্যোক্তা হিসেবে বিজয়ীর মাধ্যমে ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিনা ফিতে একাধিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ৩ হাজার নারীকে প্রশিক্ষিত করেছি। এর মধ্যে অনেকেই উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের কর্মদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। আশাকরি আমাদের এই কাজগুলো দেশের অন্য বেকার যুবক ও কর্মহীন নারীদের জন্য অনুকরণীয় হবে। এছাড়া উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য আমাদের বিজয়ীর পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা সব সময় উন্মুক্ত থাকবে। দেশের যেকোনো স্থান থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা যাবে।