বাসস
  ২৪ মে ২০২৩, ১৬:৩৭

জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের ব্যতিক্রমী আয়োজন

ঢাকা, ২৪ মে ২০২৩ (বাসস): আগামী মাসে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এশিয়ান জুনিয়র জিমন্যাস্টিকস চ্যাম্পিয়নশিপ। ৯ থেকে ১২ জুন  ৪৪ দেশের অংশ গ্রহণে  এবারের আসরে  অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের পাঁচ সদস্যের দল। ইতোমধ্যে টুর্নামেন্টের জন্য চুড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন। 
আসন্ন টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে আজ (বুধবার) জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের জিমনেসিয়ামে শেষ হয়েছে দুই দিনের ব্যতিক্রম এক প্রস্তুতি প্রতিযোগিতা। ছেলেদের  মধ্যে থেকে ভীতি দূর করার লক্ষ্যেই এই আয়োজন করা হয়েছে বলে বাসসকে জানিয়েছেন দলের প্রধান কোচ কোরিয়ার চো সং ডং।  টুর্নামেন্টের আদলে একেবারে বিচারকদের সামনে ফেডারেশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতে নিজেদের দক্ষতা উপস্থাপন করেন টুর্নামেন্টের জন্য চুড়ন্তভাবে বছাইকৃত ৬ জিমন্যাস্ট। বিজয়ীদের দেয়া হয় অর্থ পুরস্কারও। 
দুই দিনের এই প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন মংচিং প্রু ত্রিপুরা, এতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছেন যথাক্রমে প্রেনথৈ ¤্রাে এবং মো: রাফিল আহাম্মেদ। এছাড়া চতুর্থ পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে রয়েছেন যথাক্রমে রাজীব চাকমা, মেনটন টনি ¤্রাে এবং উহাইমং মারমা। এদের মধ্যে তৃতীয়  হওয়া বিকেএসপির রাফিল ছাড়া বাকী সবাই বান্দরবানের কোয়ান্টাম কসমো স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিযোগী।        
অংশগ্রহনকারী সবাই ৬ জুন সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। এদের মধ্যে  পাঁচ জন প্রতিযোগিতায় অংশ নিবেন এবং একজন স্ট্যান্ডবাই থাকবেন। প্রতিযোগিতা শেষে আজ  বিজয়ীদের হাতে প্রাইজমানি তুলে দেন বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের (বিজিএফ) শেখ বশির আহমেদ মামুন। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আহমেদুর রহমান বাবলু এসময় উপস্থিত ছিলেন।  
বিগত প্রায় ১১ মাস ধরে প্রধান কোচ কোরিয়ার চো সং ডংয়ের অধীনে অনুশীলন করে যাচ্ছে বাংলাদেশের জিমন্যাস্টরা। এই মুহুর্তে সিঙ্গাপুরের টুর্নামেন্টকে প্রাধন্য দেয়া হলেও বাংলাদেশের লক্ষ্যটা সুদুর প্রসারী। আসন্ন প্যারিস গেমসের পরের  অলিম্পিকে পদক জয় করতে চায় বাংলাদেশ। আর সিঙ্গাপুর আসরে অন্তত শীর্ষ আটে জায়গা পাওয়াটাই বাংলাদেশের জন্য বড় সফলতা বলে মনে করেন বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আহমেদুর রহমান বাবলু। তিনি বাসস’কে বলেন,‘ সিঙ্গাপুরের ৪৪ জাতির প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাচ্ছে চীন, জাপান,তাইওয়ান ও কোরিয়াসহ বিশ্বে আধিপত্য বিস্তারকারী এশিয়ার পরাশক্তিগুলো। এদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অস্টম স্থান অর্জন করতে পারলেই বিশ্বপরিমন্ডলে আলোচনায় চলে আসবে বাংলাদেশ।’ 
১৯৭৮ সালে কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নেয়া সাবেক এই জিমন্যাস্ট বলেন,‘ দীর্ঘদিন ধরেই ধুকতে থাকা জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের পরিবর্তন শুরু হয় শেখ বশির আহমেদ মামুন সভাপতির দায়িত্ব গ্রহনের পর। মূলত আগে  জিমন্যাস্টিকসে কোন যন্ত্রপাতি ছিল না, প্রশিক্ষনের সুযোগও ছিল অপ্রতুল। 
বর্তমান সভাপতি দায়িত্ব গ্রহনের পর নিজে উদ্যাগ নিয়ে ফেডারেশনের উন্নয়নে কাজ করছেন। ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অর্থ দিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করেছেন। বর্তমানে আমাদের অনুশীলনের জন্য আন্তর্জাতিক মানের যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে। এখন বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিকসকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাবার উদ্যোগ নিয়েছেন বশির আহমেদ।’
স্পোর্টস নিয়ে দেশের বাইরে থেকে ডিপ্লোমা কোর্স করা ফেডারেশন সম্পাদক বলেন,‘ সভাপতির কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে প্রথমে আমরা ভালো কোচ সংগ্রহের দিকে মনোযোগ দিই। শেষ পর্যন্ত আমরা কোরিয়ান একজন কোচের সন্ধান পাই। কোরিয়ান জাতীয় দলের সাবেক কোচ চো সং ডং-কে আমরা বছর খানেক আগে  নিয়োগ দিতে সক্ষম হয়েছি। কোরিয়ান দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহনের পর ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশে কাজ করেছেন তিনি। প্রায় একবছর আগে তিনি বাংলাদেশের দায়িত্ব গ্রহন করেছেন। আমরা তার চাহিদা মোতাবেক সব সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করেছি। গত ১১ মাসে আমাদের জিমন্যান্টিকসের যতটুকু উন্নয়ন ঘটেছে বিগত চল্লিশ বছরেও তা হয়নি। 
আন্তর্জাতিক ভাবে এখন আমাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক দেশই এখন আমাদের সমীহ করতে শুরু করেছে। কারণ আমরা এখন অনেক প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছি এবং ছেলেরাও ভালো করছে। সবাই এতটুকু বুঝতে পারছে যে বাংলাদেশ এখন সম্ভাবনাময় একটি দেশ।’
বাবলু বলেন, ‘ ইতোমধ্যে আমরা বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশ নিয়েছি। সেন্ট্রাল সাউথ এশিয়ায় দুটি গেমসে অংশ নিয়েছি। সর্বশেষ প্রতিযোগিতাটি ছিল ২০২১ সালে।
এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের জুনিয়র আসরে অংশ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সিনিয়র দল খুব একটা ভালো না করায় আসরের সিনিয়র বিভাগে অংশগ্রহন থেকে বিরত রয়েছে বাংলাদেশ। কোচও আসন্ন টুর্নামেন্টের উপর জোর দিয়েছেন এবং ১১ মাস ধরেই নিয়মিতভাবে দুই বেলায় প্রায় ৭ ঘন্টা অনুশীলন করাচ্ছেন।’
তিনি বলেন,‘সিঙ্গাপুরের টুর্নামেন্টের ছয়টি ইভেন্টে অংশ নিবে বাংলাদেশের জিমন্যাস্টরা। এগুলো হচ্ছে ফ্লোর এক্সারসাইজ, প্যারালাল বার, পমেল হর্স, স্টিল রিং, হরিজেন্টাল বার ও ভল্টিং টেবিল।’ তন্মধ্যে ভল্টিং টেবিল ও পমেল হর্সে বেশী ভালো করার আশা করছেন বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিক ফেডারেশনের  এই সাধারন সম্পাদক। তার মতে ভাগ্য সহায় হলে ইভেন্টগুলোতে পদকও পেয়ে যেতে পারেন বাংলাদেশের জিমন্যাস্টরা।
এ দিকে টুর্নামেন্ট স্বচক্ষে দেখার জন্য  অংশ গ্রহণকারী  জিমন্যাস্টদের  পরিবার পরিজনকে  ঢাকায়  নিয়ে আসা হয়েছে  ফেডারেশনের ব্যবস্থাপনায়।  মূলত  এই জিমন্যাস্টরা  অনেক ত্যাগ ও দীর্ঘ দিন  পরিবারের  কাছ থেকে দূরে রয়েছে। তাদের সন্তান কোথায়, কি অবস্থায়  রয়েছে , কি করছে সেটা দেখানোর জন্যই  ফেডারেশনের এই ব্যতিক্রমী  উদ্যাগ।  ফেডারেশনের এমন উদ্যগে  এ্যাথলেট এবং তাদের  পরিবার মহা খুশি।  সন্তান কিংবা ভাইয়ের  এমন অর্জন দেখতে  কেউ কেউ জীবনে প্রথমবার  ঢাকায়  আসার সুযোগ পেয়েছেন।  নিজ পরিবারের  সন্তানের এমন অবস্থান দেখে  সবাই খুশি। 
আজ শেষ হওয়া  প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন  মাংচিং প্রু ত্রিপুরা। সন্তানের সফলতায় দারুন খুশি বান্দরবনের প্রত্যন্ত স্থান উঠে আসা মংচিং প্রু ত্রিপুরার মা সুইনু চিং মার্মা। নবম শ্রেনীতে পড়–য়া ছেলে প্রথম হওয়ার পর তিনি বলেন,‘আসলে আমরা জীবনে কল্পনাই করতে পারনি আমাদের সন্তান এমন সাফল্য অর্জন করবে।’ নিজের সন্তানের প্রতিযোগিতা দেখতে ফেডারেশনের খরচে ঢাকা এসেছিলেন তারা। বলেন আমাদের এই আগমন সার্থক হয়েছে। 
একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন দ্বিতীয় হওয়া প্রেনথৈ ¤্রাের মা চামলে ¤্রাে। বলেন কোয়ান্টামের সহায়তা না থাকলে আমরা হযতো আজ এখানে আসতে পারতাম না।’ কোয়ান্টামের পাশাপাশি ছেলেকে দেশের বাইরের প্রতিযোতিায় পাঠানোর উদ্যোগ নেয়ায় জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।