শিরোনাম
রটারডাম, ১৫ জুন (বাসস/এএফপি) : অতিরিক্ত সময়ের দুই গোলে নাটকীয় সেমিফাইনালে স্বাগতিক নেদারল্যান্ডকে ৪-২ ব্যবধানে পরাজিত করে নেশন্স লিগের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ক্রোয়েশিয়া। ম্যাচের নির্ধারিত সময়ে ফলাফল ২-২ গোলে সমতায় থাকায় ফলাফল নিষ্পত্তির জন্য অতিরিক্ত সময়ে প্রয়োজন হয়। ব্রুনো পেটকোভিচ ও অভিজ্ঞ লুকা মড্রিচের দুই গোলে ক্রোয়েটদের জয় নিশ্চিত হয়।
গত বছর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালিস্ট জøাটকো ডালিচের ক্রোয়েশিয়া ইতিহাসে প্রথমবারের মত কোন শিরোপা জয়ের পথে আরো একধাপ এগিয় গেল। একইসাথে তারা আরো একবার প্রমান করলো অতিরিক্ত সময়ের মানসিক ও শারিরীক লড়াইয়ে তারাই সেরা।
ম্যাচের ৩৪ মিনিটে ডনিয়েল মালেনের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল স্বাগতিক নেদারল্যান্ড। আন্দ্রেজ ক্রামারিচ ও মারিও পাসালিচের দ্বিতীয়ার্ধের দুই গোলে এগিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। স্টপেজ টাইমের ষষ্ঠ মিনিটে নোয়া ল্যাং নেদারল্যান্ডকে লড়াইয়ে ফিরিয়েছিলেন। অতিরিক্ত সময়ে আট মিনিটে ফ্রেংকি ডি জংয়ের এ্যাসিস্টে পেটকোভিচ আবারো ক্রোয়েশিয়াকে এগিয়ে দেন। পেনাল্টি থেকে ১১৬ মিনিটে দলের জন্য জয়সূচক গোলটি করেন মড্রিচ।
নেশন্স লিগের মাধ্যমে ক্রোয়েশিয়া ও রিয়াল মাদ্রিদের অভিজ্ঞ মড্রিচের সামনে শেষ সুযোগ আন্তর্জাতিক কোন শিরোপার স্বাদ নেবার।
কাল ম্যাচ শেষে ক্রোয়েট কোচ ডালিচ স্থানীয় টেলিভিশন নোভা টিভিকে বলেছেন, ‘এই জয়টা ক্রোয়েশিয়ার জনগণের জন্য। আমরা নেদারল্যান্ডকে তাদের সমর্থকদের সামনে পরাজিত করেছি। ক্রোয়েশিয়া আরো একটি পদক জয় করলো, এটা সত্যিই অভাবনীয়। যোগ্যতার ভিত্তিতেই আমরা ফাইনালে খেলছি। আগের ব্যর্থতার কোন কিছুই এই দলটিকে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে দেয়না। সবাই জানে তারা ক্রোয়েশিয়ার জন্য খেলছে। ক্রোয়েশিয়ার জন্য সবকিছু করা যায়। এটা আমাদের অন্যতম বড় একটি জয়। স্বাগতিকদের ৪-২ গোলে হারানো মোটেই সহজ কাজ নয়। আমরা একসময় হেরে গিয়েছিলাম, ৯৬ মিনিটে গোল হজমের পর আবারো লড়াইয়ে ফিরে এসেছি। অবশ্যই এই জয় ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিবে।’
নিজেদের শেষ ১৬ ম্যাচে মাত্র একটিতে পরাজিত হয়েছে ক্রোয়েশিয়া। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে সর্বশেষ আর্জেন্টিনার কাছে পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছিল। ১৯৮৮ সালে ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপ বিজয়ী নেদারল্যান্ডকে এবার তারা হতাশ করেছে। রোনাল্ড কোম্যানের দল নেদারল্যান্ড ২০১৯ সালে পর্তুগালে অনুষ্ঠিত নেশন্স লিগের প্রথম আসরে রানার্স-আপ হয়েছিল। ২০২১ সালে নেশন্স লিগ জয় করে ফ্রান্স। এই দুই দলের কোনটিই এবার ফাইনাল ফোরে জায়গা পায়নি।
নেদারল্যান্ডের অধিনায়ক ভার্জিল ফন ডিক স্থানীয় সম্প্রচার কেন্দ্র এনওএস’এ বলেছেন, ‘আমরা সিংহের মত লড়াই করেছি। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত: আজকের দিনটা আমাদের ছিলনা। এটা সত্যিই খুব হতাশার। আমরা জানতাম ম্যাচটা কঠিন হবে। কিন্তু লড়াইয়ে মানসিকতা নিয়ে মাঠে নেমেছিলাম। প্রতিপক্ষকে দুটি পেনাল্টি উপহার দিয়েছি। এই জায়গায় আমাদের উন্নতি করতে হবে। এই মুহূর্তে কথা বলাটা কঠিন।’
আক্রমনভাগে ডান দিকে মালেনকে নামিয়েছিলেন কোম্যান। বামদিকে ছিলেন তরুণ জাভি সাইমন্স। এনিয়ে নেদারল্যান্ডের হয়ে চতুর্থ ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন সাইমন্স। এই দুজনই প্রথম গোলের কারিগর ছিলেন। লিভারপুল ফরোয়ার্ড কোডি গাকপোও তাদের সহযোগিতা করেছেন।
লম্বা মৌসুম কাটিয়ে উভয় দলের খেলোয়াড়রাই বেশ পরিশ্রান্ত ছিলেন। তার উপর মৌসুমের মাঝামাঝিতে খেলতে হয়েছে বিশ্বকাপ। ৩৪ মিনিটে ম্যাটস উয়েফারের পাসে মালেন ঠান্ডা মাথায় ক্রোয়েশিয়ান গোলরক্ষক ডোমিনিক লিভাকোভিচকে পরাস্ত করলে এগিয়ে যায় নেদারল্যান্ড।
দ্বিতীয়ার্ধে আরো শক্তিশালী হয়ে মাঠে নামে ক্রোয়েশিয়া। বাম দিক থেকে ডি বক্সে ঢুকে ক্রামারিচ শট নিলেও তা পোস্টের পাশ দিয়ে বাইরে চলে যায়। ৩৭ বছর বয়সী মড্রিচ তার ১৬৫তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে মাঠে নেমেছিলেন। গাকপোর কাছ থেকে চতুরতার সাথে বল ছিনিয়ে নিয়ে মড্রিচ এগিয়ে যাবার সময় তাকে পিছন থেকে ধাক্কা দেন লিভারপুল ফরোয়ার্ড। প্রাপ্ত পেনাল্টি থেকে ৫৫ মিনিটে জাস্টিন বিলোকে পরাস্ত করে ম্যাচে সমতা ফেরান ক্রামারিচ। ৭৩ মিনিটে লুকা ইভানুসেচের ক্রসে আটালান্টা মিডফিল্ডার পাসালিচ পোস্টের খুব কাছে থেকে গোল করে ক্রোয়েশিয়াকে এগিয়ে দেন। ডাচ ডিফেন্ডার ন্যাথান এ্যাকে অল্পের জন্য সমতা ফেরাতে ব্যর্থ হন। মাত্র পাঁচদিন আগে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে শিরোপা জয় করেছেন এ্যাকে।
শেষ দুই বিশ্বকাপে অতিরিক্ত সময়ের ম্যাচে ব্রাজিল, জাপান, ইংল্যান্ড, রাশিয়া ও ডেনমার্ককে পরাজিত করেছে ক্রোয়েশিয়া। ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে ল্যাং গোল করে নেদারল্যান্ডকে রক্ষা করেন।
কিন্তু নেদারল্যান্ডের এই আনন্দ খুব বেশীক্ষন স্থায়ী হয়নি। পেটকোভিচের গোলে ক্রোয়েশিয়া আবারো এগিয়ে গেলে তাদের জয়টা সময়ের ব্যপার হয়ে দাঁড়ায়। বদলী খেলোয়াড় টাইরেল মালাসিয়ার বিপক্ষে পেটকোভিচ পেনাল্টি আদায় করে নেন। স্পট কিক থেকে মড্রিচ দলের জয় নিশ্চিত করেন।
১৯৯৮ ও ২০২২ সালে বিশ্বকাপে তৃতীয় ও ২০১৮ সালে রানার্স-আপ ক্রোয়েশিয়া এখন শিরোপা জয়ের নেশায় মুখিয়ে আছে। ডালিচ বলেছেন, আমরা তা¤্র ও রৌপ্য পদক নিশ্চিত করেছি, কিন্তু এখন লক্ষ্য স্বর্ণ।’