শিরোনাম
ঢাকা, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস): বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর শনির আখড়া এলাকায় নিজ বাসার সামনে গত ২০ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মোবাইল মেকানিক সোহেল মিয়া (৩৫)।
তিনি ময়মনসিংহের ত্রিশালের মঠবাড়ী ইউনিয়নের অলহরী দুর্গাপুর গ্রামের সুরুজ মিয়া ও হাসনা আরা দম্পতির ছেলে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে বড় ছিলেন সোহেল মিয়া। ২২ জুলাই ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার অলহরী দুর্গাপুর গ্রামে সোহেল মিয়াকে দাফন করা হয়।
স্ত্রী আয়শা আক্তার ও সাড়ে তিন বছরের ছেলে হযরতকে নিয়ে ঢাকার শনির আখড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন সোহেল মিয়া। ওই এলাকায় আরএস টাওয়ার মার্কেটে সোহেল টেলিকম নামে একটি দোকান ছিল তার। মুঠোফোনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বিক্রি ও মেরামতের কাজ করতেন সোহেল। ছোট ভাই জুয়েল মিয়াও তার দোকানে কাজ করতেন। সোহেল মিয়ার নিহতের পর পরিবারের সবাই বাকরুদ্ধ। আগামী দিনগুলোতে পরিবার কিভাবে চলবে এ নিয়ে দিশেহারা। বৃদ্ধ মা-বাবা ও ছোট ভাইয়ের সংসারে সব সময় সহায়তা করতেন সোহেল মিয়া।
নিহত সোহেলের ছোট ভাই জুয়েল মিয়া বলেন, শনির আখড়া এলাকায় বাসার সামনেই গুলিবিদ্ধ হয় ভাই। ঘটনার দিন বেলা ১১টার দিকে ভাই আমাদের বাসায় আসেন। তখন ভাই জানান তার দোকানটি যে মার্কেটে সেটি বন্ধ। বৃদ্ধ বাবা-মার জন্য কাঁঠাল, আম নিয়ে এসেছিলেন। পরে সামনের দোকান থেকে এক বস্তা চাল কিনে দিয়ে যান। জুয়েল মিয়া বাবা-মাসহ শনির আখড়া এলাকায় থাকেন।
ভাই বলেছেন, দেশের অবস্থা ভালো না। ওইদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বাসা থেকে চলে যান। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ভাই বাসার নিচে নেমে পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন। পরে আমরা খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে লাশ পাই। একটি গুলিতে আমাদের পুরো পরিবার তছনছ হয়ে গেছে।
জুয়েল মিয়া বলেন, ভাইয়ের উপার্জনের টাকায় আমি ও দুই বোন বড় হয়েছি। বাবা বৃদ্ধ ও অসুস্থ তেমন কিছু করতেন না। ভাই পুরো পরিবার চালাতেন। আমিও ভাইয়ের দোকানে কাজ করতাম। এখন কোনো উপায় না পেয়ে রিকশা চালানো শুরু করেছি। দোকানের মালামাল বিক্রি করে সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে গেছেন ভাবি। সরকার বা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এখনো কেউ তাদের পরিবারের খোজ নেয়নি।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবী জানিয়ে আন্দোলন করে আসছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে যৌক্তিকভাবে সমাধানের পথে না গিয়ে বিগত আওয়ামী সরকারের সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনে লেলিয়ে দেয়া হয়। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিগত সরকারের নির্দেশে কঠোর অবস্থানে থেকে শিক্ষার্থীদের উপরে চড়াও হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হন। ওইদিন দেশব্যাপী ছয় জনের মৃত্যু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সহ সারা বাংলাদেশের ছাত্র জনতা ফুসে ওঠে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন এক দফায় রূপ নেয়। আন্দোলনকে দমন ও নির্মূল করতে গিয়ে তৎকালীন আওয়ামী সমর্থিত ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সহস্রাধিক মানুষ নির্মমভাবে গুলিতে নিহত হন। আন্দোলনে বিক্ষুব্ধ জনতার রোষানলে পড়ে বেশকিছু পুলিশও মারা যান। এ আন্দোলনে কয়েক হাজার মানুষ গুলিতে মারাত্মক আহত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, গণতন্ত্রকামী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ও সাধারণ মানুষের লাল বিপ্লবে বাংলা বসন্তের ফলে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বিগত সংসদ ভেঙে দেয়া হয়। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিদায়ী সরকারের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, অপশাসন হত্যা গনহত্যা গুমের সাথে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন।