শিরোনাম
॥ মোঃ মঞ্জুর মোর্শেদ ॥
মুন্সীগঞ্জ, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ (বাসস) : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদ মানিক মিয়ার বাবা আনিসুর রহমান চৌধুরীর একটিই সান্তনা, তার পুত্র মানিক মিয়া শাহারিক চৌধুরী দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। তার সেই আত্মবলিদান তখনই সার্থক হবে যখন বাংলাদেশে একটি বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।
পুত্রশোকে মুহ্যমান আনিসুর রহমান চৌধুরী বাসসকে বলেন, ‘বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার আন্দোলনে আমার সন্তান শহিদ হয়েছে। বর্তমান সরকারের কাছে একটাই আবেদন, দেশে বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা কায়েম হোক। তাহলেই আমার সন্তানের আত্মদান সার্থক হবে। সন্তানকে হারিয়ে মরণেও শান্তি পাব।’
জেলার সদর উপজেলার মীরকাদিম পৌরসভার রামগোপালপুর গ্রামের আনিসুর রহমান চৌধুরীর বড় পুত্র শহিদ মানিক (২৯)। তিনি মীরকাদিম পৌরসভার ছাত্রদলের সদস্য সচিব ছিলেন। সরকারি হরগঙ্গা কলেজ থেকে বিবিএ পাশ করে নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজে এমবিএতে ভর্তি হন। নারায়ণগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি এতে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।
মানিক মিয়া শাহারিক চৌধুরী ৪ আগস্ট তার ছোট ভাই মুক্তা মিয়া আহম্মেদকে সাথে নিয়ে মুন্সীগঞ্জে ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় নেতৃত্ব দেন। এদিন আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে শহিদ হন তিনজন এবং আহত হন শতাধিক ছাত্র-জনতা। এদিন মানিকও আহত হন। মানিকের ছোট ভাই মুক্তা মিয়া রাতেই মুন্সীগঞ্জ থেকে রামগোপালপুরে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। মুন্সীগঞ্জে আন্দোলনে সামান্য আহত হলেও মানিক মিয়া পরদিন ঢাকার আন্দোলনে যোগ দিতে ঐ দিন রাতেই নারায়ণগঞ্জে চলে যান। গত ৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ তুলারাম কলেজের ছাত্রসহ কয়েক হাজার ছাত্র-জনতার মিছিল চানখারপুল এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করে। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে যান মানিক। সহযোদ্ধারা মারাতœক আহত অবস্থায় মানিককে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়।
আনিসুর রহমান চৌধুরী বাসসকে বলেন, অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে জানায় মানিক হাসপাতালে আছে। ফোন পেয়ে দিশেহারা হয়ে ঢাকার আতœীয় স্বজনদের খবর দেই। সেখানে পৌঁছে তারা জানতে পারে মানিক মারা গেছে। পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ঢাকা মেডিকেল থেকে আমার ছেলের লাশ নিয়ে যেতে চেয়েছিল। আত্নীয়স্বজনের বাধার মুখে তা আর পারেনি।
চোখ মুছতে মুছতে মানিকের পিতা বাসসকে বলেন , ছোট সময়ে দুই ছেলে আর এক মেয়েকে রেখে ওদের মা মারা যায়। মা হারা সন্তানদের মায়ের স্নেহে অনেক কষ্ট করে লালন পালন করেছি। আমার যৎসামান্য আয়ে সংসারে টানাটানি লেগেই থাকতো। অভাবের সংসারে সুখ আনতে মানিক লেখাপড়ার পাশাপাশি গত বছর যমুনা ব্যাংকে চাকরি নেয়। তার উপার্জনেই তিন ভাই বোনের লেখাপড়া এবং সংসারের খরচ চলতো। মানিকের মৃত্যুতে পরিবারের মূল রোজগারের পথও বন্ধ হয়ে গেছে।
একদিকে সন্তান হারানোর বেদনা, অন্যদিকে অভাবে দিশেহারা আনিসুর রহমান। মানিকের অনুপস্থিতিতে কি করে চলবে সংসার। দুই ছেলে মেয়ের পড়ালেখাই বা চলবে কিভাবে। এ অবস্থায় তিনি ছোট ছেলের একটা চাকুরি দিয়ে সহায়তার করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
এলাকাবাসী জানান, মানিক মেধাবী ছাত্র ছিল। কোন অনিয়মের সাথে জড়িত ছিল না। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান না হয়েও তিনি রাজনীতি সচেতন ছিলেন। তার কথা দেশবাসী চিরকাল মনে রাখবে।