শিরোনাম
॥ইসমাঈল আহসান॥
উত্তরা (ঢাকা), ২০ অক্টোবর, ২০২৪ (বাসস) : মোহাম্মদ দলিল উদ্দিন। বায়িং হাউজের ছোট ব্যবসা করেন। গত ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হওয়ার আনন্দে ছিলেন আত্মহারা। কিন্তু তার এ আনন্দ মুহূর্তেই ফিকে হয়ে যায় পুলিশের গুলিতে। উত্তরার এপিবিএন হেডকোয়ার্টারের সামনে বিকাল ৪টার দিকে যখন তারা বিজয় মিছিল করছিলেন, ওই সময়ে কোনো রকম উস্কানি ছাড়াই এপিবিএন এর ভেতর থেকে সাধারণ জনতার ওপর গুলি ছোঁড়া হয়। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই এই গুলি দলিল উদ্দিন এর ডান কানের নিচ দিয়ে ঢুকে মুখের ভিতরের প্রায় সবগুলো দাঁত ভেঙে দিয়ে বাম পাশে গিয়ে থেমে যায়। গুলিটা না থেমে যদি তার মাথা দিয়ে বের হয়ে যেত, তাহলে হয়তো তাঁকে আর বাঁচানো যেতো না। শহিদ হতেন তিনি। বলা যায় অলৌকিকভাবে তিনি বেঁচে গেছেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় আশপাশের লোকজন তার বন্ধু মো. আলী তারিককে ফোন দিয়ে তার পরিস্থিতি তুলে ধরেন। পরে তারা দ্রুত স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গুলি বের করার পর কুর্মিটোলা হাসপাতালে গেলে তারা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। পরে ঢাকা মেডিকেল থেকে ওই রাতেই পঙ্গু হাসপাতালে তাকে রেফার করা হয়। কিন্তু তখন রাস্তায় কোন যানবাহন নেই, চারিদিকে থমথমে অবস্থা, এর মধ্যে এরকম একজন মুমূর্ষু রোগীকে নিয়ে তারা প্রায় পাঁচ থেকে ছয়টি হাসপাতাল ঘুরে শেষ পর্যন্ত মিরপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাকে ভর্তি করেন।
কিন্তু চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে ব্যর্থ তার পরিবার শেষ পর্যন্ত তাকে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা থানার দশমিপাড়ার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেই গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক নূর উদ্দিন ও সুফিয়া খাতুনের মেজো ছেলে দলিল উদ্দিন(৩৫)। তিন ভাই ও তিন বোনের সংসারে মেজ ছেলে নিঃসন্তান দলিল এই দুই মাস গ্রামের বাড়িতে প্রায় বিনা চিকিৎসায় থেকে গত সপ্তাহে দক্ষিণখানের বাসায় ফিরে আসেন। কিন্তু টাকার অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারছেন না। চুয়াডাঙ্গা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে মাত্র হাজার দশেক টাকা তিনি পেয়েছেন। এর বাইরে কোন সহযোগিতা কারো কাছ থেকে তিনি পাননি। চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় প্রশাসন তাকে আশ্বাস দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে।
এখন পর্যন্ত কোন সহযোগিতা না পাওয়ায় দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার স্ত্রী সিনথিয়া আরমিন(৩২)। তিনি খুব কাতর কণ্ঠে বাসসকে বলেন, সমাজের মানুষের অথবা রাষ্ট্রের সহযোগিতা ছাড়া এত ব্যয়বহুল চিকিৎসা প্রায় অসম্ভব। ইতোমধ্যে তার চিকিৎসা করাতে গিয়ে সঞ্চয় শেষ এবং ধার-দেনা করে তারা এখন নিঃস্ব প্রায়। এই মুহূর্তে তাদের সংসার চালানো দায় হয়ে গেছে। যে মানুষটির প্রতি মাসের আয় দিয়ে কোন মতে সংসার চলতো, এখন সকল আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়াতে তিনি কি সংসার চালাবেন, নাকি চিকিৎসার ব্যয় মেটাবেন এ আকুল প্রশ্ন সিনথিয়ার।
সিনথিয়া জানান, সেই ৫ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত তিনি ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না, কিছু খেতে পারেন না। ব্লেন্ডিং করে নল দিয়ে তাকে তরল খাবার তাকে খাওয়ানো হচ্ছে। ডাক্তাররা বলেছেন, যে নার্ভের সাহায্যে আমরা খাবারের স্বাদ গ্রহণ করি তার একপাশ পুরো ছিঁড়ে গেছে এবং আরেক পাশের নার্ভও ক্ষতিগ্রস্ত। উন্নতমানের চিকিৎসা না হলে জীবনে কোনদিন তিনি খাবারের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন না।
দলিল উদ্দিন না খেতে পারছেন, না কথা বলতে পারছেন। অসহ্য এক যন্ত্রণাময় সময় তিনি যেমন পার করছেন তেমনি পার করছে তার পরিবার। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দরকার তাদের পাশে দাঁড়ানো।
সমাজের বিত্তবান বা দেশপ্রেমিক জনগণ অথবা রাষ্ট্র, আমরা কেউ কি পারি না এ অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে? অন্ততঃ তার উন্নত চিকিৎসা করে তাকে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে?