বাসস
  ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:০১

চতুর্থ প্রজন্মের প্রায় সব ব্যাংক রাজনৈতিক বিবেচনায় লাইসেন্স পেয়েছে : বিআইবিএম গবেষণা

ঢাকা, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : বাংলাদেশে চতুর্থ প্রজন্মের প্রায় সব ব্যাংক রাজনৈতিক বিবেচনায় লাইসেন্স পেয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) পরিচালিত এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে- এই ব্যাংকগুলোর মধ্যে কয়েকটি কর্মক্ষমতা দেখাতে পারলেও অধিকাংশ ব্যাংক তারল্য সংকট, উচ্চ নন-পারফর্মিং লোন(এনপিএল), ব্র্যান্ডিং সমস্যা এবং নিয়ন্ত্রক বিধিনিষেধ এবং জরিমানা সহ গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে ।

গতকাল বুধবার বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে ‘বাংলাদেশে চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক স্থায়িত্ব: একটি সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক গবেষণাটি উপস্থাপন করা হয়। সেখানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

বিআইবিএম-এর সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, গবেষণা দলের পক্ষে ফলাফল উপস্থাপন করেন, যার মধ্যে ছিলেন বিআইবিএম-এর সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ শহীদ উল্লাহ; বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম সরকার এবং মুদ্রানীতি বিভাগের পরিচালক মাহমুদ সালাহউদ্দিন নাসের।

বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার।

ডেপুটি গভর্নর চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর টেকসই উন্নয়নে প্রশাসনিক কাঠামো শক্তিশালীকরণ এবং নিয়ন্ত্রক তদারকি বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়ার কথা বলেন।

তিনি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, তারল্য সংকট এবং ক্রমবর্ধমান এনপিএল সহ পদ্ধতিগত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার আহ্বান জানান।
গবেষণায় বলা হয়-লাইসেন্সিংয়ে রাজনৈতিক প্রভাব চতুর্থ প্রজন্মের অনেক ব্যাংকের পরিচালনা কাঠামোকে দুর্বল করে দিয়েছে, যা তাদের অদক্ষতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। দুর্বল কর্পোরেট শাসন, অনৈতিক অনুশীলন এবং লেনদেনে স্বচ্ছতার অভাব ক্রেডিট অব্যবস্থাপনা এবং এনপিএল বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করেছে।

আরও উল্লেখ করেছে যে, অনিয়ন্ত্রিত আমানতের হারের সাথে মিলিত আক্রমনাত্মক ঋণ প্রথা প্রতিযোগিতামূলক বাজার কাঠামোকে বিকৃত করেছে।

গবেষণায় উচ্চতর অগ্রিম আমানত অনুপাত এবং ক্রমবর্ধমান (এনপিল) এর মধ্যে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক স্থাপন করেছে, যাতে দেখা যায়, আক্রমনাত্মক ঋণ প্রায়শই ক্রেডিট গুণমান এবং আর্থিক স্থিতিশীলতার সাথে স্বমন্বয় করে।

গবেষণাটি এই ব্যাংকগুলোর স্থিতিশীলতার দূর্বলতার পেছনে বেশ কিছু কারণ তুলে ধরেছে; যেমন-সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ,আইনের দুর্বল প্রয়োগ এবং নিয়ন্ত্রক তদারকি, রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত খেলাপিদের দ্বারা শোষিত আইনি ফাঁক-ফোকর, ব্যাংক ব্যবস্থাপনা এবং বোর্ডগুলোর একটি স্বল্পমেয়াদী কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি।

গবেষণাপত্রটিতে আরও বলা হয়েছে- গবেষণায় অংশ নেয়া ৬৪ শতাংশ উত্তরদাতা সুশাসনের অভাবকে প্রাতিষ্ঠানিক টেকসইয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাধা হিসাবে চিহ্নিত করেছে।

প্রায় ৬০ শতাংশ উত্তরদাতা দৃঢ়ভাবে উন্নত আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং নিয়ন্ত্রক পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত। সমীক্ষায় বলা হয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ উত্তরদাতাও বিশ্বাস করেন যে বাংলাদেশে অনেক বেশি ব্যাংক রয়েছে এবং নতুন লাইসেন্সগুলো অপ্রয়োজনীয়।

গবেষণায় আরও উঠে এসেছে- অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ী আইন প্রণেতাদের দ্বারা প্রণীত আইনে ইচ্ছাকৃত ত্রুটি রয়েছে যাতে তারা অযথা ব্যাংকের বোর্ড এবং ব্যবস্থাপনাকে প্রভাবিত করতে পারে এবং খেলাপিদের বিরুদ্ধে কোনও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।

বাংলাদেশে ৬১ টি তফসিলি ব্যাংক (৬টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৩টি বিশেষায়িত ব্যাংক, ৪৩ টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক (৩৩টি প্রচলিত এবং ১০টি ইসলামী ব্যাংক) এবং ৯টি বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংক) রয়েছে।