বন্যা থেকে মুক্তি পেতে কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘গুচ্ছ বসতভিটা’
শফিকুল ইসলাম বেবু
কুড়িগ্রাম, ৮ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): বন্যা প্রবণ নদ-নদী বিধৌত চরাঞ্চলে টিকে থাকার লড়াইয়ে নতুন করে আশার আলো জাগিয়েছে ‘গুচ্ছ বসতভিটা’। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর তীরবর্তী বন্যা মোকাবেলায় চরবাসীর এক যৌথ উদ্যোগে গড়ে উঠছে এসব উঁচু বসতভিটা। প্রতিটি বসতভিটায় ৫ থেকে ১০টি পরিবার একসঙ্গে বসবাস করে, যা বন্যার সময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
এভাবে গড়ে ওঠা বসতভিটাগুলোর উচ্চতা সাধারণত সমতল থেকে ৮-১০ ফুট উঁচু। ১৫ থেকে ২৫ শতক জমিজুড়ে নির্মিত একটি গুচ্ছ বসতভিটা নির্মাণে খরচ পড়ে প্রায় ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।
কুড়িগ্রাম চরের সংখ্যা প্রায় ৪৬৯টি, এসব চরের অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে গুচ্ছ বসতভিটার এই মডেল।
জেলার চিলমারী উপজেলার চর মনতলার দিনমজুর মিজানুর রহমান (৫৫) জানান, ‘গত বছর আমরা ১০টি পরিবার মিলে ২৫ শতক জমিতে গুচ্ছ বসতভিটা তৈরি করি। এতে খরচ হয়েছিল ৬০ হাজার টাকা। বন্যার সময় যখন চারপাশ ডুবে যায়, তখন আমাদের ভিটা নিরাপদ থাকে। আশেপাশের অনেক পরিবারও এসে আশ্রয় নেয়।’
তিস্তা নদীর দ্বীপ চর উলিপুর উপজেলার বজরা এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম (৬৫) বলেন, ‘আমরা পাঁচটি পরিবার মিলে ৩ বছর ধরে একটি গুচ্ছ বসতভিটায় বসবাস করছি। গাছপালা লাগিয়ে বসতভিটাটিকে আরও বাসযোগ্য করেছি। বন্যা ও ভাঙনের সময় একসঙ্গে থাকার কারণে সুরক্ষা ও সহমর্মিতাও বাড়ে।’
ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গোড়কমণ্ডলের সেকেন্দার আলী (৭০) জানান, ‘আগে প্রতিবছর বন্যায় বাড়িঘর ডুবে যেত। আশ্রয় নিতে হতো স্কুল বা রাস্তার ধারে। এখন ৮টি পরিবার মিলে তৈরি করা গুচ্ছ বসতভিটা আমাদের নিরাপদ করেছে। এটি ১০ ফুট উঁচু হওয়ায় পানিতে ডোবে না।’
একই চরের দিনমজুর চাঁন মিয়া (৫৬) বলেন, ‘টাকার অভাবে একা বসতভিটা উঁচু করতে পারিনি। বন্যায় প্রতি বছর কষ্ট পেতে হয়। এবার কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলছি—একসঙ্গে গুচ্ছ বসতভিটা তৈরি করব।’
কুড়িগ্রাম চর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, ‘গুচ্ছ বসতভিটা চরের মানুষের জন্য কার্যকর হলেও অধিকাংশ পরিবার অর্থাভাবে এটি তৈরি করতে পারে না। সরকারি সহায়তা খুবই সীমিত। বন্যা এলেই বোঝা যায় এর প্রয়োজনীয়তা কতটা। তাই সব চরবাসীর জন্য সরকারি সহায়তায় গুচ্ছ বসতভিটা নির্মাণ নিশ্চিত করতে হবে।’ এছাড়া আমরা পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতো চর বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দাবি নিয়ে চরের মানুষের সঙ্গে সংলাপ অব্যাহত রেখেছি। আশা করছি সরকার আমাদের চর বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দাবি দ্রুত মেনে নিবে।
জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন, ‘আমি ১০ মাস ধরে জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছি। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা দুধকুমার সহ ১৬ নদ- নদীর চর ও দ্বীপ চরে প্রায় ৬লাখ মানুষ বাস করে। চরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসাসহ নানান সমস্যা রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারকে জানিয়েছি। তবে চরের জীবন মান উন্নয়নে জেলা প্রশাসন কাজ করছে।