শিরোনাম
॥ রুস্তম আলী মন্ডল ॥
দিনাজপুর, ১৮ মে, ২০২৪ (বাসস): জেলার লোকজন ও নতুন প্রজন্ম আগ্রহ নিয়ে এ শহরে দিনাজপুর রাজবাড়ী দেখতে যায়। রাজবাড়ী যাওয়ার পর হতাশ হয়ে ফিরেন। এক মন্দির ছাড়া কিছুই গোছালো নেই এ রাজবাড়ীটিতে। ভেঙ্গে পড়েছে দরবার হল কিংবা আয়না ঘর বা রাজবাড়ির অন্যান্য কক্ষগুলো। পুকুর পাড়ে ছোট একটি বাসা অক্ষত থাকলেও তাও আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। রাজবাড়ীর মধ্যে বসে চলে দুষ্টু ও মাদকাসক্ত ছেলেদের আড্ডা।
দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোঃ রুহুল আমিন বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা জীবনে তার নিজ জন্মভূমি দিনাজপুরের ঐতিহাসিক রাজবাড়ী নিয়ে অনেক লেখালেখি করেছেন, যা দেশের অনেক প্রিন্ট মিডিয়া প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তিনি দেশের বাইরে বা দেশের ভিতরে কোন সেমিনারে অংশগ্রহণ করলে দিনাজপুরে ঐতিহাসিক রাজবাড়ীর ইতিহাস তুলে ধরে বেশ কিছু বক্তব্য দিয়েছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, রাজবাড়ীটি সরকারিভাবে যাতে সংরক্ষণ করে পর্যটকদের নজরে নিয়ে আসা যায়।
তিনি আরো বলেন, এ রাজবাড়ীরটি সংরক্ষণ করে পর্যটনের আওতায় নিয়ে আসা হলে প্রতিদিন পর্যটকরা এখানে ভিড় করবে। এ খাত থেকে আয় হত সরকারি বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ এ ব্যাপরে নজর দেয়নি। ফলে রাজবাড়ীর সম্পদ বে-দখল হয়ে এখন রাজবাড়ী অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। রাজবাড়ীতে পাকা ভবন নির্মাণ করে দখল করে নেওয়া হচ্ছে।
দিনাজপুর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক রতন সিং বলেন রাজবাড়ীর রক্ষার দায়িত্বে যারা রয়েছেন তাদের উদাসীনতার কারণে রাজবাড়ীর সম্পদ একের পর এক দখল হয়ে যাচ্ছে। ফলে বিলীন হয়ে যাচ্ছে এ ঐতিহাসিক রাজবাড়ীটি।
তিনি আরো বলেন, এ রাজবাড়ীর অস্তিত্ব রক্ষায় নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। এদের সহযোগিতায় রাজবাড়ীর জবর দখল কারীদের বিতাড়িত করতে হবে। নইলে এ ঐতিহাসিক নিদর্শন বিলীন হয়ে গেলে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দর্শন হিসেবে দেখার কিছুই থাকবে না। তিনি এব্যাপারে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
চাইলেই এক রাজবাড়ী দিয়েই দিনাজপুরের এত দিনের ইতিহাস তুলে ধরা যেত। কিন্তু আজ দিনাজপুরের পরিচিত ধান-লিচু,কয়লা কিংবা পাথরের একটি জেলা হিসেবে।
ঠিকমতো সংস্কার করা হলে রাজবাড়ীই হতো পর্যটন কেন্দ্র। নতুন প্রজন্মকে পাঠ্য বইয়ের কোন এক লাইনে দিনাজপুর এক সময় প্রাচীন রাজ্য পুন্ড্রবর্ধনের একটি অংশ ছিল বললে যতটুকু বোঝানো যেত, তারচেয়েও বেশি বোঝানো যেত, রাজবাড়ীতে জাদুঘর স্থাপন কিংবা সেখানে এর ইতিহাস তুলে ধরে।
গুপ্ত ও পালযুগের বিভিন্ন নিদর্শন বলে দেয় দিনাজপুরের ইতিহাস। রাজবাড়ির মহারাজার গড়া দিনাজপুরে ৫টি সাগর, এর মধ্য রয়েছে, রামসাগর, মাতা সাগর, আনন্দ সাগর, সুখ সাগর ও জুলুম সাগর। রামসাগরের সারাদেশের মধ্যে ঐতিহাসিক জলভাগ ও নান্দনিক জলাশয় হিসেবে পরিচিতি রয়েছে,।
এ মহারাজার গড়া উপমহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন দিনাজপুর কাহারোল উপজেলার কান্তনগর কান্তজি মন্দির ও একই সাথে নয়াবাদ মসজিদ। এ কান্দজি মন্দিরের শতাধিক একর জমি এখন ভূমি দস্যুদের কবলে পড়ে বিলুপ্তির পথে।
এবার আসি দিনাজপুর মহারাজের সিংহাসন নিয়ে। সিংহাসনটি বর্তমানে জাতীয় জাদুঘরে রয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে সিংহাসনটি হাতির দাঁত দিয়ে তৈরি। দিনাজপুর থেকে সেই সাড়ে ৪০০ কিলোমিটার দূরে রাজধানীতে এসে জানতে হচ্ছে দিনাজপুর রাজবাড়ীর সিংহাসন এখনো অক্ষত রয়েছে। সাথে আরো কিছু নিদর্শন রয়েছে এখানো ঢাকার এ জাতীয় জাদুঘরে।
দিনাজপুর সদর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ লোকমান হাকিম জানান, আমি সম্প্রতি ঢাকায় জাতীয় জাদুঘর গিয়েছিলাম। সেখানে, এসব দেখে কিছুটা খারাপ লেগেছে, আমি না হয় রাজধানীতে এসে এসব কিছু দেখতে পাচ্ছি। নতুন প্রজন্ম এসব দেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বঞ্চিত হচ্ছে ইতিহাস জানা থাকে। নিশ্চয়ই একদিন প্রতিটি জেলায় এমন কিছু গড়ে উঠবে যেখানে ওই জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য আভিজাত্য তুলে ধরা হবে। নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে তার ইতিহাস কি ছিল।
কিন্তু আমার জেলা দিনাজপুরের রাজবাড়ীর ইতিহাস বিলীনের পথে। এ ইতিহাস রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।