বাসস
  ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৯
আপডেট  : ০৮ জুলাই ২০২৪, ১০:১২

দিনাজপুরে মুন্সি পাড়ায় হেমায়েত আলী পাঠাগার ও মিউজিয়াম কালের সাথী হয়ে রয়েছে

দিনাজপুর, ৮ জুলাই, ২০২৪ (বাসস): জেলা শহরে মুন্সিপাড়ায় ঐতিহ্যবাহী হেমায়েত আলী পাঠাগার ও মিউজিয়াম অনেক ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত বই সংরক্ষণে এ প্রতিষ্ঠানটি এখনো চালু রয়েছে।
গতকাল রোববার রাতে সরেজমিন দিনাজপুর শহরে মুন্সিপাড়া ঐতিহ্যবাহী হেমায়েত আলী পাঠাগার ও মিউজিয়াম গিয়ে দেখা যায় এখনো পরিপাটি, সাজানো গোছানো অবস্থায় রয়েছে।
ওই পাঠাগারে গিয়ে দেখা হয়,  দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোঃ রুহুল আমিনের সাথে। মনোযোগ দিয়ে দিনাজপুর ইতিহাস সম্মিলিত ঐতিহাসিক মেহেরাব আলীর দিনাজপুরের ইতিহাস লেখা বইটি পাঠ করছেন। তিনি বলেন, দিনাজপুর জেলার বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বেশ কিছু স্থান নির্ধারণ করতে ভুল হচ্ছে কিনা? এ বিষয়টি সংশোধন করতে ঐতিহাসিক বইটি পাঠাগারে খুঁজে বের করে সংশোধন করার তথ্য পাঠ করছি। তবে বিলুপ্তি হয়ে যাওয়া জেলার স্থান গুলোর সঠিক নির্ধারণ পেয়ে গেছি বলে তিনি ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মে শিক্ষার্থীরা এখন বই পড়া বাদ দিয়ে অত্যাধুনিক অ্যান্ডয়েড ফোন নিয়ে ঝুঁকে পড়েছে। তাদের বই পড়া তো দূরের কথা খেলাধুলা পর্যন্ত ভুলে গেছেন। মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে আকাশ সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতি তাদের ভিতরে এমন ভাবে প্রবেশ করেছে। তারা আর ওই স্থান থেকে বের হচ্ছে না। তাদেরকে কোন উপদেশ দিলে মানছে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এই অবক্ষয় উত্তরণের জন্য তিনি একটি লেখার মাধ্যমে প্রচার করতে চান।
তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা আড্ডা দিতে চাইলে এ হেমায়েত আলী পাঠাগারে আড্ডা দিতে পারেন। সাথে পাঠাগারের  চারপাশে হাজার হাজার বইয়ের মাঝে আড্ডা দিতে যদি কখনো একটা বইয়ের দুটো পৃষ্ঠা পড়া হয়, তাহলে তাদের লাভ আছে, ক্ষতি নেই। তিনি সবাইকে বলছেন, আপনাদের সন্তানকে নিয়ে আসুন৷ পরিচয় করান এই ঐতিহ্যবাহী পাঠাগারের সাথে। , সন্তানদের অভ্যেস গড়ে তুলুন বই পড়তে ৷ ভারত বর্ষ তথা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া উপমহাদেশ কে এবং  কিভাবে, শাসন করেছে, এমন অনেক শিক্ষাই নিতে পারবেন এই পাঠাগারে সংরক্ষিত বই থেকে। নতুন প্রজন্ম না আসলে পাঠাগারে যাতাযাতের অভ্যাসেই গড়ে উঠবেনা। তারা ভুলে যাবে এ দেশ ও জেলার ইতিহাস। বিষয়টির সকল অভিভাবক কে সচেতন করতে এ ধরনের উপদেশ।
এটি দিনাজপুর জেলা শহরের হেমায়েত আলী পাঠাগারের মিউজিয়াম অংশ৷ দিনাজপুর মিউজিয়ামের উপর তলার এ লাইব্রেরিতে গিয়ে আমি হতবাক হয়েছি। শতবছর পুরোনো অনেক বই এখানে পড়ে আছে। কেবল গ্রন্থাগারিক ছাড়া হাতেগোনা কয়েকজন পাঠক রয়েছে। যারা প্রত্যেকেই অবসরপ্রাপ্ত জীবনে সঙ্গী। স্বাক্ষর বইতে দেখলাম, গড়ে ৫/৭ জন পাঠক  আসে প্রতিদিন এই পাঠাগারে বই পড়তে। জাদুঘরেও আসেন তেমনি দর্শক।
পাঠাগারে উপর একজন পাঠক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম তিনি বলেন,  এতো বড়ো একটা শহরে এই দৃশ্য, মানা যায়না। একটা শহরের মানুষ জন কতটা সমৃদ্ধ চিন্তাধারার, প্রজন্ম কতটা সুস্থভাবে বেড়ে উঠছে, তার একটা মাপকাঠি শহরে লাইব্রেরি কেমন চলে৷ সেই পরীক্ষায় আপাতত দিনাজপুর শহর বাসী অকৃতকার্য হয়েছে।
তিনি বলেন,আমি জন্মসূত্রে দিনাজপুর শহরের বাসিন্দা। কিন্তু  কর্মজীবনে দেশের বিভিন্ন কলেজে কর্মরত ছিলাম। গত জানুয়ারি মাসে অবসরে এসে মাসখানেক হলো দিনাজপুর শহরে আছি। আজ প্রথম এই লাইব্রেরীতে আসলাম। বিশাল এই লাইব্রেরিতে পেলাম আসল প্রিন্টের এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা, আবুল ফজলের 'আকবরনামা', রমেশচন্দ্র মজুমদারের ব্রিটিশ আমলের ইতিহাসগ্রন্থ, ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াত-ই-হাফিজসহ দুর্লভ অসংখ্য বই। এগুলো পড়ে আছে আপনার আহরণের অপেক্ষায়। হিমায়েত আলী পাঠাগারের সংরক্ষক বলেন,  এ পাঠাগার খোলা হয় প্রতিদিন  দুপুর সাড়ে  ৩ টায়, রাত ৮ টার  পর পর্যন্ত খোলা থাকে।
শুধু কি শখের বই? কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সব ধরণের বই এখানে আছে। সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান,অর্থনীতি,পদার্থবিদ্যা, জীববিদ্যা,ব্যবসায় শিক্ষাসহ সকল প্রকার একাডেমিক বই এখানে আছে। যদি কেউ নোট করতে চান, এখানে বসেই করতে পারেন।
পাঠাগারে আগত পন্ডিত ব্যক্তির অভিমত, আবারও বলি, পড়তে হবে না। বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা দিতেই আসুন৷ তবু শহর বা বাড়ীর আশপাশের গ্রন্থাগার গুলোকে বাঁচিয়ে রাখুন।
এখানে এলে নিচতলায় মিউজিয়াম ঘুরতে ভুলবেন না৷ মাত্র ৫ টাকা টিকিটে এক অনন্য ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবেন।
পন্ডিত ব্যক্তিদের পরামর্শ, এতদিন যে ভুল করেছি, ব্যক্তি গত ভাবে নিতে হবে তা শোধরানোর উদ্যোগ। সবাই না আসলো, আপনি আসুন৷ এক জন দিয়েই হবে অনেকজন, বদলাবে পরিবেশ। বই পড়লে অনেক জ্ঞান অর্জন হয়। অতীতে যারা জ্ঞানী ব্যক্তি হয়েছেন তারা এসব ইতিহাস পড়ে জ্ঞান অর্জন করেছেন।বিষয়টি নতুন প্রজন্মের জানা উচিত।