শিরোনাম
ঢাকা, ৫ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস): বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চে পরিবেশিত হয়েছে যাত্রাপালা ‘আপন দুলাল’। যাত্রাদল বন্ধু অপেরা’র এ পালায় নির্দেশনা দিয়েছেন মনির হোসেন এবং পালাকার ছিলেন শামসুল হক।
আজ ৫ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬ টায় পরিবেশিত হলো এ যাত্রাপালা।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের ব্যবস্থাপনায় চলছে ‘যাত্রা উৎসব ২০২৪’। যাত্রা উৎসবকে কেন্দ্র করে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। প্রতিদিনই নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সমাগম ঘটছে মুক্তমঞ্চে।
যাত্রাপালা ‘আপন দুলাল’ এর কাহিনী সংক্ষেপ: আপন এবং দুলাল ধর্মপুরের মহারাজ ধনপতি রায় এর দুটি সন্তান। হাশি-খুশি ও সুখ-শান্তির মধ্য দিয়ে বেশ ভালোভাবেই চলছে রাজ্য।
হঠাৎ একদিন মহারানি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি ৩টি প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ করলেন সেনাপতি এবং মহারাজকে। তিনটি প্রতিজ্ঞার মূল কথা রানির মৃত্যুর পর মহারাজ কখনো বিয়ে করতে পারবেন না। একথা বলে মহারানি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। মৃত্যুর পূর্বে আপন ও দুলালকে তুলে দিলেন সেনাপতির হাতে। সেনাপতি ছিলেন মুসলিম এবং মন্ত্রী জংবাহাদুর হিন্দু। তার হাতে কেন দিলেন না, সেই প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলছে মন্ত্রী মহাশয়। সেনাপতি মহারানির কথা রাখতে গিয়ে আপন ও দুলালকে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে শিক্ষাগুরুর বাড়িতে রেখে আসেন। কিন্তু দিন অতিবাহিত না হতেই চক্রান্ত করে মহারাজকে দ্বিতীয় বিয়ে করান। প্রাসাদে এলেন ‘সৎ মা’। একদিন মহারাজ বললেন, গুরুদেবের বাড়ী হতে আপন এবং দুলালকে প্রাসাদে নিয়ে আসতে।
মহারাজ হঠাৎ শিকারে বের হবেন। কারণ ছোট রানি হরিণের মাংস খেতে চেয়েছিলেন। আপন ও দুলাল শিকারে গেল। ফেরার পথে দুলালের পানির পিপাসা পেল। আপন মায়ের কাছে পানি আনতে গেলে রানি ক্ষুদ্ধ হয়ে যান। মন্ত্রীকে ডেকে পরামর্শ করে আপন ও দুলালকে মিথ্যে অপরাধ দিয়ে ঘাতকের হাতে তুলে দিলেন। মহারাজ পুত্র শোকে তখন উন্মাদ। সেনাপতি ও মাস্টার আপন এবং দুলালকে অন্য রাজ্যে পাঠিয়ে দেয়। তারপর পথে যেতে যেতে দুই ভাই দুই দিকে হারিয়ে যায়। অনেক দিন পরে সোনাপুর নামে এক রাজ্যে আপন ও দুলাল একত্রিত হয়। ধনপতি মিরকাসেম এবং মাস্টার সবাই একসঙ্গে রাজ্যে ফিরে এসে তাহাদের রাজ্য উদ্ধার করেন।
আগামীকাল ৬ নভেম্বর বুধবার পরিবেশিত হবে যাত্রাপালা-‘ফুলন দেবী’। দলের নাম-শারমিন অপেরা,পালাকার-পুর্নেন্দু রায়,পালা নির্দেশক- শেখ রফিকুল।
যাত্রাপালা ‘ফুলন দেবী’ এর কাহিনী সংক্ষেপ: দস্যু ফুলন, গ্রামের সরল মেয়ে। দুই বোন এবং পিতা, তিনজনের সংসার। পিতা হতদরিদ্র, ভালো ঘরে বিয়ে দেওয়ার মত অর্থ সম্বল কিছুই নেই। নিরুপায় হয়ে মধ্য বয়স্ক পুতিলাল নামক এক লোকের সাথে বিয়ে দেয়। কিন্তু স্বামী মদ্যপ, জুয়ারি, চরিত্রহীন হওয়াতে সীমাহীন নির্যাতনের শিকার হন। ফুলন চলে আসে বাবার বাড়িতে। গ্রামে এসে সমাজের প্রভাবশালীদের লালসার শিকার হন। অসহায় হয়ে থানার ওসি সাহেবের কাছে আসলে বিতারিত হয়ে ফিরে যান। ঘুষ খেয়ে পুলিশ উল্টো বিচার করে, সেখানেও লালসার শিকার হন। যখনই ফুলন প্রতিবাদী হয়ে উঠে আর তখনই সমাজের প্রভাবশালী বিচারপতিরা তাকে তাঁর পিতাসহ গ্রাম ছাড়া করেন। বাধ্য হয়ে প্রতিশোধের নেশায় ডাকাত দলে যোগ দিয়ে সে হয়ে উঠে দস্যু রাণী ফুলন।
বৃহস্পতিবার ৭ নভেম্বর পরিবেশিত হবে যাত্রাপালা- ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’। দলের নাম-যাত্রাবন্ধু অপেরা, পালাকার-শ্রী শচীননাথ সেন,পালা নির্দেশক- আবুল হাশেম।
উল্লেখ্য, যাত্রাশিল্প ও যাত্রাশিল্পীদের উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এই উৎসবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিবন্ধিত ৭টি যাত্রা দল প্রতিদিন ১টি করে ‘ঐতিহাসিক ও সামাজিক’ ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত যাত্রাপালা পরিবেশন করছে। ‘যদি তুমি ভয় পাও, তবে তুমি শেষ যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে উৎসব চলবে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত এ যাত্রাপালা পরিবেশিত হবে।