বাসস
  ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৭:২৬

মাদারীপুরে শকুনি লেকের সৌন্দর্যে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা

// বেলাল রিজভী //

মাদারীপুর, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস): মাদারীপুরের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হিসেবে এক কথায় আসবে শকুনি লেকের নাম। লেকটিকে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে। এর ফলে দর্শনার্থীদের মুগ্ধতা এখন এই লেক ঘিরে। লেকটি এখন শহরের বিনোদন প্রেমীদের সবচেয়ে পছন্দের স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিদিন এই শকুনি লেকটির চারপাশ ঘুরে দেখতে ছুটে আসছেন হাজারো দর্শনার্থী। বিকেল হলে যেন এক মিলনমেলায় পরিণত হয় এ স্থান। শুধু মাদারীপুরের বাসিন্দা ছাড়াও আশেপাশের অনেক জেলা থেকেই এখন নিয়মিত এই লেকে বেড়াতে আসেন দর্শনার্থীরা। 

মাদারীপুর পৌরসভার সূত্র জানিয়েছে, ১৮৫৪ সালে শকুনি লেক খননের মধ্য দিয়ে মাদারীপুর শহরের পত্তন হয়। দীর্ঘ দিন অযত্ন-অবহেলায় তা পড়ে থাকে। ২০১৩ সালে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে এর সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু করে পৌরসভা। ২০১৪ সালে লেকের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শেষ হয়। সরকারি অর্থায়নে ‘শকুনি লেক’ প্রকল্প ঘিরে রয়েছে শহীদ কানন চত্বর, শিশুপার্ক, স্বাধীনতা অঙ্গন, থিয়েটার মুক্ত মঞ্চ, শান্তি ঘাটলা, পানাহারসহ মাদারীপুর ঘড়ি নামে একটি টাওয়ার। প্রতিবছর শকুনি লেকের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা।

শকুনি লেকে সকাল-বিকেলে একটু বিনোদনের আশায় পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই ছুটে আসেন শহরের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা শকুনি লেকের পাড়ে। বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা দলগতভাবে  গানের আসর বসিয়ে মুগ্ধতা ছড়ায়। 

লেকটিতে ঘুরতে আসা আব্দুল হক নামে এক দর্শনার্থী বলেন, শকুনি লেকের কাছে আসলে মন আনন্দে ভরে যায়। এক অন্য রকম শান্তি অনুভব করি। সবুজ ও সতেজ পরিবেশ। এখানে রোজ না এলে ভালো লাগে না। রোজ একবার করে হলেও এই লেকে আমরা আসি।

জেলার কালকিনি উপজেলা থেকে আসা আনিসুর রহমান নামে আরেক দর্শনার্থী বলেন, ‘বন্ধুদের নিয়ে প্রতি সপ্তাহে এ লেকে ঘুরতে আসি। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিই, গান গাই, আবৃত্তি করি।

সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান সায়মা বলেন, প্রতিদিন কলেজ শেষে এক ঘণ্টার জন্য শকুনি লেকের পাড়ে বসে অবসর সময় কাটাই। এখানে এলে মুক্ত বাতাস আর লেকের পানির সচ্ছতা দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়।

শকুনি লেক পর্যটন শহর হিসেবে জেলাকে পরিচয় করিয়ে দেবে বলে মনে করছেন মাদারীপুরের জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সংগীতবিষয়ক সম্পাদক নন্দিনী হালদার।

তিনি বলেন, ‘সৌন্দর্যবর্ধনের পর নতুন সাজে সেজেছে ঐতিহ্যবাহী এই শকুনি লেক। সন্ধ্যা হলে নানা রঙের বাহার সত্যি মুগ্ধ করে। শকুনি লেকের কারণে জেলার আরও পরিচিতি বাড়বে।

শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত লেকটির দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটার। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, শকুনি লেকের চারপাশে শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের মানুষের ভিড়। কেউ কেউ প্রিয়জনের সঙ্গে ছবি তোলা নিয়ে ব্যস্ত। কেউবা সেলফি তুলছেন। কেউ কেউ প্যাডেল বোটে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরছেন। লেকটিতে ‘মাদারীপুর ঘড়ি’ নামে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। সেখানে উঠে মনভরে শহরটিকে দেখছেন দর্শনার্থীরা। 

জেলা প্রশাসক  মোছা. ইয়াসমিন আক্তার বলেন, শকুনি লেক আমাদের মাদারীপুরের ঐতিহ্যের প্রতিক। এই লেকটি রক্ষনাবেক্ষণসহ সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য আমরা নিয়মিত পরিচর্যা করি। পরিস্কার পরিচ্ছনতার জন্য পৌরসভার পরিছন্নকর্মীরা ভোরে ও রাতে কাজ করে। লেকটির সৌন্দর্য ঘিরে আমাদের আরও বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। এখানে দর্শনার্থীদের কথা মাথায় রেখে নতুন করে আরও কি স্থাপন করা যায় সেটা নিয়েও আমরা কাজ করছি।’