শিরোনাম
। ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন।
নাটোর, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : শীতের শুরুতেই নাটোরে জমজমাট হয়ে উঠেছে গ্রামীণ মেলা। ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনকে উপলক্ষ করে গ্রামীণ জনপদে মেলার আয়োজন যেন থাকতেই হবে। দেশীয় সব মুখোরচক খাবার আর হরেক রকম প্রসাধনীর পসরা নিয়েই মূলত: গ্রামীণ মেলার আয়োজন। একদিন বা অল্প ক’দিনের এসব গ্রামীণ মেলায় ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়ে লাভবান হচ্ছেন অসংখ্য ব্যবসায়ী।
শীতের মৌসুমে মসজিদ এবং মাদ্রাসা ভিত্তিক ওয়াজ মাহফিলে মুখরিত হয়ে ওঠে গ্রামীণ জনপদ। শহরেও কমবেশী আয়োজন করা এ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। মাজার ভিত্তিক ওরশ মাহফিলও আয়োজিত হতে দেখা যাচ্ছে । দোল যাত্রা, কালী পূজা, চরক পূজাও পায় উৎসবের আমেজ। ধর্মীয় এসব অনুষ্ঠান ছাড়াও বইমেলা, নৌকা বাইচ, ঘোড়া দৌড় বা অন্য কোন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উপলক্ষে গ্রামীণ মেলা যেন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে।
সিংড়া উপজেলার প্রসিদ্ধ বড়সাঁঐল কাশফুল উলুম মাদ্রাসায় আজ রাতে আয়োজন করা হয়েছে ওয়াজ মাহফিল। এ উপলক্ষে গতকাল থেকেই বিটিবিএম ফুটবল মাঠ এবং বড়সাঁঐল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ জুড়ে বসেছে গ্রামীণ মেলা। শতাধিক ব্যবসায়ী আর তাদের ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠেছে এ দু’টি মাঠ। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, অন্তত: দশ লাখ টাকার পণ্য কেনাবেচা হবে দুইদিনের এ মেলায়।
পঞ্চাশের অধিক খাবারের দোকান বসানো হয়েছে। বই, পোষ্টার, প্রসাধনী, লোহা ও কাঠের কিছু সামগ্রীর দোকানও বসানো হয়েছে। অনেকগুলো চটপটি-ফুচকার দোকানের মধ্যে ভ্যানে পণ্য সাজিয়ে দোকান করেন কালিগঞ্জ বাজার এলাকার প্রায় ৩০ বছরের ব্যবসায়ী রুবেল। রুবেল জানান, মেলার প্রথম দিনে গতকাল বিক্রি প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। আজ একটু বেশী বিক্রির প্রত্যাশা। মেলায় অন্তত পাঁচ মণ আলুর চিপস বিক্রির প্রত্যাশা রজব আলীর।
বিটিবিএম কলেজের শিক্ষকদের দেখা গেল কলেজ প্রাঙ্গনে বসে সবাই মিলে জিলাপী খেতে। কম্পিউটার অপারেশন বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক আব্দুস শামীম বলেন, মেলার জিলাপীর স্বাদই আলাদা, অনেক সুস্বাদু।
পিয়াজী, ছোলা, চিড়া ভাজা, ডাল ভাজা, চানাচুরসহ ১২টি সামগ্রীর দোকান দেন সিংড়া দমদমা এলাকার জহুরুল ইসলাম। পণ্য বিপণনে সন্তু‘ষ্ট বলে জানান তিনি। সন্তু‘ষ্টি প্রকাশ করেছেন প্রসাধনী ব্যবসায়ী রিপন ও নাজমুল।
কলম বাজারের ব্যবসায়ী রিপনের প্রসাধনীর দোকান আছে। মেলার খোঁজ পেলেই অংশ নেন বলে জানান তিনি। মেলা চলে অগ্রহায়ণ মাস থেকে আষাঢ় পর্যন্ত। জহুরুল ইসলাম বছরে ৫০টি মেলায় অংশগ্রহণ করেন বলে জানান।
বিটিবিএম কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মোশাররফ হোসেন বলেন, মেলায় অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন এলাকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। একসঙ্গে অনেক ক্রেতা ও অধিক মুনাফার কারনে মেলায় আসেন।
ওয়াজ মাহফিল এলাকার ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে বলে স্থ’ানীয়ভাবে বসবাসকারী ছাড়াও বাইরে অবস্থানকারী গ্রামের বাসিন্দা এবং বাইরে বিয়ে হওয়া গ্রামের মেয়েরা তাদের পরিবারবর্গসহ মাহফিলে আসেন ও মেলায় কেনাকাটা করেন বলে জানান বড়সাঁঐল কাশফুল উলুম মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মুস্তাফিজুর রহমান খোকন।
নাটোর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি আব্দুল মান্নাফ বাসস’কে বলেন, গ্রামীণ মেলা আমাদের ঐতিহ্য। গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এর অনন্য ভূমিকা রয়েছে।