বাসস
  ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:০৫

জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার মারা গেছেন

 ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ (বাসস) : একুশে পদকপ্রাপ্ত জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার মারা গেছেন। তিনি আজ ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্নালিল্লাহি রাজিউন)।

সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার স্বামী সারোয়ার এ আলম।  তিনি জানান, পাপিয়া আর আমাদের মাঝে নেই। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার দিকে চিকিৎসক তার লাইফ সাপোর্ট খুলে মৃত ঘোষণা করেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্বামী, দুই মেয়েসহ অগুনতি গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

জনপ্রিয় শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার মূলত রবীন্দ্র সঙ্গিত গেয়ে শ্রোতাদের হৃদয় জয় করেন।  তার ব্যতিক্রমী কণ্ঠশৈলী সংগীতাঙ্গনে তাঁকে তুমুল জনপ্রিয় করে তোলে। তাঁর অনবদ্য কন্ঠে গাওয়া ‘না সজনী না/ ওহে সুন্দর মম গৃহে আজি পরম উৎসব রাতি/ যেতে যেতে চায় না যেতে ফিরে ফিরে চায়/ ওই মালতি লতা দোলে/যদি বারণ কর তবে গাহিব না/আমার পরাণ যাহা চায়/বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি/ ওযে মানে না মানা সহ বেশ কিছু সংখ্যক রবীন্দ্র সঙ্গিত ভক্তশ্রোতাদের মাঝে অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। মূলত রবীন্দ্র সংগীত গাইলেও শিল্পী পাপিয়া সারোয়ারের গাওয়া আধুনিক গান ‘নাই টেলিফোন নাইরে পিওন, নাইরে টেলিগ্রাম’ এক সময় ছিল লোকের মুখে মুখে।

পাপিয়া সারোয়ারের জন্ম বরিশালে, ১৯৫২ সালে ২১ নভেম্বর। ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্র অনুরাগী পাপিয়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছায়ানটে ভর্তি হন। পরে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে ভর্তি হন। ১৯৬৭ সাল থেকে বেতার ও টিভিতে তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে গান করেন তিনি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন।

১৯৭৩ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে ভারতে রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রসংগীতে ডিগ্রি নিতে যান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনিই প্রথম ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে সেখানে স্নাতক করার সুযোগ পান। তিনি  বিশ্বভারতীতে  শান্তিদেব ঘোষ, কণিকা বন্দোপাধ্যায় ও নীলিমা সেনের অধীনে রবীন্দ্র সঙ্গীতে তালিম নেন। এর আগে ১৯৬৬ সালে ছায়ানটে ওয়াহিদুল হক, সন্জীদা খাতুন ও জাহেদুর রহিমের কাছে এবং পরে বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে সংগীতে দীক্ষা  নেন পাপিয়া। ধ্রুবতারা যোশীর অধীনে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নেন পাপিয়া সারোয়ার।
পাপিয়া সারোয়ার ১৯৯৬ সালে ‘গীতসুধা’ নামে একটি গানের দল গঠন করেন। একসময় জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন পাপিয়া সারোয়ার ।

পাপিয়া সারোয়ার ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি তাকে ফেলোশিপ প্রদান করে। সঙ্গিতে অসামান্য অবদান রাখায় তিনি ২০২১ সালে একুশে পদক পান। ‘পাপিয়া সারোয়ার’নামে তার প্রথম অডিও অ্যালবামটি প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালে। তার সর্বশেষ অ্যালবাম ‘আকাশপানে হাত বাড়ালাম’ প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে।

১৯৭৮ সালে সারোয়ার আলমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাঁর দুই মেয়ে জারা কলেজ অব নিউ জার্সিতে জীববিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক ও জিশা কানাডীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন নির্বাহী। 

 বেশ কয়েক বছর ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন পাপিয়া সারোয়ার। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। তার মরদেহ আজ বারডেমের হিমঘরে রাখা আছে। কাল শুক্রবার বাদ জুম্মাধানমন্ডি ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করার কথা রয়েছে।