লালমনিরহাট, ২১ জুন, ২০২২ (বাসস): জেলার হাতীবান্ধায় আগামীকাল বুধবার পুলিশ জাদুঘর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি বেনজির আহমেদ এই জাদুঘর উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। বৃষ্টিশ আমলে স্থাপিত শতবছরের থানা ভবনটি সংস্কার করে গড়ে তুলেছে এই পুলিশ জাদুঘর। 
১৯১৬ সালে নির্মিত তৎকালীন কুচবিহার জেলার অধীনে পাটগ্রাম থানা ছিল। বৃষ্টিশ সরকার প্রাচীন এই ভবনটি নির্মাণ করে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে হাতীবান্ধা থানাকে মডেল থানা হিসেবে ঘোষণা করে। পুরান থানা ভবন ভেঙ্গে নতুন থানা ভবন, ব্যারাক হাউজ, অফিসার চেম্বার, হাজতখানা প্রভূমি সব আধুনিক সুবিধা নিয়ে নতুন বহুতল থানা ভবন নির্মাণ করা হয়। এতে করে বৃটিশ নির্মাণ শৈলীর ১০০ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক এই ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু ঐতিহাসিক এই ভবনটির নির্মাণ শৈলীর মায়ায় পড়ে যায় পুলিশ কর্মকর্তাগণের। তারা ভবনটি না ভেঙ্গে ঐতিহ্যরক্ষায় কিছু করা যায় কিনা সেই চিন্তা থেকে পুলিশ জাদুঘর নির্মাণের চিন্তা আসে। ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি মাসে এ জেলায় এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালনে আসেন আবিদা সুলতানা। তিনি পুলিশ যাদুঘর জাদুঘর নির্মাণে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। 
হাতীবান্ধা থানার ওসি এরশাদুল আলম জানান, আগামীকাল ২২ জুন পুলিশ জাদুঘরটির উদ্বোধন হবে। বাংলাদেশ পুলিশ জাদুঘর লালমনিরহাটে মোট সাতটি গ্যালারি থাকছে। প্রতিটি গ্যালারিতে রাখা নিদর্শনগুলো দর্শক ও গবেষকদের সামনে তুলে ধরতে কাঁচের আবরণ ও আলোর ব্যবস্থা থাকবে। এই জাদুঘরে বিভিন্ন সময়ে পুলিশ বাহিনী নানা স্মারক ও তথ্য সবার জন্য উপস্থাপন করা হবে। প্রাচীন এই ভবনের ঐতিহ্যও রক্ষা পাবে জাদুঘরের মাধ্যমে। গ্যালারি গুলোতে সুলতানি আমল ও মোগল আমল, ব্রিটিশ আমল, ভারতীয় উপমহাদেশে পুলিশের উদ্ভব ও বিকাশ নিখুঁতভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। গ্যালারি দুইয়ে থাকছে ব্রিটিশ আমল, আধুনিক পুলিশের যাত্রা। তিন নম্বর গ্যালারিতে রয়েছে স্বাধীনতাযুদ্ধ, ভারতীয় উপমহাদেশ ও বাংলাদেশ স্বাধীনতাযুদ্ধে পুলিশ। গ্যালারি চারে রয়েছে ডার্করুম, গ্যালারি। পাঁচে রয়েছে মুক্তাঞ্চলে মুক্তি পুলিশ। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকালে ৬ নম্বর সেক্টরের হেডকোয়ার্টার ছিল, জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতে। সে সময় গঠন করা হয়েছিল মুক্তাঞ্চলের মুক্তি পুলিশ। তাদের সে সময়ের কর্মকান্ড তুলে ধরাসহ কিছু নিদর্শন থাকছে এই গ্যালারিতে। গ্যালারি ছয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী। গ্যালারি সাতে বাংলাদেশ পুলিশ গ্যালারি, আধুনিক সময়কাল। এভাবে সুলতানি আমল, মোগলআমল, বৃটিশ আমল, পাকিস্তান আমল ও স্বাধীন বাংলাদেশের পুলিশের গৌরব উজ্জল ভূমিকা তুলে ধরা হবে। হাতীবান্ধা থানার পুরাতন ও পরিত্যক্ত এ ভবনটিকে জাদুঘরে রুপান্তরিত করা কখনই খুব সহজ ছিল না। জেলার এসপি আবিদা সুলতানা ও হাতীবান্ধা থানার ওসি এরশাদুল আলমের পরিশ্রমের ফসল বাংলাদেশ পুলিশ জাদুঘর। আমরা হাতীবান্ধাবাসী দেশের প্রথম বাংলাদেশ পুলিশ জাদুঘরটি পেয়ে আনন্দিত ও গর্বিত।
এসপি আবিদা সুলাতানা জানান, দুই বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম, পুলিশ সদস্য ও জেলাবাসীর সহযোগীতায়  পুলিশ জাদুঘর তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। আইজিপি বেনজির আহমেদ আগামীকাল লালমনিরহাটে আসছেন। সেই দিনে জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় জেলাবাসী তথা সমগ্র জেলাবাসীর জন্য এই পুলিশ জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হবে।