শিরোনাম
॥ সুলতান মাহমুদ ॥
যশোর, ২০ জানুয়ারি, ২০২৩ (বাসস) : ঐতিহ্য ও ঐশ্বর্যের জনপদ ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীতে জমে উঠেছে তিন দিনব্যাপী ফুল উৎসব।
এ উৎসবকে কেন্দ্র করে উচ্ছ্বাসে মেতেছেন গদখালীর ফুল চাষীরা। এতে ঝিকরগাছার গদখালী-পানিসারা-হাড়িয়া নতুন রূপ নিয়েছে। ফুল ক্ষেতগুলোকে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। প্রতিটি ফুল শেডকে এক একটি স্টলে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এখানে অবস্থিত রেস্টুরেন্টলোকেও ফুল ক্ষেতের আদলে রূপ দেয়া হয়েছে। এই উৎসবে ফুল উৎপাদক, ফুল ব্যবসায়ী, ফুল সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো অংশগ্রহণ করছে। দর্শনার্থীদের যাতায়াতের জন্য যাত্রীবাহী ভ্যান ও অটো রিকশাগুলোও ব্যতিক্রমভাবে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।
ফুলের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আরো বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ উৎসবে ফুলের রাজ্য গদখালী এলাকাকে সবার সামনে তুলে ধরতে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি।
আজ শুক্রবার ফুল উৎসবের দ্বিতীয় দিনে রয়েছে নারী ফুলচাষীদের সঙ্গে সরকারের উন্নয়ন দর্শন সম্পর্কে উঠান বৈঠক ও শিশুদের ফুল বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। শনিবার রয়েছে উঠান বৈঠকসহ নারী নেতৃত্বে গ্রুপ ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা, কৃষক সম্মাননা ও সমাপনী অনুষ্ঠান।এ উৎসবে উৎসব প্রাঙ্গণে বৃহত্তর যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের কৃষি প্রযুক্তি প্রদর্শনী করা হচ্ছে।
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল হক বলেন, ফুলের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ অর্থাৎ বিশ্ববাজার ও দেশীয় বাজারে ঝিকরগাছার উৎপাদিত ফুলকে আরও পরিচিত করতে এই ফুল উৎসবের আয়োজন। যশোরের গদখালির ফুল এই জেলার ঐতিহ্য সুদীর্ঘকালের। আমরা আশা করি এই উৎসবের মাধ্যমে ফুলের রাজ্য হিসেবে গদখালি এলাকার সুখ্যাতি আরো আড়ম্বরপূর্ণ হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশ ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ফুল উৎসবে এলাকার ফুল চাষীদের মধ্যে অন্য রকম উৎসাহ-উদ্দীপনা শুরু হয়েছে। এ উৎসবে ২০টি নার্সারি, ৩টি পর্যটন প্যাভিলিয়ন ও ১০টি স্টল সেজেছে উৎসবের সাজে।
ফুলচাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, ফুল উৎসবকে কেন্দ্র করে নতুন রুপে সেজেছে গদখালী-পানিসারা এলাকা। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে নতুন করে উৎসবে মেতেছেন ফুলচাষীসহ সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম যশোরের গদখালী। এই গ্রামের নাম জানে না এমন কেউ নেই। এখানকার উৎপাদিত ফুল শুধু সুভাস ছড়াচ্ছে না, দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সোপানও বৃদ্ধি করেছে। তাই ফুল চাষ বিকাশে ফুলের বিপণন, উন্নত চাষাবাদ, এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও চাষীদের আর্থিক সহযোগিতাসহ সব বিষয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে ফুল চাষকে আরও অনেক দূরে এগিয়ে নিতে হবে। ফুল কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের বিকাশে এই উৎসব কাজে আসবে বলে জানান তিনি।
সূত্রে জানা যায়, ফুল উৎসবের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একজন নারী ফুলচাষীসহ নয়জন ফুল চাষীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননা প্রাপ্তরা হলেন-নারী ফুলচাষী সাজেদা বেগম, শের আলী সর্দার, আব্দুর রহিম, ইসমাইল হোসেন,রুস্তম আলী সর্দার, শাহজাহান আলী, মঞ্জুর আলম, আজিজুল সর্দার ও আবুল হোসেন।
কৃষি বিভাগ, সংশ্লিষ্ট ফুলচাষী সূত্রে জানা যায়, ১৯৮২ সালের দিকে রজনীগন্ধা ফুল চাষের মাধ্যমে গদখালী-পানিসারা এলাকায় ফুল চাষ শুরু হয়। এ অঞ্চলের প্রায় ৬ হাজার ফুলচাষী, ১২০০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্রাডিওলাস, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১২ ধরনের ফুল চাষ করে থাকেন। দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৭০ভাগ ফুল যশোরের গদখালী থেকে সরবরাহ করা হয়। দেশের গন্ডি পেরিয়ে যশোরের ফুল এখন যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে। এ অঞ্চলে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার ফুল উৎপাদন হয়ে থাকে।