বাসস
  ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:২৩

বরিশালের বহু তরুণ-তরুণী নেমে পড়ছেন আউটর্সোসিং পেশায়

বরিশালে আইটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে শিখে আউটসোর্সিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন তরুণেরা। ছবি: বাসস

শুভব্রত দত্ত

বরিশাল, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : বেকার যুবক ও যুব নারীদের আত্ম-কর্মসংস্থান ও দক্ষ তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি মানবসম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে বরিশালে সরকারি-বেসরকারি বহু আইটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কাজ করছে। এসব কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ শেষে তরুণ-তরুণীরা নেমে পড়ছেন আউটর্সোসিং পেশায় ।

আইটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র-এর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বরিশাল জেলায় ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর অনেক ভালো অপশন রয়েছে, যেখানে আপনি ডিজিটাল স্কিলস শিখে ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং পেশায় ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো আপনাকে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল স্কিল, যেমন ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক ডিজাইন, কনটেন্ট রাইটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ও  বরিশাল ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, বরিশাল জেলায় আইটি সেন্টার, আইটি ট্রেনিং সেন্টার, বরিশাল ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ডিজিটাল স্কিলস বাংলাদেশ, জেলা আইটি একাডেমি, জেলা উন্নয়ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, অনলাইন কোর্স প্ল্যাটফর্ম ও বরিশাল আইটি পার্ক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। জেলার বহু বেকার যুবক ও যুব নারীরা কম্পিউটারের উপর বিভিন্ন কোর্সে ইন্টারনেট ভিত্তিক প্রশিক্ষণ শেষে নেমে পড়েছেন আউটর্সোসিং পেশায়। এসব শিক্ষার্থীরা স্বল্প মেয়াদে গ্রাফিক্স, অ্যানিমেশন, ওয়েব ডিজাইন, ডাটা এন্ট্রির মতো ইন্টারনেট ভিত্তিক প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করে বর্তমানে হয়েছেন স্বাবলম্বী। ঘরে বসে একটি ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ কম্পিউটার সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে ঘরে বসেই মাসে আয় করছেন প্রায় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা। ব্যক্তি পর্যায় এ পেশায় সীমাবদ্ধ না থেকে বেশ কয়েকজন গড়ে তুলেছেন ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান। জেলায় কাজ করছেন শতাধিক তরুণ-তরুণী আউটর্সোসিং পেশায়। দেশি ও বিদেশি কোন ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের জন্য গ্রাফিক্স, অ্যানিমেশন, ওয়েব ডিজাইন, ডাটা এন্ট্রির মতো শত শত ইন্টারনেট ভিত্তিক কাজ করে দিচ্ছেন এসব তরুণ-তরুণী। এতে করে তারা নিজেরাও হচ্ছেন স্বাবলম্বী ও দেশের অর্থনীতি হচ্ছে শক্তিশালী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার পৃথক ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ শেষে জেলার বিভিন্ন স্থানে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছে ফ্রিল্যান্সার মো: তানভীর ইসলাম, সালেহিন সানি, সৈয়দা নিশাত আরা, মো: নওশাদ, আদিত্য, ইফতি ও জয়ন্ত জয়-এর মতো শতাধিক তরুণ-তরুণী।

এ প্রসঙ্গে নগরীর গোরস্থান রোডের বাসিন্দা টপ লেভেল সেলার ফ্রিল্যান্সার মো. নওশাদ বলেন, শুরুটা ছিল একদমই কৌতূহল বশতো। ২০১৫ সালের শুরু দিকে এসএসসি পাসের পর পেপারে একটা লেখা দেখে অনুপ্রাণিত হই। তখন ইন্টারনেট সহজলভ্য না হওয়ার কারণে কিছু পেপার, ব্লগ আর কিছু বই পড়ে জানার চেষ্টা চালাতে থাকি। এভাবে কেটে গেল কয়েকটি বছর। এরপর একটা সময় সরকারি ফ্রি স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্স করে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের উপর কাজ শিখে, ফাইভার মার্কেট প্লেসে কাজ শুরু করি। প্রথম দিকে মাসে ৭০ থেকে ৮০ ইউএস ডলার আয় করতে পারলেও নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বর্তমানে মাসে ৬’শ থেকে ৭’শ ইউএস ডলার আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আলাপকালে জেলার বানারিপাড়া উপজেলার বাসিন্দা ফ্রিল্যান্সার মো: তানভীর ইসলাম বলেন, ছোট বেলায় বাবাকে হারাতে হয়েছে । চাকুরির সুবাদে মাকেও থাকতে হয়েছে খানিকটা দূরে। অর্থের অভাবে অনেকটা কষ্ট করে বড় হতে হয়েছে তাকে। ২০১৮ সালে বরিশাল ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি থেকে ডিপ্লোমা শেষ করে জীবিকার প্রয়োজনে পুরো দমে মাঠে নেমে পড়েন তানভীর ইসলাম।

ফ্রিল্যান্সার মো: তানভীর আরো বলেন, ফ্রিল্যান্সিং থেকে উপার্জিত অর্থ পুঁজি করে, বর্তমানে তিনি তার একাধিক ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। বর্তমানে তিনি প্রায় কোটি টাকা আয় করছেন।

এ বিষয়ে বরিশাল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের আইসিটি অফিসার মোঃ আতিকুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন দিকনির্দেশনায় তথ্য প্রযুক্তি খাতের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা, অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষ মানবসম্পদ গঠন এবং ই-সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এছাড়াও সরকারি পর্যায়ে দক্ষ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রোফেশনাল সৃষ্টির লক্ষ্যে আইসিটি সার্ভিস সৃষ্টি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল বরিশালের হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ও আঞ্চলিক পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ জসীম বলেন, এসব তরুণ তরুণী সবাই বর্তমানে স্বাবলম্বী। ভবিষ্যতে এসব ফ্রিল্যান্সাররা দ্রুতগতি ইন্টারনেট সুবিধা, ব্যাংক লোন ও পেপাল-এর মতো সুবিধা পেলে আরো বেশি উন্নতি করবে।