শিরোনাম
চট্টগ্রাম, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ (বাসস) : তরুণ-মেধাবী ক্রিকেটারদের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন রংপুর রাইডার্সের কোচ মিকি আর্থার।
ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা কোচদের একজন আর্থার বাসসকে বলেন, ‘আমি মনে করি এটি খুব ভাল প্রতিযোগিতা, এটি সত্যিই একটি ভাল প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অনেক তরুণ ক্রিকেটারের উন্নতি করার সম্ভাবনা রয়েছে।’
দ্বিতীয়বারের মত বিপিএলের কোন দলের সাথে কাজ করছেন আর্থার। এর আগে ২০১৫ সালে ঢাকা ডায়নাইমাটসের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। আগের আসগুলোর চেয়ে এবারের বিপিএলের অনেক উন্নতি চোখে পড়েছে আর্থারের।
এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি যখন ঢাকা ডায়নামাইটসের কোচ হয়েছিলাম তখন প্রতিভাবান পুল একটু ছোট ছিলো। এখন আরও অনেক খেলোয়াড় আসছে। এরপর থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো অনেক উন্নতি করেছে। আমি ২০১৫ সালের তুলনায় এবারের পরিবেশকে অনেক ভালো মনে করি।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনটি দেশের কোচ ছিলেন আর্থার। নিজ দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার পর অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার না হয়েও প্রথম কোচ হিসেব অসিদের দায়িত্ব পালন করেছেন আর্থার। তার অধীনে ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিলো পাকিস্তান।
বিভিন্ন দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সাথেও জড়িত ৫৬ বছর বয়সী আর্থার। তার কোচিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে গ্লোবাল সুপার লিগের শিরোপা জিতেছে রংপুর রাইডার্স। চলতি বিপিএলেও তার দল রংপুর শিরোপার অন্যতম দাবীদার। দলের মধ্যে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করার জন্য রংপুর রাইডার্স ম্যানেজমেন্টের প্রশংসা করেছেন আর্থার।
বিপিএলের মান ভালো জানিয়ে আর্থার বলেন, ‘একটি বিষয় হলে, ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে রংপুর খুবই ভাল। তারা এমন এটি একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি যারা খুব পেশাদার এবং খুব ভালভাবে পরিচালিত হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় অন্তত চারটি ফ্র্যাঞ্চাইজি শিরোপা জিততে পারে। এটা প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্ট। আমি মনে করি সব ফ্র্যাঞ্চাইজিকে ভালোভাবে পরিচালনা করতে হবে এবং খুবই পেশাদার হতে হবে।’
শক্তিশালী দল গঠন করেও মাত্র একবার বিপিএল শিরোপা জিতেছে রংপুর। গত দুই আসরের প্লে-অফ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিলো তারা। আর্থার জানান, প্লে-অফ থেকে বিদায় নেওয়ার সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে, ‘এটি এমন কিছু যা আমাদের সমাধান করতে হবে। আমরা ভাগ্যবান যে এবার আমরা সাত ম্যাচের মধ্যে সাতটি জিতেছি (৮ ম্যাচের মধ্যে ৮টিতে জয়)। আমরা জানি, প্লে-অফে জায়গা করে নেওয়ার জন্য এটি যথেষ্ট।’
আর্থার আরও বলেন, ‘আমরা জানি যখন আমরা প্লে-অফে জায়গা করে নিবো তখন আমাদের দক্ষতার দিক দিয়ে ও মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে। আমাদের চূড়ান্ত পর্যায়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
রংপুরের এত সাফল্যের পেছনে আর্থারের ক্রিকেট মস্তিস্ক বড় অবদান রাখলেও দলের খেলোয়াড়দের কৃতিত্ব দিচ্ছেন তিনি। বিশেষভাবে দলের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানের প্রশংসা করেছেন আর্থার।
তিনি বলেন, ‘সোহান দুর্দান্ত। আমি মনে করি, সে দুর্দান্ত অধিনায়ক, অসাধারণ নেতা। আমি তাকে দেখে অবাক হয়েছি। মাঠে সে টেকনিক্যালি বেশ ভালো। মাঠের বাইরে সে দলকে ভালোভাবে আগলে রাখে। সে দুর্দান্ত উইকেটরক্ষক। উইকেটের পেছনে তার দক্ষতাও খুব ভালো। পাশাপাশি তার ব্যাটিংও যথেষ্ট ভালো এবং আরও ভালো হবে। আমি যেমন বলেছি, আমি সত্যিই বিশ্বাস করি সে একজন ব্যতিক্রমী নেতা।’
রংপুর রাইডার্সকে শক্তিশালী দল হিসেবে গড়ে তুলতে নিজের কোচিং দর্শন প্রকাশ করেছেন আর্থার। তিনি বলেন, ‘আমার কোচিং দর্শন অনেক কিছুকে ঘিরে। সবার আগে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করতে হবে যাতে একজন খেলোায়াড় নিজের সেরাটা দিতে পারে। সেরা খেলোয়াড় হয়ে উঠার জন্য তাদের ভালো একটি পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। আমি এটিকে মানসিক, শারীরিক ও প্রযুক্তিগতভাবে, এই তিনভাগে ভাগ করে থাকি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ আমি সবাইকে বলি, পথ ধরে আগাও, টেকনিক্যাল দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ডানা মেলে ওড়ো যা তাদেরকে আরো দক্ষ করে তুলবে এবং সেরা হতে সহায়তা করবে। ডানা মেলে ওড়ার অর্থ তাদের চরিত্রের সবটা মেলে ধরা।’
আর্থার বলেন, ‘সব ক্রিকেটারই আলাদা। তাদের নিজেদের প্রকাশের স্বাধীনতা দরকার। এটা মূলত অত্যন্ত ভালো ব্যবস্থাপনার বিষয়। আমি মনে করি, এমন একটি ব্র্যান্ড তৈরি করা যা সফল হবে। একটি দল নির্বাচন করে ব্র্যান্ডের সাথে মানানসই খেলোয়াড় তৈরি করা।’
ভালো পারফরমেন্স করার জন্য খেলোয়াড়দের টাস্কমাস্টার হতে চান বলে জানিয়েছেন আর্থার। তিনি বলেন, ‘আমি প্রায়ই বলতাম আমি হেডমাস্টার হবো না, তোমার পিতা হবো না, সেরা বন্ধু কিংবা চাচা হবোনা। আমি টাস্কমাস্টার হতে চাই, কারণ এটি তোমাকে আরও ভালো খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তুলবে।’