বাসস
  ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:৪৪

আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে চার দিনব্যাপী পার্বত্য মেলা

আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে চার দিনব্যাপী পার্বত্য মেলা, আপ্যায়নে থাকবে পাহাড়ি খাবারের বৈচিত্র্যতা। ছবি: বাসস

ঢাকা, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : আগামী বুধবার থেকে রাজধানীর বেইলি রোডের পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স মাঠে শুরু হচ্ছে চার দিনব্যাপী পার্বত্য মেলা ও তারুণ্যের উৎসব ২০২৫।

পার্বত্য চট্টগ্রামের তারুণ্যের উৎসব পাহাড়ি জনপদের এক টুকরো অংশকে উপহার দিতে এই মেলা চলবে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

পাহাড়ি-বাঙালিরা পার্বত্য মেলার পসরা সাজাতে ব্যস্ত। পাহাড়ি পণ্যসহ ৮০টির মতো স্টল থাকবে এবারের মেলায়। 

৩০ জানুয়ারি সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অবিরাম মেলার কার্যক্রম চলবে। স্টল নির্মাণের কাজ চলছে। 

পাহাড়ি-বাঙালির মিলন মেলায় পরিণত হবে এই মেলা। আপ্যায়নে পাহাড়ি খাবার মেন্যুতে থাকবে বৈচিত্র্যতা। 

এছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। 

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ আরো জানানো হয়েছে, এবারের পার্বত্য মেলায় খাবার মেন্যুতে থাকছে জনপ্রিয় পাহাড়ি শাকসবজি, প্রাকৃতিক উপাদানের মসলা, মাছ, মাংস এবং কচি বাঁশ। শেদ্ধ কচি বাঁশ, বাঁশের ডাল, বাঁশ দিয়ে ছোটো মাছ রান্না ও সবজির মিশ্রণে বাঁশ খাদ্য মেলায় রসনা বিলাসিতাকে বাড়িয়ে দিবে। 

পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের জন্য বাম্বু চিকেন একটি জনপ্রিয় খাবার। এটি মূলত টুকরো করা মুরগির মাংস বাঁশের মধ্যে, হলুদ, কাঁচা মরিচ, আদা, রসুন, ধনেপাতা, লবণ, এবং অন্যান্য মসলার মিশ্রণ দিয়ে তৈরি করা হয়। 

পাহাড়ি চিকেন মসলার সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে বাঁশের মধ্যে ভরে অল্প আঁচে রান্না করা মাংসে চুলোর ধোঁয়া এবং কাঠের গন্ধের মিশ্রণ মেলায় ক্রেতাদের রসনার স্বাদকে বাড়িয়ে দেবে। উনুনের উপর থাকা অবস্থায় বাঁশের খোলস ফেটে গেলে সুস্বাদু মাংস বাঁশকোড়ল যে পুরোপুরি প্রস্তুত তা বুঝা যাবে।

মেলায় সামুদ্রিক মাছের সিধল শুঁটকি, বিভিন্ন মশলা এবং শাকসবজি, বাঁধা কপি, লাউ, কুমড়ো, বরবটি, আলু ইত্যাদি রান্না করে পরিবেশন করা হবে। পাহাড়ের গোল আলু, মিক্স সবজি, হাঙ্গর শুঁটকি দিয়ে বেগুন, কাঠাল, সিম দিয়ে রান্না করার স্বাদও অতুলনীয়। পাজন রান্না পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর আরেকটি ঐতিহ্যবাহী নিরামিষ খাবার। এই খাবারটি তৈরিতে বাঁধাকপি, মিষ্টি কুমড়ো, বরবটি, পুঁই শাক, মুলা ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। আকর্ষণীয় আরেকটি রান্নার আইটেম হলো পাজন। পাজন তৈরি খাবারে অতিরিক্ত মশলা বা তেলের প্রয়োজন হয় না। পাহাড়ি দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় এই খাবারটি এবারের মেলায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভাপ দিয়ে রান্না করা বা সেদ্ধ করা হেবাং খাবার মেলায় আগ্রহী ক্রেতাদের রসনার স্বাদকে আরো বাড়িয়ে দিবে। এসব খাবারে অল্প তেল ব্যবহার আর হরেক রকমের উপাদান মিশ্রণ খাবারের সতেজতা ও পুষ্টিগুণে ভরপুর থাকবে। চিংড়ি, ছোটো মাছ ও কাঁকড়া দিয়ে তৈরি শুঁটকিকে প্রসেস করে নাপ্পি খাবার তৈরি হয়, যা পাহাড়ি-বাঙালিদের রসনা বিলাসের একটি জনপ্রিয় খাবার। ভালো করে মসলা মাখিয়ে ডিমের তৈরি হেবাং পাহাড়ি মেলার আকর্ষণকে আরো বাড়িয়ে দেবে। এছাড়া শামুকের ঝোল খাবার তো থাকছেই।

পার্বত্য মেলায় পাহাড়ি ব্যবস্থাপনায় বিশাল আয়োজনে রাজধানীবাসীসহ সকলের জন্য থাকছে তুলশিমালা চালের চিকেন বিরিয়ানি। এর সুগন্ধী মেলায় আগতদের মাতোয়ারা করে তুলবে। সান্নী পিঠা, কলা পিঠা, কালো বিন্নি চালের পিঠা, লাড্ডু, সিস্টেম, খাংময়, ব্যাম্পো সুট, ইজোরসহ নানা খাবার। সেদ্ধ শাক ভর্তায় পরিপূর্ণতা আনবে। ঢেঁকিশাক সেদ্ধ, ফুলকপি সেদ্ধ, সেদ্ধ সিমের সঙ্গে মরিচ, সিধল শুঁটকি, ধনে পাতা, পেঁয়াজ, লবণ মিশ্রণে ভর্তা তৈরি করা থাকবে মেলাতে। ভর্তা প্রেমিদের শুঁটকি বড়া পিঠা, হলুদ ফুলের ভর্তা সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখবে। পাহাড়ি ফলের তুলনা হয় না। আম, কলা, পেপে, আনারস মেলার ভোজন রসিকদের রসনার আকর্ষণকে বাড়াবেই। 

মেলায় আসা অতিথিদের আকর্ষণীয় করার জন্য থাকছে সুপেয় আখের রস। এসব খাবারের পাশাপাশি মেলার স্টলগুলোতে সাজানো থাকবে ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি সংস্কৃতির বুনন শিল্পের ছোট-বড় সবার জন্য নানান বাহারি পোশাক। নকশি করা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, নিজস্ব ডিজাইন করা পোশাক, টেক্সটাইল পণ্য ও হস্তশিল্প পণ্যগুলো সবধরনের ক্রেতাদের আকর্ষণ করবে। ক্রেতারা এখানে সাধ্য মতো তাদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে পারবেন।

যাদের খাদ্যে অ্যালার্জি, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে, তারা ডাক্তারের পরামর্শ মতে জেনে বুঝে পার্বত্য মেলার রসনা বিলাসিতায় অংশ নিবেন। পাহাড়ি এই ধরনের খাবার প্রকৃতি ও পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়া পার্বত্য এলাকার মানুষগুলো অভ্যস্ত আছে। প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি এসব খাবার সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যসম্মত। পাহাড়ি এসব খাবার রসনা বিলাসের পরিপূর্ণতা দেবে।