শিরোনাম
চট্টগ্রাম, ১৫ নভেম্বর ২০২৩ (বাসস) : চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগীদের ৭৫ শতাংশই ডেন-২ সেরো টাইপে আক্রান্ত। এছাড়াও চট্টগ্রামে শনাক্ত হয়েছে এ বছর বিরল ডেন-১ সেরো টাইপ, যাতে চট্টগ্রামের ১১ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত। চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৬৫ শতাংশই পুরুষ, ডেঙ্গু রোগীদের প্রতি ৫ জনে ১ জন শিশু। চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি এলাকাকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ডেঙ্গু নিয়ে গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন-এর তত্ত্বাবধানে সম্প্রতি চট্টগ্রামের ৬ প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের যৌথ গবেষণায়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-এর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ-এর মেডিসিন ও পেডিয়াট্রিকস বিভাগ, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, ফৌজদারহাটস্থ বিআইটিআইডি, আইসিডিডিআরবি এবং নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং, রিসার্চ এন্ড ইনোভেশন ল্যাব চিটাগাং-এর গবেষকগণ গত ৪ মাস ধরে চট্টগ্রামের ১ হাজার ৫৫০ জন ডেঙ্গু আক্রান্তকে নিয়ে গবেষণা করেন। এই রোগীদের রোগতত্ত্ব, জনস্বাস্থ্যগত প্রভাব, ভাইরাসের ধরণ, জিনোমের প্রকরণ উক্ত গবেষণায় উঠে এসেছে।
গবেষণায় দেখা যায়, চট্টগ্রামের ৯৯ শতাংশ রোগীর মধ্যেই জ্বরের প্রাধান্য ছিল। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ রোগীর মাঝেই জ্বরের লক্ষণ দেখা যায়। এছাড়া, স্বল্পশিক্ষিত মানুষের মাঝে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি দেখা যায়। পঞ্চম শ্রেণীর বেশি পড়াশুনা করেননি এমন ডেঙ্গু রোগী ছিল চট্টগ্রামে ৪৫ শতাংশ। চট্টগ্রামের ৬০ শতাংশ ডেঙ্গু রোগীর আবাসস্থল ৫ টি এলাকায়, যা গবেষকগণ হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এলাকাগুলো হলো : বাকলিয়া, চকবাজার, কোতোয়ালী, ডবলমুরিং ও বায়েজিদ বোস্তামী থানা। এছাড়াও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে সীতাকু-, হাটহাজারী, পটিয়া এবং কর্ণফুলী এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে। তাছাড়া, চট্টগ্রামে যাদের মধ্যে সেরো টাইপ-১ পাওয়া গেছে তাদের ৭০ শতাংশ শিশু। চট্টগ্রামের ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু শহর এলাকায় বেশি। শিশুদের মধ্যে ৭০ শতাংশ এসেছে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। শহর ও গ্রাম উভয় জায়গাতেই প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ডেঙ্গু সেরো টাইপ-২ বেশি দেখা গিয়েছে, যা প্রায় ৭৫ শতাংশ। রোগীদের মাঝে দেখা গেছে সচেতনতার অভাব, চট্টগ্রামের ২০ ভাগ মানুষ এখনো জানেন না ডেঙ্গুর মূল কারণ মশা। জমাট-বাঁধা পানি থাকলে সেখানে ডেঙ্গু মশার বিস্তার বাড়ে সেই তথ্যও ১৫ শতাংশ মানুষ জানেন না। ডেঙ্গু আক্রান্তদের ৪০ শতাংশ মশারি ব্যাবহার করতেন না। গবেষণায় আরো দেখা যায়, ৫ শতাংশ মানুষের পূর্বেও ডেঙ্গু হওয়ার ইতিহাস ছিল। আরো দেখা যায়, চট্টগ্রামে ১১ শতাংশ লোকের মধ্যে ডেন-১ এবং ১৪ শতাংশ লোকের মধ্যে ডেন-৩ পাওয়া যাচ্ছে।
প্রকল্পটির পরিচালক ছিলেন এসপেরিয়া পরিচালক এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. আবদুর রব। প্রধান গবেষক ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. এমএ সাত্তার, প্রকল্পের সহ-পরিচালক ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডা. আবুল ফয়সাল মো. নুরুদ্দীন চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডা. এইচএম হামিদুল্লাহ মেহেদী, সহ-প্রধান গবেষক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-এর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান। এছাড়াও সহ-গবেষক ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পেডিয়াট্রিকস নেফ্রোলজি বিভাগের ডা. মারুফুল কাদের, মেডিসিন বিভাগের ডা. নূর মোহাম্মদ ও ডা. আব্দুল হামিদ সাগর, বিআইটিআইডি’র ল্যাব ইনচার্জ ডা. জাকির হোসেন, ফটিকছড়ি হেলথ কমপ্লেক্সের ডা. ইমরুল কায়সার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক মহব্বত হোসেন ও আফরোজা আক্তার তন্বী, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডা. তারেকুল মজিদ। এছাড়াও গবেষণাগারে কাজটি পরিচালনা করেন ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ ও কল্যাণ চাকমা, তানজিনা আক্তার, ইসমাইল আল রশিদ। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন অধ্যাপক এসএম রফিকুল ইসলাম ও ডা. এএম জুনায়েদ সিদ্দিকী।
গবেষণার সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানে ছিল স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন। গবেষণার সময়কাল ছিল চলতি বছরের জুলাই থেকে নভেম্বরের ২ য় সপ্তাহ পর্যন্ত, চট্টগ্রামের ৬টি সেবা প্রদানকারী কেন্দ্রে। গবেষকগণ মনে করেন, হটস্পট চিহ্নিত জায়গায় পানি জমাট হয়ে থাকা এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ।