বাসস
  ০৫ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪০

প্রতিরোধক টিকা ও নিয়ম কানুন মেনে জরায়ূমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব

ঢাকা, ৫ আগস্ট, ২০২৪ (বাসস):  তেপ্পান্ন বছর বয়সী মাজেদা বেগমের শরীরটা গত কয়েকদিন ধরেই খারাপ। মূলত তার কিছুদিন ধরে দুর্গন্ধযুক্ত সাদাস্রাব হচ্ছে। শরীরটা তাই দুর্বল। স্বামীকে বিষয়টি জানালে তিনি মাজেদাকে সেই দিনই এক গাইনোলজিষ্টের কাছে নিয়ে যান। গাইনোলজিষ্ট কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বুঝতে পারেন মাজেদা জরায়ুমূখ ক্যান্সারে আক্রান্ত। তবে তা প্রাথমিক পর্যায়ে।
সূত্র মতে, প্রতিবছর জরায়ুমুখ ক্যানসারে যত নারী আক্রান্ত হন, তাঁদের অর্ধেকের বেশিই মারা যান। বাংলাদেশে গাইনোকোলজিক্যাল ক্যানসারে মাতৃমৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ এটি। প্রথম কারণ ব্রেস্ট ক্যানসার। ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে এর জন্য দায়ী এইচপিভি ভাইরাস। এটি যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়। আর এইচপিভি ভাইরাস ছড়ায় পুরুষদের মাধ্যমে। কাজেই নারী-পুরুষ সবাইকে সচেতন হতে হবে।
আলোক হেলথ হাসপাতাল লিমিটেড এর সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান বলেন জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণের মধ্যে রয়েছে দুর্গন্ধযুক্ত সাদা ¯্রাব, অনিয়মিত রক্তস্রাব, সহবাস-পরবর্তী রক্তস্রাব। ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সে এটা বেশি হয়।
প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে চিকিৎসায় এই রোগ সেরে যায়। প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগ নির্ণয়ের নানা পদ্ধতি আছে। এর মধ্যে পেপস স্মেয়ার ও ভায়া অন্যতম। প্রতি তিন বছর পরপর পরীক্ষা করতে হয়। অ্যাডভান্স অবস্থায় শনাক্ত হলে অস্ত্রোপচার অথবা রেডিওথেরাপি অথবা দুটি দিয়েই চিকিৎসা করা হয়।
তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বে নারীদের যৌনাঙ্গ ক্যানসারের মধ্যে জরায়ু ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বাধিক। বাংলাদেশসহ অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোও এ ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। জরায়ুমুখ বা সারভাইকাল ক্যানসারের মতো এ রোগের কোনো প্রতিরোধক টিকা নেই। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্তকরণ ও সঠিক চিকিৎসকের কাছে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ এ রোগ প্রতিহত করার একমাত্র উপায়।
গাইনি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. রাহেলা খাতুন বলেন বেশি বয়স্ক নারী; বিশেষত মেনোপজের পর, স্থুলকায় নারী, ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশনের রোগী, যাঁদের সন্তান নেই বা সন্তান কম, যারা হরমোন থেরাপি নিচ্ছেন এসব নারীরাই মূলত জরায়ুমুখ ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকেন।
তিনি বলেন,  যাদের  পরিবারে জরায়ু ক্যানসার, কোলন ক্যানসারের রোগী আছেন (জেনেটিক মিউটেশনের কারণে) তারাও ঝুঁকিতে থাকেন।
প্রতিরোধক টিকা দিয়ে এবং কিছু নিয়মকানুন মেনে প্রাণঘাতী জরায়ুমুখ ক্যানসার থেকে বাঁচা যায়। রিস্ক ফ্যাক্টর এড়ানো, জেনিটাল হাইজিন মেইনটেন করা, স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের প্রতি সৎ থাকলে এই বিপর্যয় থেকে বাঁচা যায়।
তিনি বলেন, টিকার টার্গেট গ্রুপ নয় থেকে ১৪ বছর বয়সী কন্যাশিশু, যাদের এখনো সেক্সুয়াল এক্সপোজার হয়নি। কমপ্লিমেন্টারি ২৬ বছর বয়স পর্যন্ত। তা ছাড়া সচরাচর যৌনমিলন করেন, এমন যে কেউ দিতে পারবেন। ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত দুই ডোজ। ১৫ বছরের পর তিন ডোজ। গর্ভাবস্থায়ও এই টিকা দেওয়া যাবে, তবে নতুন করে দিতে হলে গর্ভধারণের পর দিলেই ভালো। যৌনমিলন করে থাকলে টিকা দেওয়ার আগে স্ক্রিনিং করে নিতে হবে। অল্পবয়সী মেয়েদের স্ক্রিনিং দরকার নেই।
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান জরায়ুমুখ ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের অনেক পদ্ধতি আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভায়া, প্যাপস, এইচপিভি ডিএনএ ও কলপোস্কপি। সব পরীক্ষার উদ্দেশ্যই হচ্ছে জরায়ুমুখের ক্যানসারের আগের লক্ষণ আছে কি না, নির্ণয় করা। কলপোস্কপি এক বিশেষ ধরনের প্রক্রিয়া। এতে মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে জরায়ুমুখকে ম্যাগনিফাই করে কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কি না, দেখা হয়। দরকার হলে বায়োপসি নেওয়া হয়।
২১ থেকে ৬৫ বছর বয়সী নারীদের জরায়ুমুখের ক্যানসার বা ক্যানসারের পূর্বলক্ষণ আছে কি না, সে জন্য জাতীয় নীতিমালা হচ্ছে প্রতি তিন থেকে পাঁচ বছর পরপর জরায়ুমুখ স্ক্রিনিং করে দেখা। যারা জরায়ুমুখ ক্যানসারের স্ক্রিনিংয়ের জন্য আসেন, তাদের ব্রেস্ট ক্যানসারও পরীক্ষা করে দেওয়া হয়। নারীরা যাতে নিজে নিজের স্তন পরীক্ষা করে দেখতে পারেন, সে পদ্ধতি শিখিয়ে দেওয়া হয়।
টিকার পরও কি স্ক্রিনিং দরকার। কেননা, টিকা দেওয়া হয় যে ভাইরাস স্ট্রেইনের বিপরীতে, তার বাইরে অন্য স্ট্রেইন দিয়েও ক্যানসার হতে পারে।