শিরোনাম
//শরিফুল ইসলাম//
নড়াইল, ২২ নভেম্বর, ২০২৪(বাসস): নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ভোগান্তিতে রোগীরা।হাসপাতালে অর্ধেক চিকিৎসক নেই। শয্যা সংখ্যার প্রায় তিনগুণ রোগী ভর্তি হয়। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্স। সহ-সেবক, পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং স্ট্রেচার বহনকারীসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অধিকাংশ পদই শূন্য পড়ে আছে। হাসপাতাল চত্ত্বরে রয়েছে সুপেয় পানির অভাব। এতসব সংকটের মধ্য দিয়েই চলছে হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে নড়াইল জেলায় রূপান্তরিত হলে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি চালু হয়। পরে ২০০৭ সালে এটিকে ১০০ শয্যায় রূপান্তরিত করা হয়। এখনও সেই ১০০ শয্যায় সেবা কার্যক্রম চলছে নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতাল। তবে ১০০ শয্যার হাসাপাতালে বিশেষজ্ঞসহ মোট চিকিৎসক থাকার কথা ৪০ জন, আছেন ২০ জন বাকি অর্ধেক পদ শূন্য।
দীর্ঘদিন ধরে সিনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিওলজি, সার্জারি ও এ্যানেসথেশিয়া সহ ১৮ পদে চিকিৎসক নেই। সহ-সেবক, হিসাব রক্ষক, কার্ডিওগ্রাফার ও ড্রাইভারসহ তৃতীয় শ্রেণির ৪০ জন কর্মচারীর বিপরীতে আছে ২৩ জন।
চতুর্থ শ্রেণির অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, স্ট্রেচার বহনকারী ও ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট পদে ২৩ জন থাকার কথা, আছে মাত্র ৬ জন। তবে হাসপাতালটিতে নার্সের তেমন কোনো সংকট নেই। আউটসোর্সিং কর্মীরও সংকট নেই।
১০০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ রোগী ভর্তি থাকে। যেখানে ১০০ শয্যার জন্য প্রয়োজনীয় জনবলই হাসপাতালে নেই, সেখানে তিনগুণ রোগীর চাপ সামলাতে হয় চিকিৎসক ও নার্সদের।
সরেজমিন গতকাল বুধবার দেখা যায়, সকাল থেকে টিকিট কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন। চিকিৎসকের কক্ষের সামনেও একই অবস্থা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে রোগীদের। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে অনেকেই মেঝেতে বসে আছেন।
চিকিৎসা নিতে আসা হান্নান সিকদার নামে একজন বলেন, 'জ্বর, মাথায় যন্ত্রণা ও কাশির সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসছি। দুই ঘণ্টা ধরে বসে আছি এখনও সিরিয়াল পায়নি, অনেক ভিড়। আরও মনে হয় এক-দেড় ঘণ্টা লাগবে সিরিয়াল পেতে।
আরেক রোগী মুনিয়া খানম বলেন, টিকিট কাটতে ঘন্টাপার, এর পর ডাক্তার সিরিয়াল পেতে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। রোগীরা এতেই আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যায়।
হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা দেখা যায়, ১০০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা তিন শতাধিক। প্রতিটি ওয়ার্ডে রোগীর শয্যারে চেয়ে বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। কোনো ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যার দ্বিগুণ, কোনোটায় তিনগুণ, আবার কোনোটায় রয়েছে প্রায় পাঁচ গুন বেশি রোগী। মহিলা ওয়ার্ডের বারান্দার দুই পাশে লাইন দিয়ে মেঝেতে বিছানা পেতেছেন রোগীরা। সেই লাইন চলে গেছে পুরুষ ওয়ার্ডের বারান্দা শেষ প্রান্ত পর্যন্ত। তবুও জায়গা না পেয়ে অনেকেই চলাচলের পথের পাশে বিছানা পেতে সেবা নিচ্ছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইতি খানম বলেন, হাসপাতালে এসেছি চিকিৎসা নিতে বেড না পেয়ে নিচেই চিকিৎসা চলছে। কিছু ওষুধ এখান থেকে দিচ্ছে আবার বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।
রোগী শহিদুল আলম বলেন, হাসপাতালের ভিতরে থাকা টিউবওয়েল দুটির পানি পানযোগ্য নয়। ফলে গেটের বাইরের টিউবওয়েল থেকেই সবাই পানি নেয়, অথবা কেনা পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহিনুর খাতুন বলেন, ১০০ শয্যার জন্য যে কয়জন নার্স প্রয়োজন তা হাসপাতালে রয়েছে৷ কিন্তু প্রতিদিন রোগী থাকে শয্যা সংখ্যার প্রায় তিনগুণ। যা সামলানো নার্সদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে যায়৷ তারপরও আমরা চেষ্টা করি সবাইকে ভালো সেবা দেওয়ার জন্য।
হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. আলিমুজ্জামান সেতু বলেন, শিশু ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যার মাত্র ১৫টি, সেখানে সব সময় দুই থেকে তিন গুন রোগী ভর্তি থাকে। আমাদের কষ্ট হলেও চেষ্টা করছি ভালো সেবা দেওয়ার জন্য।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক দায়িত্বপ্রাপ্ত (আরএমও) সুজল কুমার বকশী বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। প্রতিদিন ধারণক্ষমতার প্রায় তিনগুণ রোগী সামলাতে হয়, সেখানে জনবল অর্ধেকেরও কম। প্রতিটা সেক্টরেই জনবলের স্বল্পতা। এ জনবল নিয়েই আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি ভালো সেবা দিতে।
তিনি আরও বলেন, ভিতরের টিউবওয়েলগুলো অনেক আগে করা, বাইরে একটি ডিপ টিউবওয়েল আছে, ওখান থেকেই সবাই পানি আনে। এছাড়াও ভিতরে পানি সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা আছে। আমরা চিকিৎসকসহ জনবল সংকটের বিষয়ে নিয়মিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করছি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুল গফফার বলেন, আমাদের চিকিৎসকসহ জনবল সংকট রয়েছে। সমস্যার বিষয়টি নিয়মিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করছি। আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য।