বাসস
  ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭:৫৪
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:২৪

বিএসএমএমইউ’র গবেষণা অনুযায়ী দেশে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লাখে ১০৬ জন

আজ বিএসএমএমইউ’র সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে জনসংখ্যা ভিত্তিক ক্যান্সারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএসএমএমইউ’র বৃহত্তর গবেষণার ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ছবি : বিএসএমএমইউ

ঢাকা, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫(বাসস) : বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি এক লাখে ক্যান্সারের আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০৬ জন। এছাড়াও প্রতি বছর এ রোগে নতুন করে ৫৩ জন আক্রান্ত হচ্ছেন। দেশে মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশই ক্যান্সারের রোগী।

দেশে জনসংখ্যা ভিত্তিক ক্যান্সারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ)  বৃহত্তর গবেষণার ফলাফলে এ চিত্র পাওয়া  গেছে। 

আজ বিএসএমএমইউ’র সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে ‘বাংলাদেশে ক্যান্সারের বোঝা : জনসংখ্যা ভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। 

অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন প্রধান গবেষক ও পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান।

তিনি জানান, ‘বাংলাদেশে ৩৮ ধরণের ক্যান্সারের রোগী পাওয়া গেছে। এর মধ্যে স্তন, মুখ, পাকস্থলী, শ্বাসনালি এবং জরায়ু মুখের ক্যান্সার রোগীর সংখ্যাই বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে ৯৩ শতাংশ রোগীর বয়স ১৮ থেকে ৭৫ বছর। ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ২ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু এবং ৫ দশমিক ১ শতাংশ রোগীর বয়স ৭৫ বছরের বেশি।’

মো. খালেকুজ্জামান জানান, ক্যান্সার বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি। বাংলাদেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি (পিবিসিআর) না থাকায় প্রতিবেশী দেশগুলোর তথ্য ব্যবহার করে ক্যান্সারের পরিস্থিতি অনুমান করতে হয়। এর ফলে বাংলাদেশে ক্যান্সারের সঠিক পরিস্থিতি জানার ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা আছে। তাই জনসংখ্যা ভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্যান্সারের পরিস্থিতি নির্ণয় করা জরুরি হয়ে পড়েছে বিধায়  এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়।  

তিনি আরও জানান, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় ২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়ে আসছে। ২ লাখ মানুষের ওপর এই গবেষণা পরিচালন করা হয়। এই গবেষণায় প্রতিটি বাড়িতে বিশেষভাবে তৈরি করা ইন্টারনেট ভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধন সফটওয়্যার করে সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহণ করা হয়েছে। এক বছর পূর্তিতে একই পরিবারের ফলোআপ পরিদর্শন ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়েছে।   

গবেষণায় প্রাপ্ত ফলে দেখা গেছে, দেশে ৫টি প্রধান ক্যান্সার হল স্তন, মুখ, পাকস্থলী, শ্বাসনালী এবং জরায়ু মুখের ক্যান্সার। পুরুষদের ৫টি প্রধান ক্যান্সার হল শ্বাসনালী, পাকস্থলী, ফুসফুস, মুখ ও খাদ্যনালীর ক্যান্সার। নারীদের  ৫টি প্রধান ক্যান্সার হল স্তন, জরায়ুমুখ, মুখ, থাইরয়েড এবং ওভারি। পুরুষ ক্যান্সার রোগীদের ৭৫ দশমিক ৮ শতাংশ ধুমপায়ী এবং ধোঁয়াহীন পান, জর্দ্দা, তামাক সেবনকারী ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ। 

এতে আর বলা হয়, ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ৬০ দশমিক ৬ শতাংশ নারী ধোঁয়াহীন পান, জর্দ্দা, তামাক সেবনকারী। ৪৬ শতাংশ রোগীর ক্যান্সারের সাথে ই তামাক সেবনের সম্পর্ক রয়েছে। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ কমবাইন্ড চিকিৎসা নিয়েছে এবং ৭ দশমিক ৪ শতাংশ রোগী কোনো চিকিৎসাই নেয়নি। 

বিএসএমএমইউ  উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর  অধ্যাপক ডা. সৈয়দ জাকির হোসেন বক্তব্য রাখেন। 

গবেষণার ফলাফল প্রকাশনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুল হক।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সায়েদুর রহমান বলেন, নিত্য নতুন জ্ঞান তৈরিতে গবেষণার বিকল্প নাই। বিএসএমএমইউ থেকে সেই গবেষণায় পরিচালনা করা উচিত যা রোগীদের কল্যাণে  আসে। যে সকল গবেষণা দেশের মানুষের, দেশের রোগীদের উপকার হবে সেক্ষেত্রে সরকারের সহায়তা অব্যাহত থাকবে। 

উপাচার্য  অধ্যাপক শাহিনুল আলম বলেন, গণআকাঙ্খা পূরণ করে-এমন গবেষণার জন্য ফান্ডের কোনো সমস্যা হবে না। বিএসএমএমইউর উদ্যোগে পরিচালিত বাংলাদেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি থেকে যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে তা দেশের মানুষের ক্যান্সার প্রতিরোধ, প্রতিকার ও ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় বিরাট ভূমিকা রাখবে। একই সাথে এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশে ক্যান্সার নিয়ে গবেষণার বহুমুখী দ্বার উন্মোচন করেছে। 

গবেষণায় প্রাথমিকভাবে ৪৬ হাজার ৬৩১টি পরিবারের মধ্যে থেকে ২ লাখ ১ হাজার ৬৬৮ জন অন্তর্ভুক্ত হন, যার মধ্যে ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী। 

গবেষণা অনুযায়ী, শীর্ষ ৫টি ক্যান্সার ছিল স্তন ক্যান্সার (১৬ দশমিক ৮ শতাংশ), ঠোঁট ও মুখগহ্বরের ক্যান্সার (৮.৪ শতাংশ), পাকস্থলীর ক্যান্সার (৭ শতাংশ), কণ্ঠনালীর ক্যান্সার (৭ শতাংশ) এবং জরায়ু ক্যান্সার (৫.১ শতাংশ)।

নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার ছিল সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সার ৩৬.৪ শতাংশ। নারী রোগীদের মধ্যে ১৯ শতাংশ প্রজনন অঙ্গের ক্যান্সারে আক্রান্ত জরায়ু ক্যান্সার ১১ দশমিক ১ শতাংশ, ঠোঁট ও মৌখিক গহ্বরের ক্যান্সার ১০ দশমিক ১ শতাংশ, থাইরয়েড ৭ দশমিক ১ শতাংশ এবং ডিম্বাশয় ৫ শতাংশ এবং গর্ভাশয় ৩ শতাংশ। 

ক্যান্সার রোগীদের আরও কিছু রোগ  হাইপারটেনশন (১৭ শতাংশ), ডায়াবেটিস (১১ শতাংশ), হৃদরোগ (৬ শতাংশ), ক্রনিক কিডনি রোগ (৩ শতাংশ) এবং স্ট্রোক (২ শতাংশ)। 
৭৫ দশমকি ৮ শতাংশ পুরুষ ক্যান্সার রোগী ছিলেন ধূমপায়ী। ৪৬ শতাংশ ক্যান্সার রোগী তামাক সেবন করেন না।

ক্যান্সার রোগীদের ৬০ শতাংশ একাধিক চিকিৎসা যেমন অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপি নিয়েছেন। ৭ দশমিক ৪ শতাংশ রোগী  রোগ নির্ণয়ের পর কোনো চিকিৎসা পাননি। ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩ হাজার ৪১১টি পরিবারের ৫৮ হাজার ৫৩৯ জন অংশগ্রহণকারীকে ফলো-আপ করা হয়েছে।

নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত শীর্ষ ৩টি ক্যান্সার  ফুসফুসের ক্যান্সার (১৬ দশমিক ১ শতাংশ), যকৃতের ক্যান্সার (১২ দশমিক ৯ শতাংশ) এবং কণ্ঠনালীর ক্যান্সার (১২ দশমিক ৯ শতাংশ)।