বাসস
  ০৫ মার্চ ২০২৫, ১৫:৫৩

রাঙ্গাবালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ বন্ধ : দ্বীপবাসীর স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালিতে নির্মাণাধীন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় দ্বীপবাসীর স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তিতে চরম অনিশ্চয়তা। ছবি: বাসস

মো.এনামুল হক এনা

পটুয়াখালী, ৫ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : জেলার অন্যতম দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালিতে নির্মাণাধীন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় দ্বীপবাসীর স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তিতে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ২০২৩ সালে শুরু হওয়া এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনের অসমাপ্ত নির্মাণকাজ নয় মাস ধরে বন্ধ আছে। অযত্ন অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার নির্মাণ সামগ্রী। 

উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। ৩৪৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপে প্রায় এক লক্ষ দশ হাজার মানুষের বসবাস থাকলেও নেই পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা। এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ শুরু করলেও গত ৯ মাস ধরে নির্মাণ কাজ থেমে আছে। এতে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন দুর্গম দ্বীপের বাসিন্দারা। দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালু করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

জানা যায়, স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও রাঙ্গাবালী উপজেলার মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে সেখানে কোনো হাসপাতাল গড়ে ওঠেনি। কেউ অসুস্থ হলে নদী ও সমুদ্র বেষ্টিত রাঙ্গাবালী থেকে রোগী নিয়ে পটুয়াখালীর মূল ভূখণ্ডে যেতে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। বিশেষ করে রাতের বেলা এই অঞ্চলের মানুষের নদী পার হওয়া প্রায় অসম্ভব। এছাড়া বৈরী আবহাওয়া কিংবা বর্ষার মৌসুমে এ অঞ্চলের মানুষের সাথে মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন থাকে। 

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, দৃশ্যমান কাজের মধ্যে চারতলা হাসপাতাল ভবনের তিনটি ছাদ এবং নিচতলার আংশিক কিছু ওয়ালের কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়াও দুটি কোয়ার্টার ভবন ও একটি সাব-স্টেশন, চলাচলের পথ, বাউন্ডারি ওয়ালসহ বেশ কিছু কাজ আংশিক করে বাকিটা  বন্ধ রয়েছে। বহিরাংশের সকল রডগুলো মরিচা পরে কালো হয়ে ক্ষয় হতে শুরু করেছে। প্রতিটি তলায় ভীম-কলামের ঢালাই কাজে পরিপূর্ণ ভাইব্রেশন না হওয়ায় ফাঁকা স্থানে পরবর্তীতে প্লাস্টার করা হয়। দৃশ্যমান ইটের গাঁথুনিতে নিম্নমানের ইট ব্যবহৃত হয়েছে। ভবনের নিচে পাইলিং থেকে প্রথম তলার ফ্লোর পর্যন্ত ফাঁকা জায়গায় বালু ভরাট হয়নি। এছাড়াও সাব স্টেশন ও কোয়ার্টার ভবনের শুধুমাত্র সিঁড়িসহ কিছু আংশিক কাজ করে বাকিটা অসম্পূর্ণ রাখা হয়েছে।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সংশ্নিষ্ট দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাঙ্গাবালী উপজেলার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে  ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ একর জমির উপর একটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এর প্রেক্ষিতে প্রথম লটে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট রাঙ্গাবালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রকল্পের জন্য ২০২৩ সালের ১০ এপ্রিল তারিখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একেএ-পিসি (জেভি) আবুল কালাম আজাদ, প্রাইম কনস্ট্রাকশনকে ১২ কোটি ৬৭ লক্ষ ২৮ হাজার টাকার কার্যাদেশ দেয়া হয়। এক বছর মেয়াদের কার্যাদেশে এ প্রকল্পের ৫৩ দশমিক ৬০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়। 

দ্বিতীয় লটে একই সালের মে মাসের ৪ তারিখে নার্স ডরমেটরি ভবন, সাব স্টেশন ভবন, উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার কর্মকর্তার ভবন, টিউবয়েলসহ এক্সটার্নাল সিভিল ও ইলেক্ট্রিক্যাল কাজের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান একেএ-পিসি-এমএই (জেভি) আবুল কালাম আজাদ, প্রাইম কনস্ট্রাকশন, মেসার্স আয়ান এন্টারপ্রাইজকে এক বছর মেয়াদে ৮ কোটি ১৬ লাখ ৫৪ হাজার টাকার কার্যাদেশ দেয়া হয়। এই কাজের অগ্রগতি ৫৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ । কার্যাদেশের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর জুলাই ২০২৪-এর প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রকল্প কাজ বন্ধ রয়েছে।  

পটুয়াখালী স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আলতাফ হোসেন বাসসকে বলেন, ‘শুধু রাঙ্গাবালী হেলথ কমপ্লেক্স নয়, এক্সএন অফিস, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ সারা বাংলাদেশে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এমন ১১৪টি কাজ আছে। আমরা অপারেশন প্ল্যানে কাজ করি। এটি চতুর্থ অপারেশনাল প্ল্যানের কাজ, যা ২০২৪ সালের জুন মাসে শেষ হয়েছে।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘অপারেশনাল প্ল্যানের আওতায় সারাদেশে যত অসম্পূর্ণ কাজ আছে তা সব পঞ্চম অপারেশনাল প্ল্যানে যাওয়ার কথা। কিন্তু সরকার পরিবর্তন হওয়াতে এখন পর্যন্ত পঞ্চম অপারেশনাল প্ল্যান অনুমোদন হয়নি। আর অনুমোদন না হওয়াতে ওই প্রজেক্টে কোনো টাকা নেই। এমতাবস্থায় পঞ্চম অপারেশনাল প্লান অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত এসব কাজ করা সম্ভব হবে না।

রাঙ্গাবালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনসহ অসমাপ্ত এসব প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার জন্য সরকারের পঞ্চম অপারেশনাল প্ল্যান আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন বলেন, ‘এখন পঞ্চম অপারেশনাল প্ল্যানের কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে সরকার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি)-এর ভিত্তিতে বাজেট বরাদ্দ দিয়ে অবশিষ্ট কাজ সমাপ্ত করতে পারে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর এসব প্রকল্পের অনুমোদন হয়।’ ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এই ১১৪ টি প্রকল্পের অনুমোদন হবে বলে  তিনি আশা প্রকাশ করেন। 

এদিকে রাঙ্গাবালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় হতাশ এলাকার মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা ফরিদা বেগম বাসসকে বলেন,‘ রাঙ্গাবালীতে একটা হাসপাতাল নাই, আমাদের খুবই দুর্গতি। চারপাশে নদীর জন্য আমরা বিপদগ্রস্থ মানুষ। একটা মানুষ অসুস্থ হয়ে মরে গেলেও নদীর জন্য আমরা পটুয়াখালীর ওপার উঠতে পারি না। এই হাসপাতালটা আমাদের খুবই প্রয়োজন। এটা চালু হলে আমাদের দুরবস্থা আর থাকবে না। 

কাজ কেন থেমে আছে জানি না। তবে সরকারের কাছে অনুরোধ হাসপাতাল যেন দ্রুত চালু করে।’

এ বিষয়ে পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডাঃ এস এম কবির হাসান বলেন, ‘রাঙ্গাবালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালুর লক্ষ্যে নির্মাণাধীন কাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এটি যাতে দ্রুত চালু করা হয় এজন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।’