শিরোনাম
চট্টগ্রাম, ৪ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। পবিত্র ঈদুল ফিতরের সরকারি বন্ধে গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদেরকে নরমাল ডেলিভারি করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পরিবার পরিকল্পনা টিম। গত ২৮ মার্চ থেকে গতকাল ৩ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহে চট্টগ্রাম জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের অধীন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে ১০৭টি নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন করেছেন। টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে তারা বদলে দিয়েছেন মানুষের ধারণা।
চট্টগ্রাম জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক লিকসন চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরের সরকারি বন্ধে আমাদের টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের জন্য পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক যাবতীয় সেবা চালু ছিল। গত ২৮ মার্চ থেকে গতকাল ৩ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহে চট্টগ্রাম জেলা পরিবার পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের অধীন নগরীর কর্নেলহাট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, প্রত্যেক ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে মোট ১০৭টি নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি শিশু এবং মা সুস্থ রয়েছেন।
তিনি জানান, নরমাল ডেলিভারি কার্যক্রমের পাশাপাশি নগরীর কর্নেলহাট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে এএনসি সেবা (প্রসবোত্তর চেকআপ) পেয়েছে ১৫ জন ও পিএনসি সেবা (প্রসব পরবর্তী) পেয়েছে ১০ জন। অন্যান্য মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং প্রত্যেক ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ডেলিভারি সেবা, এএনসি ও পিএনসি সেবাসহ পরিবার পরিকল্পনা সেবাসমূহ চালু ছিল।
তিনি জানান, ঈদের ছুটিতে ১০৭টি নরমাল ডেলিভারীর মধ্যে শুধু কর্নেলহাট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে নরমাল ডেলিভারী হয়েছে ১০টি। এএনসি সেবা পেয়েছে ১৫ জন ও পিএনসি সেবা পেয়েছে ১০ জন। এছাড়া সীতাকুন্ডে ৩টি, মিরসরাইয়ে ২৫টি, চন্দনাইশে ৯টি, ফটিকছড়িতে ৪টি, রাঙ্গুনিয়ায় ৬টি, আগ্রাবাদে ২টি, কর্ণফুলীতে ১০টি, পটিয়ায় ২টি, পাঁচুরিয়ায় ১৩টি, বোয়ালখালীতে ৩টি, আনোয়ারায় ৩টি, বাকলিয়ায় ১৪টি, বাঁশখালী ১টি ও সাতকানিয়ায় ২টি নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন করা হয়।
পরিবার পরিকল্পনা জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বেগম সাহান ওয়াজ জানান, কৈশোর-বান্ধব স্বাস্থসেবা নিশ্চিতকরণ, বাল্যবিবাহ রোধ, গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদেরকে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও আন্তরিকভাবে কাজ করছে। ফলে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে।
তিনি বলেন, ঈদুল ফিতরের সরকারি বন্ধে পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত যাবতীয় সেবা চালু ছিল। শিশুর বাসযোগ্য বাংলাদেশ বিনির্মাণে কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি সুস্থ মা ও সন্তান অত্যন্ত জরুরি। কৈশোর-বান্ধব স্বাস্থ্যসেবার এ অগ্রযাত্রায় সবাইকে সামিল হওয়ার আহবান জানান তিনি।
উপ-পরিচালক বেগম সাহান ওয়াজ আরও বলেন, নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসব করতে প্রসূতিদের উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণায় তারা বিভিন্ন কৌশলও কাজে লাগিয়েছেন। ডেলিভারি না হওয়া পর্যন্ত মাঠকর্মীদের মাধ্যমে চলতে থাকে কাউন্সেলিং আর ফ্রি চেকআপ। প্রসূতি কার্ড ও নরমাল ডেলিভারি করাতে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষক, চেয়ারম্যান-মেম্বার, ইমাম ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন এনজিও’র স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছানো হয় প্রসূতি মায়েদের কাছে।
অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে রাঙ্গুনিয়ার পদুয়া ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে জেসমিন আকতার নামে এক সুবিধাভোগী প্রসূতি জানান, দেরি করে সন্তান নেয়ায় ও এলাকার কিছু লোকের কথায় ভয় পেয়েছিলাম। অনেকে ক্লিনিকে সিজার করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের স্থানীয় মাঠকর্মী এবং চিকিৎসকরা অভয় দিয়ে দায়িত্ব নিলে এখানে ভর্তি হই। এখানে নরমাল ডেলিভারিতে আমার সন্তান জন্মলাভ করেছে। আমি এবং ছেলে দু’জনই সুস্থ রয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।