শিরোনাম
ঢাকা, ৬ অক্টোবর, ২০২৩ (বাসস) : বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ইতিহাস যতটা উচিৎ ছিল ততটা সমৃদ্ধ নয়। কিন্তু দেরিতে হলেও চোখে পড়ার উন্নতি করেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। বড় কিছু করার লক্ষ্য নিয়ে আগামীকাল বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে টাইগাররা। কোন দলের বিপক্ষ বাংলাদেশের জয় এখন আর আপসেট নয়। ২০১৫ সাল থেকে পারফরমেন্সের বিচারে বাংলাদেশের কাছ থেকে সাফল্যের প্রত্যাশা অনেকখানি বেড়েছে।
গত ছয়টি বিশ্বকাপে (১৯৯৯-২০১৯) এখন পর্যন্ত ৪২টি ম্যাচ খেলে ১৪টি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। কিছু হতাশাজনক হারের সাথে শ্বাসরুদ্ধকর জয়ও ছিলো টাইগারদের। কিন্তু টানা চার আসরে তিনটি ম্যাচ জয়ের রেকর্ডও আছে বাংলাদেশের।
১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ অংশগ্রহণের সাথে ছিল জড়িত ছিল আবেগ। ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয়ের ফলে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মেগা ইভেন্টে খেলার স্বপ্ন বাস্তবে রুপ নেয়। সেবার কেবলমাত্র ভালো ক্রিকেট খেলা ছাড়া বাংলাদেশের কাছ থেকে বড় কোন প্রত্যাশা ছিল না।
বিশ্বকাপের মত আসরে সহযোগী দেশ স্কটল্যান্ডকে হারানোর প্রত্যাশাই ছিলো সবচেয়ে বেশি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের পাশাপাশি স্বপ্নেও কল্পনা করেনি ঐ আসরের রানার্স-আপ পাকিস্তানের মত দলকে হারিয়ে অভিষেক বিশ^কাপে দুই ম্যাচ জিতবে বাংলাদেশ।
নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচ খেলে দুই ম্যাচে জয় তুলে নেয় বাংলাাদেশ। ঐ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা পারফরমার ছিলেন জাতীয় দলের বর্তমান প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। ৪ ম্যাচ খেলে দু’টি হাফ সেঞ্চুরিতে সর্বোচ্চ ১৪০ রান করেছিলেন তিনি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো অপরাজিত ৬৮ এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়াকু ৫৩ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন নান্নু। বল হাতে ৪ উইকেটও নেন তিনি। তৎকালীন সময়ে দেশ সেরা খেলোয়াড় হবার পরও বিশ্বকাপের প্রাথমিক দলে ছিলেন না নান্নু। দলে সুযোগ না হওয়ায় সারা দেশ জুড়ে ক্ষোভের জাগরণ ঘটে এবং সাধারণ জনসাধারণের ক্ষোভ ঠেকাতে নান্নুকে দলে ফেরাতে জাহাঙ্গীর আলমকে ঘোষিত স্কোয়াড থেকে বাদ দিতে বাধ্য হন তৎকালীন বিসিবি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। পরবর্তীতে এটি পরিনত হয় রূপকথায়।
কোন উপায় থাকলে ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ স্মৃতি হয়তো মুছে ফেলতে চাইতো বাংলাদেশ।
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে অনুষ্ঠত বিশ্বকাপে কানাডা ও কেনিয়ার কাছে ম্যাচ হেরে বড় লজ্জার মুখে পড়ে বাংলাদেশ। ঐ বছর ঈদ-উল-ফিতরের আগেরদিন প্রথম বিশ^কাপ খেলতে নামা অভিষেক হওয়া কানাডার কাছে ম্যাচে হারে বাংলাদেশ। তৎকালীন সময়ে টাইগারদের চিরপ্রতিন্দ্বন্দি কেনিয়ার কাছে নিজেদের শেষ ম্যাচে হেরে দুঃস্বপ্নের বিশ^কাপের ইতি টানে টাইগাররা।
২০০৩ সালের দুঃস্বপ্নের বিশ্বকাপ বাংলাদেশের জন্য বড় শিক্ষার আসর ছিলো। সেই দুঃস্বপ্নের বিশ^কাপের পর দেশের ক্রিকেট ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে কোচিং স্টাফদের পরিবর্তনের পর খেলোয়াড়দের তালিকাতেও রদবদল হয়। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপের দুঃস্মৃতি মুছে ফেলার জন্য তরুণ খেলোয়াড়দের দিকে নজর দেয় বাংলাদেশ। একাডেমি এবং বয়স ভিত্তিক খেলোয়াড়দের দলে ভেড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারন করে তারা। আর সেটাই ছিল সময়োপযোগী সিদ্বান্ত।
ভারতের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয় দিয়ে ২০০৭ সালের বিশ^কাপে যাত্রা করে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে ঐ জয়কে যে কেউ সবচেয়ে বড় অঘটন বললেও পোর্ট-অফ-স্পেনে বাংলাদেশ যেভাবে জিতেছে সেটি ছিলো ঐতিহাসিক।
ভারতের পর বারমুডাকে হারিয়ে ‘বি’ গ্রুপের রানার্স আপ হয়ে সুপার এইটে খেলার টিকিট পায় বাংলাদেশ। এমন ফর্মেটেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল সে আসর। এরপর সুপার এইটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ অবিস্মরণীয় করে রাখে বাংলাদেশ। যৌথ আয়োজক হওয়ায় ২০১১ সালের বিশ্বকাপে আকাশ ছোয়া প্রত্যাশা ছিলো বাংলাদেশের কাছে। এখনকার মতো বড় দলগুলোর বিপক্ষে ম্যাচ জেতার মতো ধারাবাহিক না হলেও প্রতিপক্ষের মাথাব্যথার কারন ছিলো টাইগাররা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দলের প্রথম জয়সহ ঐ আসরে তিন ম্যাচ জিতেও পরের রাউন্ডে উঠতে পারেনি টাইগাররা। কারন বাকি তিন ম্যাচে দলের পারফরমেন্স ছিল সাধারণ মানের । ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে বাজেভাবে হেরে প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে পড়তে হয় টাইগারদের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৫৮ রানে অলআউট হয় তারা। যা এখনও ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৮ রান গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। এই দু’টি ম্যাচে বাজে পারফরমেন্সের কারনে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠার সুবর্ন সুযোগ হাতছাড়া করে টাইগাররা।
২০১৫ সালের বিশ্বকাপ শুরুর আগে সবচেয়ে উন্নতি করা এক দলে পরিণত হয় বাংলাদেশ। ধারাবাহিক পারফরমেন্সে বড় দলগুলোকে হারানোর ক্ষেত্রে ভয়ংকর দলের তকমা পায় তারা। মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ইভেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের নক আউট ম্যাচে খেলতে নেমে নো-বল বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে তারা। বাংলাদেশের সকলেই এখনো বিশ্বাস করে শেষ আটের ঐ ম্যাচে ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠতে পারতো জাতীয় দল। যদি-না পেসার রুবেল হোসেনের একটি ডেলিভারিতে বির্তকিত নো-বল’এ জীবন পেয়ে ১২৬ বলে ১৩৭ রানের ম্যাচ জয়ী ইনিংস না খেলতেন রোহিত শর্মা।
আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিলো বাংলাদেশ।
সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত পারফরমেন্স ও তিনটি জয়ের পরও ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ বাংলাদেশের জন্য এখনও হতাশাজনক মিশন বলে লিপিবদ্ধ হয়েছে। যুগ যুগ ধরে চলা বিশ্বকাপে এমন পারফরমেন্স দেখিয়েছেন সাকিব, যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে কেউ করতে পারেনি। ব্যাটিংয়ে ৬০৬ রান এবং বোলিংয়ে ১১ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করেন এই বাঁ-হাতি। বিশ্বকাপের মত আসরে ৫শর বেশি রান করার পাশাপাশি ১০ উইকেট নিয়ে ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে নজির গড়েন সাকিব। একটি বাদে সব ম্যাচে ৫০এর বেশি রানের ইনিংস খেলেন সাকিব। ৫০এর নিচে থাকা ইনিংসটি ছিলো ৪১ রানের। ঐ আসরে ২টি সেঞ্চুরি এবং ৬টি হাফ সেঞ্চুরির ইনিংস ছিলো তার। বাংলাদেশের তিনটি জয়েই ম্যাচ সেরা ছিলেন সাকিব। কিন্তু একজনের একার পারফরমেন্সে অন্তত বিশ্বকাপের মত ট্রফি জয় করা সম্ভব নয়। সাকিবের দুর্ভাগ্য যে, বাংলাদেশের কেউ পুরোপুরিভাবে তাকে সাপোর্ট করতে পারেনি। কিন্তু ঐ আসরের সেমিফাইনালে খেলার ভালো সুযোগ ছিলো বাংলাদেশের।
এবারের বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাকিব। নিঃসন্দেহে এই আসরেও বাংলাদেশ অন্যতম ভরসার নাম সাকিব। কিন্তু প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলতে হলে সাকিবের সাথে অন্যদেরও জ¦লে উঠতে হবে। তা ছাড়া এটাই হতে যাচ্ছে সাকিবের শেষ বিশ্বকাপ। পাশাপাশি তারুণ্য নির্ভর দলটির প্রত্যাশাও অনেক বেশি।