শিরোনাম
চেন্নাই, ৮ অক্টোবর, ২০২৩ (বাসস) : অস্ট্রেলিয়ার ছুঁড়ে দেয়া ২০০ রানের টার্গেটের জবাব দিতে নেমে ২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই খাদের মধ্যে পড়ে যায় ভারত। এমন ভয়ংকর পরিস্থিতিতে চতুর্থ উইকেটে ২১৫ বলে ১৬৫ রানের জুটি গড়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতকে ৬ উইকেটের দুর্দান্ত জয় এনে দিয়েছেন বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুল। কোহলি ৮৫ রানে আউট হলেও, ৯৭ রানে অপরাজিত থাকেন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া রাহুল।
ভারতীয় স্পিনারদের দুর্দান্ত নৈপুন্যে ৪৯ দশমিক ৩ ওভারে ১৯৯ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেন স্টিভেন স্মিথ। এ ছাড়া ডেভিড ওয়ার্নার করেন ৪১ রান। ভারতের তিন স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা ৩টি, কুলদীপ যাদব ২টি ও রবীচন্দ্রন অশি^ন ১টি উইকেট নেন। জবাবে ৫২ বল বাকী রেখেই জয়ের স্বাদ নেয় ভারত।
চেন্নাইয়ে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে দলীয় ৫ রানে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার মিচেল মার্শকে খালি হাতে বিদায় দেন পেসার বুমরাহ।
এরপর ভারতের বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন আরেক ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও তিন নম্বরে নামা স্মিথ। ১১তম ওভারে ৫০ রানে পৌঁছায় অস্ট্রেলিয়া। ইনিংসের সপ্তম ওভারের চার মেরে বিশ^কাপে দ্রুততম ১ হাজার রানের রেকর্ড গড়েন ওয়ার্নার। বিশ^কাপে ১৯ ইনিংসে ১ হাজার রান পূর্ণ করে ভারতের শচীন টেন্ডুলকার ও দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্সের রেকর্ড ভাঙ্গেন ওয়ার্নার। ২০ ইনিংসে বিশ^কাপে ১ হাজার রান করেছিলেন টেন্ডুলকার ও ডি ভিলিয়ার্স।
১৭তম ওভারে ওয়ার্নারকে শিকার করে ভারতকে ব্রেক থ্রু এনে দেন স্পিনার কুলদীপ। আউট হওয়ার আগে ৬টি চারে ৫২ বলে ৪১ রান করেন ওয়ার্নার। স্মিথের সাথে ৮৫ বলে ৬৯ রানের জুটি গড়েন ওয়ার্নার।
ওয়ার্নার ফেরার পর মার্নাস লাবুশেনকে নিয়ে আবারও জুটি গড়ার চেষ্টা করেন স্মিথ। ২৭ ওভারে দলের রান ২ উইকেট ১১০এ নিয়ে যান তারা। জাদেজার করা ২৮তম ওভারের প্রথম বলে দারুন এক ডেলিভারিতে বোল্ড হন ৫টি চারে ৭১ বলে ৪৬ রান করা স্মিথ।
স্মিথের আউটের পরই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন আপে ধ্বস নামান জাদেজা-কুলদীপ ও অশি^ন। ১৪০ রানে সপ্তম উইকেট হারায় তারা।
স্মিথের পর লাবুশেনকে ২৭ ও অ্যালেক্স ক্যারিকে শূণ্য রানে জাদেজা, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ১৫ রানে কুলদীপ ও ক্যামেরুন গ্রিনকে ৮ রানে শিকার করেন অশি^ন।
মিডল অর্ডারে ৩০ রানে ৫ উইকেট হারানোয় দ্রুত গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়ে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু লোয়ার অর্ডারে কামিন্স ১৫ ও মিচেল স্টার্ক ৩৫ বলে ২৮ রান করলে ১৯৯ রানের পুঁিজ পায় অস্ট্রেলিয়া।
ভারতের জাদেজা ২৮ রানে ৩টি, কুলদীপ ৪২ রানে ও বুমরাহ ৩৫ রানে ২টি করে উইকেট নেন। এ ছাড়া অশি^ন-সিরাজ-পান্ডিয়া ১টি করে শিকার করেন।
২০০ রানের সহজ টার্গেটে শুরুতেই খেই হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ভারত। ইনিংসের প্রথম ওভারেই ভারতীয় ওপেনার ইশান কিশানকে খালি হাতে ফেরান পেসার স্টার্ক। গোল্ডেন ডাক মারেন কিশান।
পরের ওভারে ডাবল উইকেট মেডেন নেন আরেক পেসার জশ হ্যাজেলউড। ওভারের তৃতীয় বলে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে এবং শেষ বলে শ্রেয়াস আইয়ারকে শিকার করেন হ্যাজেলউড। রোহিত-আইয়ারও খালি হাতে ফিরেন।
প্রথম ১০ বলে ২ রানে ৩ উইকেট হারানো ভারতকে খাদের মধ্যে থেকে টেনে তুলেন কোহলি ও লোকেশ রাহুল। উইকেট পতন ঠেকিয়ে ১৬তম ওভারে দলের রান ৫০এ নেন কোহলি-রাহুল জুটি। এরমধ্যে অষ্টম ওভারে ১২ রানে কোহলিকে জীবন দেন মার্শ।
জীবন পেয়ে আর পেছন ফিরে তাকাননি কোহলি। রাহুলকে নিয়ে ২১৫ বলে ১৬৫ রানের দুর্দান্ত জুটি গড়ে ভারতের জয়ের পথ সহজ করেন কোহলি। দলের জয় থেকে ৩৩ রান দূরে থাকতে বিদায় ভারতের সাবেক অধিনায়ক ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৬৭তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ১১৬ বলে ৬টি চারে ৮৫ রান করেন কোহলি।
পঞ্চম উইকেটে হার্ডিক পান্ডিয়াকে নিয়ে ২২ বলে অবিচ্ছিন্ন ৩৪ রান তুলে ভারতকে দারুন এক জয়ের স্বাদ নেন রাহুল। অল্পের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন রাহুল। ১৬তম হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংসে ১১৫ বল খেলে ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় অপরাজিত ৯৭ রান করেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার হ্যাজেলউড ৩টি উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
অস্ট্রেলিয়া : ১৯৯/১০, ৪৯.৩ ওভার (স্মিথ ৪৬, ওয়ার্নাও ৪১, জাদেজা ৩/২৮)
ভারত : ২০১/৪, ৪১.২ ওভার (রাহুল ৯৭, কোহলি ৮৫, হ্যাজেলউড ৩/৩৮)
ফল : ভারত ৬ উইকেটে জয়ী।