বাসস
  ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৮:৪২

মুশফিকের হাফ-সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৯ উইকেটে ২৪৫ রান 

চেন্নাই, ১৩ অক্টোবর ২০২৩ (বাসস) : অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিমের হাফ-সেঞ্চুরির সাথে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের চল্লিশোর্ধ ইনিংসের সুবাদে ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৪৫ রানের লড়াকু সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ। মুশফিক ৭৫ বলে ৬৬, মাহমুদুল্লাহ ৪৯ বলে অপরাজিত ৪১ এবং সাকিব ৫১ বলে ৪০ রান করেন। লোয়ার-অর্ডারের তিন ব্যাটারকে নিয়ে শেষ তিন উইকেটে ৭৪ বলে ৬৫ রান যোগ করেন মাহমুদুল্লাহ।
চেন্নাইয়ে এমএ চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামে টস জিতে বাংলাদেশকে প্রথমে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রন জানান নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। একটি করে পরিবর্তন এনে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড। মাহেদি হাসানের জায়গায়  বাংলাদেশ একাদশে ফিরেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আর উইল ইয়ংয়ের পরিবর্তে দীর্ঘদিন পর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামেন নিউজিল্যান্ডের  উইলিয়ামসন। 
ইনিংসের প্রথম বলেই বড়সড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের পেসার ট্রেন্ট বোল্টের লেগ সাইডের ডেলিভারিতে ছক্কার আশায় ফ্লিক শটে ডিপ ফাইন লেগে ম্যাট হেনরির দারুন ক্যাচে বিদায় নেন ওপেনার লিটন দাস। এই নিয়ে ওয়ানডেতে ১২বার ও পাঁচবার প্রথম বলে শূণ্যতে আউট হলেন লিটন। বিশ^কাপের মঞ্চে ষষ্ঠ ও দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে প্রথম বলেই আউট হবার লজ্জার রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন লিটন। 
লিটনের বিদায়ে তিন নম্বরে মাঠে নামেন মেহেদি হাসান মিরাজ। আরেক ওপেনার তানজিদ হাসানকে সাথে  দলের রানের চাকা সচল করেন মিরাজ। এতে প্রথম বলে উইকেট হারানোর ধাক্কা কাটিয়ে ৭ ওভারে ৩৮ রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ। 
অষ্টম ওভারে তানজিদকে শিকার করে জুটি ভাঙ্গেন পেসার লুকি ফার্গুসন। স্কয়ার লেগে ডেভন কনওয়েকে ক্যাচ দিয়ে  থামেন ৪টি চারে ১৬ রান করা  তানজিদ। ৮ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মত সর্বোচ্চ ১৬ রান করলেন তানজিদ। মিরাজের সাথে ৪৮ বলে ৪০ রান যোগ করেন তরুণ এ ব্যাটার। 
তানজিদের মত ৪টি বাউন্ডারিতে ভালোভাবে ইনিংস শুরু করেও বেশি দূর যেতে পারেনি মিরাজ। ১২তম ওভারে ফার্গুসনের শর্ট বলে ঠিকঠাক পুল শট খেলতে না পারায় ডিপ ফাইন লেগে হেনরিকে ক্যাচ দেন ৪৬ বলে ৩০ রান করা মিরাজ। পরের ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসেই শান্তকে তুলে নেন নিউজিল্যান্ডের অকেশনাল স্পিনার গ্লেন ফিলিপস। ১টি চারে ৭ রান করেন শান্ত। ৫৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ১৯৯৯  বিশ^কাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছিলো টাইগাররা। সেটিই সবচেয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কম রানে ৪ উইকেট হারানোর রেকর্ড বাংলাদেশের। 
চাপে পড়া বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফেরাতে জুটি বাঁধেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। উইকেটে দ্রুত সেট হয়ে ২১তম ওভারে বাংলাদেশের রান ১শতে নেন তারা। তিন অংকে পা দেয়ার পর টাইগারদের রান তোলার গতি কমলেও, ২৮তম ওভারে ওয়ানডেতে ৪৮তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন মুশি। বিশ^কাপে নবম অর্ধশতক করতে ৫২ বল খেলেন তিনি। 
মুশফিকের হাফ-সেঞ্চুরির পর মারমুখী হয়ে উঠেন সাবধানে খেলতে থাকা সাকিব। স্পিনার রাচিন রবীন্দ্রর করা ২৯তম ওভারে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন তিনি। ৩০তম ওভারের চতুর্থ বলে আরও ১টি ছক্কা হাঁকান সাকিব। ফার্গুসনের পরের বলে আবারও ছক্কা মারতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দিলে  উইকেটরক্ষ টম লাথামের হাতে ক্যাচ দিয়ে  প্যাভিলিয়নের  পথ ধরেন  সাকিব। ৩িটি চার ও ২টি ছক্কায় ৪০ রান করেন টাইগার অধিনায়ক। এই ইনিংস খেলার পথে বিশ^কাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর  তালিকায় সনাথ জয়সুরিয়া, বিরাট কোহলি ও ক্রিস গেইলকে টপকে ১২০১ রান নিয়ে ষষ্ঠস্থানে উঠেছেন সাকিব। 
পঞ্চম উইকেটে মুশফিকের সাথে ১০৮ বলে ৯৬ রান যোগ করেন সাকিব। বিশ^কাপে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮বার হাফ-সেঞ্চুরির জুটি গড়লেন সাকিব-মুশফিক। এছাড়াও জুটিতে রানের দিক দিয়ে বিশ^কাপে ১৯ ইনিংসে ৯৭২ রান নিয়ে দ্বিতীয়স্থানে উঠলেন তারা। ২০ ইনিংসে ১২২০ রান নিয়ে সবার উপরে অস্ট্রেলিয়ার এডাম গিলক্রিস্ট ও ম্যাথু হেইডেন।
সাকিব ফেরার পর মুশফিকের বিদায় নিশ্চিত করেন হেনরি। তার নিচু হওয়া বলে বোল্ড হবার আগে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৫ বলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৬ রান করেন মুশফিক। 
মুশফিকের আউটের পর তাওহিদ হৃদয়কে হারিয়ে আবারও চাপে পড়ে বাংলাদেশ। বোল্টের ডেলিভারিতে এক্সট্রা কাভারে স্যান্টনারকে ক্যাচ দিয়ে ১৩ রানে ফিরেন হৃদয়। এই উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের ষষ্ঠ বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ১০৭তম ম্যাচে ২শ শিকার পূর্ণ করেন বোল্ট। 
হৃদয়ের আউটে ক্রিজে এসে ২টি ছক্কায় ১৯ বলে ১৭ রান করে আউট হন তাসকিন আহমেদ। মুস্তাফিজুর রহমান ৪ রানে আউট হলে, ৪৮তম ওভারের শেষ বলে ২২৫ রানে নবম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তখনও ক্রিজে টিকে ছিলেন আট নম্বরে নামা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। 
৪৯তম ওভারে বোল্টকে ও শেষ ওভারে মিচেলকে ১টি করে ছক্কা মেরে বাংলাদেশকে লড়াই করার মত পুঁিজ এনে দেন মাহমুদুল্লাহ। ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৪৫ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। তাসকিন-মুস্তাফিজ ও শরিফুল ইসলামের সাথে তিন উইকেটে ৭৪ বল মোকাবেলা করে ৬৫ রান যোগ করেন মাহমুদুল্লাহ। ২টি করে চার-ছক্কায় ৪৯ বলে  ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন অভিজ্ঞ ব্যাটার।  ২ রানে অপরাজিত থাকেন ে শরিফুল ইসলাম। 
নিউজিল্যান্ডের ফার্গুসন ৪৯ রানে ৩টি, বোল্ট ৪৫ ও হেনরি ৫৮ রানে ২টি করে এবং স্যান্টনার-ফিলিপস ১টি করে উইকেট নেন।