বাসস
  ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ১৮:৫৯
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ২২:৩৮

কোহলির সেঞ্চুরিতে বিশ্বকাপে হ্যাট্টিক হার বাংলাদেশের

পুনে, ১৯ অক্টোবর ২০২৩ (বাসস) : ভারতের বিরাট কোহলির দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে বিশ^কাপে হ্যাট্টিক হারের স্বাদ পেল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আজ টুর্নামেন্টে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে স্বাগতিক ভারতের কাছে ৭ উইকেটে হেরেছে সাকিব বিহীন বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে বিশ^কাপ শুরুর পর টানা তিন ম্যাচ হারলো টাইগাররা। আগের দুই ম্যাচে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছিলো বাংলাদেশ।  
দুই ওপেনার তানজিদ হাসান ও লিটন দাসের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরির পর শেষ দিকে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ভারতের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৫৬ রান করে বাংলাদেশ। লিটন ৬৬, তানজিদ ৫১ ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৪৬ রান করেন। জবাবে বিরাট কোহলির অনবদ্য ১০৩ রানে ৫১ বল বাকী রেখে বিশ^কাপে টানা চতুর্থ জয়ের স্বাদ পায় ভারত। এতে ৪ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে পিছিয়ে থেকে টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে থাকলো ভারত। ৪ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে টেবিলের শীর্ষে নিউজিল্যান্ড। ৪ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের সপ্তমস্থানে নেমে গেল বাংলাদেশ।  
পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (এমসিএ) স্টেডিয়ামে টস জিতে মভঁ  প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ইনজুরি থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে না পারায় ভারতের বিপক্ষে খেলার সুযোগ হয়নি নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের। এজন্য সাকিবের পরিবর্তে স্পিনার নাসুম আহমেদ খেলার সুযোগ পান। এছাড়াও পেসার তাসকিন আহমেদের জায়গায় একাদশে সুযোগ হয় হাসান মাহমুদের।
ব্যাট হাতে নেমে সাবধানে ইনিংস শুরু কাভ বাংলাদেশের দুই ওপেনার তানজিদ ও লিটন প্রথম ৫ ওভারে ১০ রান করেন। পঞ্চম ওভারেই তানজিদকে লেগ বিফোর আউটের সুযোগ হাতছাড়া করে ভারত। রিভিউ নিলে তানজিদকে ৭ রানেই থামাতে পারতো ভারত।
ষষ্ঠ ওভার থেকে রানের গতি বাড়ান তানজিদ-লিটন। ষষ্ঠ থেকে দশম ওভারের মধ্যে ৫৩ রান যোগ করেন তারা। মারমুখী মেজাজে ছিলেন তানজিদ। পেসার শারদুল ঠাকুরের করা ১০ম ওভারে দুর্দান্ত ২টি ছক্কা ও ১টি চারে ১৬ রান তুলেন তানজিদ।
১৪তম ওভারে নবম ওয়ানডেতে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান ৪১ বল খেলা তানজিদ। পরের ওভারে ভারতকে কাঙ্খিত ব্রেক-থ্রু এনে দেন স্পিনার কুলদীপ যাদব। ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৩ বলে ৫১ রান করা তানজিদকে লেগ বিফোর আউট করেন কুলদীপ। ৮৮ বলে বিশ^কাপে  বাংলাদেশের পক্ষে  উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ  ৯৩ রানের জুটি গড়েন তানজিদ ও লিটন।
তানজিদের বিদায়ে উইকেটে আসেন শান্ত। তিন নম্বরে সুবিধা করতে পারেননি এ ম্যাচের অধিনায়ক শান্ত। স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজার বলে লেগ বিফোর আউট হবার আগে ১৭ বলে মাত্র ৮ রান করেন তিনি।
২১তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১২তম ও এবারের বিশ^কাপেদ্বিতীয়  হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৬২ বল খেলা লিটন। এর আগে  ধর্মশালায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৬ রান করেছিলেন তিনি।
লিটনের হাফ-সেঞ্চুরির পর প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন চার নম্বরে নামা মেহেদি হাসান মিরাজ। পেসার মোহাম্মদ সিরাজের বলে উইকেটের পেছনে লোকেশ রাহুলের দারুন ক্যাচে ৩ রানে প্যাভিলিয়নে ফিরেন মিরাজ। ৯৩ রানের সূচনার পর চাপে পড়ে ১২৯ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ১৩ দশমিক ৪ ওভার থেকে ২৩ দশমিক ৩ ওভার পর্যন্ত কোন চার-ছক্কা ছিলো না টাইগারদের ইনিংসে।
হাফ-সেঞ্চুরির পর ইনিংস বড় করছিলেন লিটন। কিন্তু ২৮তম ওভারে জাদেজার বলে অহেতুক ছক্কা মারতে গিয়ে লং অফে শুভমান গিলকে ক্যাচ দিলে লিটনের  ৭টি চারে ৮২ বলে ৬৬ রানের দায়িত্বশীল ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে।
তানজিদ-লিটনের পর বাংলাদেশের পরের তিন জুটি ছিলো যথাক্রমে  ১৭, ১৯ ও ৮ রানের। সঙ্গত কারণেই  দলীয় ১৩৭ রানে চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে লিটন ফেরার পর বড় জুটির খুব প্রয়োজন ছিলো বাংলাদেশের। পঞ্চম উইকেটে বড় জুটির ইঙ্গিত দিয়ে ৫৮ বলে ৪২ রান তুলে বিচ্ছিন্ন হন তাওহিদ হৃদয় ও মুশফিকুর রহিম। ৩৮তম ওভারে শারদুলের শর্ট বলে ভুল টাইমিংয়ে গিলকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৩৫ বলে ১৬ রান করা হৃদয়।
দলের রান ২শ পার করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন মুশফিক। ৪৩তম ওভারে বুমরাহর শর্ট লেংথের বলে কাট করেন মুশফিক। ডান দিকে লাফিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে দারুন ক্যাচ নেন জাদেজা। ১টি করে চার-ছক্কায় ৪৬ বলে ৩৮ রান করেন অভিজ্ঞ মুশফিক। এই ইনিংস খেলার পথে সাকিবের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে বিশ^কাপে ১হাজার রান পূর্ণ করেন মুশফিক।
মুশফিক ফেরার পর সপ্তম উইকেটে নাসুমকে নিয়ে ২৬ বলে ৩২ রান যোগ করে দলকে আড়াইশর ঘরে নেয়ার সম্ভাবনা জাগান মাহমুদুল্লাহ কিন্তু শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ২৪৮ রানে বুমরাহর ইর্য়কারে বোল্ড হন তিনি। হাফ-সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে গিয়ে ৩৬ বলে ৩টি বাউন্ডারি ও এক ওভার বাউন্ডারিতে  ৪৬ রান করে  আউট হন মাহমুদুল্লাহ। ৩
ইনিংসের শেষ চার বলে ৮ রান তুলে বাংলাদেশের রান আড়াইশ পার করেন দুই বোলার মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম। ওভারের শেষ বলে এক্সটা কভারের উপর দিয়ে ছক্কা মারেন শরিফুল। এতে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৫৬ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
মুস্তাফিজ ১ ও শরিফুল ৭ রানে অপরাজিত থাকেন। নাসুম করেন ১৮ বলে ১৪ রান। ভারতের জাদেজা ৩৮ রানে, বুমরাহ ৪১ রানে ও সিরাজ ৬০ রানে ২টি করে উইকেট নেন।
২৫৭ রানের টার্গেটে ভারতকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়ে  দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল ৭৬ বলে ৮৮ রানের জুটি গড়েন । ১৩তম ওভারে বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন পেসার হাসান। ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪০ বলে ৪৮ রান করা রোহিতকে শিকার করেন হাসান।
রোহিত না পারলেও, ৫২ বলে ওয়ানডেতে ১০ম হাফ-সেঞ্চুরি করেন গিল। অর্ধশতকের পর বাউন্ডারি লাইনের কাছে মাহমুদুল্লাহর দারুন ক্যাচে গিলকে বিদায় করেন মিরাজ। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৬ বলে ৫৩ রান করেন গিল।
গিলের সাথে ৪৪ রানের জুটির পর তৃতীয় উইকেটে শ্রেয়াস আইয়ারকে নিয়ে ৪৬ রান যোগ করেন কোহলি। মিরাজের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ১৯ রানে আউট হন আইয়ার। এই জুুটিতেই ৪৮ বলে ওয়ানডেতে ৬৯তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন কোহলি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটি ২১২তম পঞ্চাশ প্লাস ইনিংস তার।
আইয়ার যখন ফিরেন তখন জয়ের জন্য  ১২৫ বলে ৭৯ রান দরকার পড়ে ভারতের। চতুর্থ উইকেটে রাহুলকে নিয়ে অবিচ্ছিন্ন রানের ৮৩ জুটি গড়ে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন কোহলি।
শেষদিকে দলের প্রয়োজন যখন ২ রান, তখন ৯৭ রানে দাঁড়িয়ে কোহলি। ৪২তম ওভারের তৃতীয় বলে ছক্কা মেরে ওয়ানডেতে ৪৮তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন কোহলি। ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ৪৯ সেঞ্চুরির মালিক ভারতের শচীন টেন্ডুলকারকে স্পর্শ করতে আর মাত্র ১টি শতক দরকার কোহলির। ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৯৭ বলে অপরাজিত ১০৩ রান করেন ম্যাচ সেরা কোহলি। ৩৪ বলে অপরাজিত ৩৪ রান করেন রাহুল। বাংলাদেশের মিরাজ ২টি ও হাসান ১টি উইকেট নেন।
আগামী ২৪ অক্টোবর মুম্বাইয়ে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।  
স্কোর কার্ড : (টস-বাংলাদেশ)
বাংলাদেশ ইনিংস :
তানজিদ এলবিডব্লু ব কুলদীপ ৫১
লিটন ক গিল ব জাদেজা ৬৬
শান্ত এলবিডব্লু ব জাদেজা ৮
মিরাজ ক রাহুল ব সিরাজ ৩
হৃদয় ক গিল ব শারদুল ১৬
মুশফিক ক জাদেজা ব বুমরাহ ৩৮
মাহমুদুল্লাহ বোল্ড ব বুমরাহ ৪৬
নাসুম ক রাহুল ব সিরাজ ১৪
মুস্তাফিজুর অপরাজিত ১
শরিফুল অপরাজিত ৭
অতিরিক্ত (লে বা-১, ও-৫) ৬
মোট (৮ উইকেট, ৫০ ওভার) ২৫৬
উইকেট পতন : ১/৯৩ (তানজিদ), ২/১১০ (শান্ত), ৩/১২৯ (মিরাজ), ৪/১৩৭ (লিটন), ৫/১৭৯ (হৃদয়), ৬/২০১ (মুশফিকুর), ৭/২৩৩ (নাসুম), ৮/২৪৮ (মাহমুদুল্লাহ)।
ভারত বোলিং :
বুমরাহ : ১০-১-৪১-২ (ও-২),
সিরাজ : ১০-০-৫০-২ (ও-২),
হার্ডিক : ০.৩-০-৮-০ (ও-৩),
কোহলি : ০.৩-০-২-০,
শারদুল : ৯-০-৫৯-১,
কুলদীপ : ১০-০-৪৭-১,
জাদেজা : ১০-০-৩৮-২।
ভারত ইনিংস :
রোহিত ক হৃদয় ব হাসান ৪৮
গিল ক মাহমুদুল্লাহ ব মিরাজ ৫৩
কোহলি অপরাজিত ১০৩
আইয়ার মাহমুদুল্লাহ ব মিরাজ ১৯
রাহুল অপরাজিত ৩৪
অতিরিক্ত (নো ব-২, ও-২) ৪
মোট (৩ উইকেট, ৪১.৩ ওভার) ২৬১
উইকেট পতন : ১/৮৮ (রোহিত), ২/১৩২ (গিল), ৩/১৭৮ (আইয়ার),
বাংলাদেশ বোলিং :
শরিফুল : ৮-০-৫৪-০,
মুস্তাফিজুর : ৫-০-২৯-০,
নাসুম : ৯.৩-০-৬০-০,
হাসান : ৮-০-৬৫-১ (ও-১, নো-২),
মিরাজ : ১০-০-৪৭-২ (ও-১),
মাহমুদুল্লাহ : ১-০-৬-০।
ফল : ভারত ৭ উইকেটে জয়ী।