শিরোনাম
মুম্বাই, ২৩ অক্টোবর ২০২৩ (বাসস) : হতাশাজনক পারফরমেন্সকে পেছনে ফেলে আগামীকাল মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে জয়ের লক্ষ্য নিয়ে শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয়ের পর টানা তিনটিতে হেরে বিশ^কাপে অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে গেছে বাংলাদেশ। অনেকটা ভঙ্গুর অবস্থায়ই দুর্দান্ত ফর্মে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে টাইগাররা। প্রতিটি ম্যাচেই ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষ বোলারদের উপর তান্ডব চালাচ্ছেন প্রোটিয়া ব্যাটাররা।
চলতি বিশ^কাপে এ পর্যন্ত নিজেদের চার ম্যাচে যথাক্রমে- শ্রীলংকার বিপক্ষে ৫ উইকেটে ৪২৮, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭ উইকেটে ৩১১, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সব উইকেট হারিয়ে ২০৭ এবং বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭ উইকেটে ৩৯৯ রানের সংগ্রহ পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। চার ম্যাচের স্কোরেই দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের বিধ্বংসী ফর্মের চিত্র ফুটে উঠেছে।
কিন্তু এর মধ্যে হতাশার স্মৃতিও আছে দক্ষিণ আফ্রিকার। বাছাই পর্ব পেরিয়ে আসা নেদারল্যান্ডসের কাছে পরাজিত হয়েছে প্রোটিয়ারা। নেদারল্যান্ডসের করা ৮ উইকেটে ২৪৫ রান টপকাতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মত লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নেদারল্যান্ডসের কাছে পরাজিত হয়। লক্ষ্য তাড়াতে দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্বলতায় বিষয়টি নিজেদের পরিকল্পনায় রাখতে পারে বাংলাদেশ।
কিন্তু গত শনিবার মুম্বাইয়ের এই ভেন্যুতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭ উইকেটে ৩৯৯ রানের পাহাড় গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ২২৯ রানের বিশাল জয় বাংলাদেশের জন্য বড় চিন্তার কারন হবে। ইতোমধ্যে মুম্বাইয়ের প্রচন্ড গরমের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। অনুশীলনে প্রচন্ড গরমের সাথে লড়াই করতে হয়েছে টাইগারদের।
ছোট বাউন্ডারি এবং বাউন্সি উইকেটর কারনে মুম্বাইয়ের ভেন্যু ব্যাটিং স্বর্গ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তবে এ ধরনের উইকেট বাংলাদেশের জন্য আশাব্যাঞ্জক নয় । কারন ব্যাটিং সহায়ক বা স্পোর্টিং উইকেটে খেলতে অভ্যস্ত নয় বাংলাদেশ। বুদ্ধিমত্তার সাথে বল করতে পারলে মুম্বাইয়ে উইকেট যে পেসারদের জন্য সহায়ক সেটি ইতোমধ্যে দেখিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা।
ঘরের মাঠে ধীর ও নীচু উইকেট বানিয়ে বড় দলের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের স্বাদ পেয়ে থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু বহুজাতিক টুর্নামেন্টে সেটি হয়নি। শেষ তিন ম্যাচে ব্যাটিং সহায়ক উইকেট পেলেও ২৭০ রানের বেশি করতে পারেনি টাইগাররা।
নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে গত ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া সহ-অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত জানিয়েছিলেন, ঘরের মাঠে ভালো বা স্পোর্টিং উইকেটে খেলা উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন উইকেটে খেলতে হবে যেখানে বাউন্স আছে। আমাদের স্পোর্টিং উইকেটে খেলতে হবে যেখানে ব্যাটার ও বোলাররা সুবিধা পাবে।’
তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের দুর্দান্ত জয় দেখে আত্মবিশ^াসী হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের রেকর্ডও থেকেও মনোবল বাড়িয়ে নিতে পারে টাইগাররা। বিশ^কাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চারবারের মোকাবেলায় দু’টিতে জয় এবং দু’টি হার আছে বাংলাদেশের। যা আইসিসি ইভেন্টে বিশে^র বড় দলগুলোর বিপক্ষে সেরা ফলাফল টাইগারদের। গত বিশ্বকাপে ৩৩০ রানের পুঁিজ নিয়ে পূর্ণ শক্তির দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারিয়েছিলো বাংলাদেশ।
২০০৭ বিশ্বকাপে মোহাম্মদ আশরাফুলের ৮৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের সুবাদে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিলো বাংলাদেশ। যা এখনও বিশ্বকাপে বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে সেরা ইনিংস হিসেবে বিবেচিত।
অলরাউন্ড নৈপুন্যে গত বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন সাকিব আল হাসান। বাঁ পায়ের ঊরুর ইনজুরির কারণে ভারতের বিপক্ষে খেলতে না পারলেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে ফিরতে পারেন সাকিব।
তবে পেসার তাসকিন আহমেদকে মিস করবে বাংলাদেশ, এখনও পুরোপুরি ফিট হতে পারেননি তিনি।
সব মিলিয়ে এখন অবধি ২৪টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা। এরমধ্যে বাংলাদেশ জিতেছে ৬টিতে এবং হেরেছে ১৮টিতে।
আগের ম্যাচে জয় পাওয়া কম্বিনেশন নিয়েই মাঠে নামতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। এর অর্থ আবারও একাদশে থাকছেন না প্রোটিয়াদের নিয়মিত অধিনায়ক তেম্বা বাভুমা। খারাপ ফর্মের কারণে দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন বাভুমা। অধিনায়কত্ব পান আইডেন মার্করাম।
এদিকে, সাকিব দলে ফিরেন বাংলাদেশ একাদশেও একটি পরিবর্তন আসবে।
বাংলাদেশ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), নাজমুল হোসেন শান্ত (সহ-অধিনায়ক), লিটন দাস, তানজিদ হাসান, তাওহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদি হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদ, মাহেদি হাসান, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরিফুল ইসলাম ও তানজিম হাসান।
দক্ষিণ আফ্রিকা দল : আইডেন মার্করাম (অধিনায়ক), জেরার্ল্ড কোয়েৎজি, তেম্বা বাভুমা, কুইন্টন ডি কক, রেজা হেনড্রিকস, মার্কো জানসেন, এনরিচ ক্লাসেন, কেশব মহারাজ, ডেভিড মিলার, লুঙ্গি এনগিডি, আন্দিলে ফেলুকুওয়াও, কাগিসো রাবাদা, তাবরিজ শামসি, রাসি ভ্যান ডার ডুসেন ও লিজার্ড উইলিয়ামস।