শিরোনাম
মুম্বাই, ২৪ অক্টোবর ২০২৩ (বাসস) : কুইন্ট ডি ককের সেঞ্চুরি এবং হেনরিচ ক্লাসেন-অধিনায়ক আইডেন মার্করামের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে ওয়ানডে বিশ^কাপে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৮২ রানের পাহাড় গড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটিই সর্বোচ্চ দলীয় রান দক্ষিণ আফ্রিকার। ডি কক ১৪০ বলে ১৭৪, ক্লাসেন ৪৮ বলে ৯০ এবং মার্করাম ৬৯ বলে ৬০ রান করেন।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ইনজুরি থেকে সুস্থ হয়ে তাওহিদ হৃদয়ের পরিবর্তে এক ম্যাচ পর বাংলাদেশ একাদশে ফিরেন নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
বল হাতে দ্বিতীয় ওভারেই সাফল্য পাবার সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের বলে শূণ্যতে দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার রেজা হেনড্রিক্সের ক্যাচ ফেলেন স্লিপে থাকা তানজিদ হাসান তামিম।
অবশ্য জীবন পেয়ে ১২ রানে থামেন হেনড্রিক্স। সপ্তম ওভারের প্রথম বলে দারুন এক ডেলিভারিকে হেনড্রিক্সের স্টাম্প লন্ডভন্ড করে দেন পেসার শরিফুল ইসলাম।
শরিফুলের উইকেট শিকারের আনন্দ পরের ওভারে দ্বিগুন মাত্রা পায়। তিন নম্বরে নামা রাসি ভ্যান ডার ডুসেনকে ১ রানে লেগ বিফোর আউট করেন মিরাজ। রিভিউ নেননি ডুসেন। ৩৬ রানে ২ উইকেট তুলে নিয়ে শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে চেপে ধরে বাংলাদেশ। এবারের আসরে পাওয়ার প্লেতে এই প্রথম ১এর বেশি উইকেট হারালো দক্ষিণ আফ্রিকা।
অবশ্য এই চাপকে আমলে না নিয়ে বড় জুটির দিকে মনোযোগ দেন ডি কক ও অধিনায়ক আইডেন মার্করাম। ১৮তম ওভারে ওয়ানডেতে ৩১তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন ৪৬ বল খেলা ডি কক। ২১তম ওভারে দলের রান ১শতে নেন তারা। ২৬তম ওভারে ৫৭ বল খেলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নবম অর্ধশতক করেন মার্করাম।
হাফ-সেঞ্চুরির পর বেশি দূর যেতে পারেননি মার্করাম। ৩১তম ওভারে সপ্তমবারের মত আক্রমনে এসে ৬০ রান করা মার্করামকে বিদায় করে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক-থ্রু এনে দেন সাকিব। ছক্কা মারতে গিয়ে লং অফে লিটন দাসকে ক্যাচ দেন ৬৯ বল খেলে ৭টি চার মারা মার্করাম। ডি ককের সাথে তৃতীয় উইকেটে ১৩৭ বলে ১৩১ রান যোগ করেন মার্করাম।
দলীয় ১৬৭ রানে মার্করাম ফেরার পর ক্রিজে ডি ককের সঙ্গী হন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ঝড়ো সেঞ্চুরি করা হেনরিচ ক্লাসেন। ৩৫তম ওভারের প্রথম বলে ওয়ানডেতে ২০তম সেঞ্চুরি করেন ডি কক। ১০১ বল খেলে এবারের আসরে তৃতীয় সেঞ্চুরি করলেন ডি কক। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ব্যাটার হিসেবে এক বিশ^কাপে ৩টি সেঞ্চুরির নজির গড়লেন তিনি। শ্রীলংকার কুমার সাঙ্গাকারার পর দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসেবে বিশ^কাপে তৃতীয় সেঞ্চুরি করলেন তিনি।
সেঞ্চুরির পর ক্লাসেনকে নিয়ে মারমুখী হয়ে উঠেন ডি কক। ৩৬ থেকে ৪৫, এই দশ ওভারে ১১৩ রান যোগ করেন ডি কক-ক্লাসেন। সাকিবের করা ৪৩তম ওভারে ২টি করে চার-ছক্কায় ২২ রান তুলে নিজের দেড়শ রান পূর্ণ করেন ডি কক। ৪৪ ওভারে দলীয় ৩শ রানে পা রাখে দক্ষিণ আফ্রিকা।
৪৬তম ওভারের প্রথম বলে হাসানের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে নাসুমের ক্যাচে বিদায় নেন ১৫টি চার ও ৭টি ছক্কায় ১৪০ বলে ববোরের আসরে ব্যক্তিগ সর্বোচ্চ ১৭৪ রান করা ডি কক। এই ইনিংসের মাধ্যমে ভারতের বিরাট কোহলিকে টপকে এবারের আসরে সর্বোচ্চ রানের মালিক হয়ে যান দক্ষিণ আফ্রিকার এ ব্যাটার। চতুর্থ উইকেটে ক্লাসেনের সাথে ৮৭ বলে ১৪২ রান যোগ করেন ডি কক।
ডি কক ফেরার পর ডেভিড মিলারকে নিয়ে বাংলাদেশ বোলারদের উপর তান্ডব অব্যাহত রাখেন ক্লাসেন। এতে ৪৯তম ওভারেই দক্ষিণ আফ্রিকার রান সাড়ে তিনশ স্পর্শ করে। হাসানের করা ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মেরে ৯০তে পৌঁছে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগান ক্লাসেন। কিন্তু পরের বলে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে ক্যাচ দিয়ে থামেন ২টি চার ও ৮টি ছক্কায় ৪৯ বলে ৯০ রান করা ক্লাসেন।
শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৮২ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে এটিই সর্বোচ্চ দলীয় রান প্রোটিয়াদের। তবে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৩৮৬ রান করেছিলো ইংল্যান্ড।
দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে ছক্কা হয়েছে ১৯টি। বিশ্বকাপে ছক্কা হজমে বাংলাদেশের বোলাররা যৌথভাবে দ্বিতীয়স্থানে আছে। বাংলাদেশের সাথে আছে পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়ের বোলাররা।
প্রথম ১০ ওভারে ২ উইকেটে ৪৪ রান করা দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ ১০ ওভারে দুই ব্যাটারকে হারিয়ে ১৪৪ রান তুলে এই ইনিংসের মাধ্যমে বিশ^কাপে এক আসরে সর্বোচ্চ চারবার ৩শর বেশি রান করার রেকর্ড গড়লো দক্ষিণ আফ্রিকা। এর আগে শ্রীলংকার বিপক্ষে ৪২৮, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩১১ ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৯৯ রান করেছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথমে ব্যাটিং করে রেকর্ড টানা সাত ম্যাচ ৩শর বেশি রান করার ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের নজির রেকর্ড করলো দক্ষিণ আফ্রিকা। এছাড়াও রেকর্ড অষ্টমবারের মত বিশ^কাপে ৩৫০এর বেশি রান করলো দক্ষিণ আফ্রিকা। এছাড়া বিশ^কাপের প্রথম দল হিসেবে এক আসরে তিনটি ৩৫০এর বেশি সংগ্রহ পেলে প্রোটিয়ারা।
বাংলাদেশের পক্ষে হাসান মাহমুদ ৬ ওভারে ৬৭ রানে ২টি, মিরাজ-শরিফুল ও সাকিব ৯টি করে ওভার করে ১টি করে উইকেট নেন। উইকেটশূণ্য ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান, নাসুম আহমেদ ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।