শিরোনাম
চেন্নাই, ২৫ অক্টোবর, ২০২৩ (বাসস) : একটি পরাজয় বিশ্বকাপে যেকোন দলকেই হতাশ করে তুলবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি কোন দল টানা তিন ম্যাচে পরাজিত হয় তবে তাদের পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়ায়। একই ঘটনা ঘটেছে বাবর আজমের নেতৃত্বাধীণ বর্তমান পাকিস্তান দলের। বিশ^কাপে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরাজয়ে ধাক্কা না সামলাতেই ১৯৯২ বিশ^ চ্যাম্পিয়নরা আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরাজয়ের লজ্জা পেয়েছে। চেন্নাইয়ে সোমবার আফগানিস্তান যেভাবে আত্মবিশ^াসের সাথে খেলে ২৮৩ রানের জয়ের লক্ষ্য সহজেই টপকে গেছে তাতে পাকিস্তানকে নিয়ে যে কেউই হতাশা প্রকাশ করবে।
আর লজ্জাজনক এই পরাজয়ে বাবর আজমের দল এখন বিশ^কাপ থেকে ছিটকে পড়ার দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। সাবেক পাকিস্তানী খেলোয়াড়রা তাই বাবর আজম বাহিনীর বাজে পারফরমেন্সে সমালোচনায় সোচ্চার হয়েছেন। ওয়াসিম আকরাম, মিসবাহ-উল-হক, রমিজ রাজা, রশিত লতিফ, মোহাম্মহদ হাফিজ, আকিব জাভেদ, শোয়েব মালিক, মইন খান কিংবা শোয়েব আখতারের মত সাবেক সকল তারকাই এই তিন পরাজয়ে অধিনায়ক বাবর আজমকেই দায়ী করেছেন।
চেন্নাইয়ে তারুন্য নির্ভর আফগানিস্তানের কাছে পাকিস্তানের ৮ উইকেটের বিশাল পরাজয় কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না সাবেকরা। কোনদিক থেকেই আফগানদের বিপক্ষে পাকিস্তান প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। দলের সাধারন মানের বোলিংয়ের সাথে ফিল্ডিংয়ে একের পর এক ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে পাকিস্তানকে। যে কারনে বাবরের পরিবর্তে অন্য কাউকে দলের নেতৃত্বভার তুলে দেবারও দাবী উঠেছে।
সাবেক পাকিস্তানী পেসার আকিব জাভেদ বলেছেন সাদা বলের ফর্মেটে এই মুহূর্তে বাবরের পরিবর্তে শাহিন শাহ আফ্রিদ্রির উপর নেতৃত্বভার তুলে দেয়া উচিৎ। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানী ক্রিকেটের ভবিষ্যতের কান্ডারি শাহিন। বাবর নিজেকে প্রমানে ব্যর্থ হয়েছে, সাদা বলে তার উপর থেকে অবশ্যই অধিনায়কত্ব সড়িয়ে নেয়া উচিৎ। ’
পিএসএল’র দল লাহোর কালান্দার্সের পরিচালক ও প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করছেন আকিব। তার দলে রয়েছে শাহিন, হারিস রউফ, ফকর জামান ও আব্দুল্লাহ শফিক যারা বর্তমান বিশ^কাপ দলে খেলছেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরাজয়ে আকিব তার দলের খেলোয়াড়দেরও সমালোচনা করেছেন।
সেমিফাইনালে যেতে হলে ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশের বিপক্ষে বাকি চার ম্যাচে পাকিস্তানের সামনে জয়ের বিকল্প নেই। এই মুহূর্তে সেই সম্ভাবনাও শতভাগ নিশ্চিত নয়।
ওয়াসিম আকরাম বলেন, ‘ফিল্ডিং ও খেলোয়াড়দের শারিরীক ভাষা অত্যন্ত খারাপ ছিল যা কোনভাবেই মেনে যায়না। ২৮৩ রান মোটেই ছোট রান নয়, কিন্তু সেটাও প্রতিরোধ করার মত দক্ষতা বর্তমান দলের নেই। বোলিং ছিলো একেবারেই সাদামাটা, আর ফিল্ডিংতো ছিল ভয়ঙ্কর খারাপ।’
এর আগে আকরাম পাকিস্তানী খেলোয়াড়দের গত এক বছরে কোন প্রকার ফিটনেস পরীক্ষা না নেবার বিষয়টিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘আধুনিক ক্রিকেটে শতভাগ ফিটনেস ছাড়া একটি ম্যাচে ভাল করার কথা চিন্তাই করা যায়না। যথাযথ ফিটনেস ছাড়া কিভাবে তুমি বাউন্ডারি আটকাবে, কিংবা ক্যাচ নেবে? আমাদের দলের কিছু কিছ খেলোয়াড় এমনভাবে ফিল্ডিং করেছে তাতে তাদের দেখে মনে হয়েছে ভারতে এসে তারা উন্নতমানের মজার মজার খাবার খেতেই বেশী আনন্দ পাচ্ছে।’
সাবেক অধিনায়ক মিসবাহ বলেছেন বাবরের কাছ থেকে তিনি আরো বেশী দায়িত্বশীলতা প্রত্যাশা করেছিলেন। বোলিং পরিবর্তন, ফিল্ডিং পজিশন ছিল একেবারেই অপেশাদার, ‘পাওয়ার প্লেতে যেখানে সার্কেলের বাইরে মাত্র দুজন ফিল্ডার ছিল ঐ সময় হারিস রউফকে আক্রমনে এনে বাবর সময় নষ্ট করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ওভারে হারিস যে সংখ্যক রান দিয়েছে তাতেই তার আত্মবিশ^াস হারিয়ে ফেলেছে। কভারে সুইপার ও লেগ ডিপ সাইডে অন্তত তিনজন ফিল্ডার দিয়ে তাকে বোলিং করানো উচিৎ ছিল।’
সব ধরনের ফর্মেটে বাবরকে অধিনায়কত্ব দেবার বিষয়টিতে কার্যত মিসবাহ ও আকরামই মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন। ২০১৯ বিশ^কাপের অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদকে অপসারনের পর পিসিবির সাথে তারাই এ বিষয়টিতে বেশী আলোচনা করেছেন।
সাবেক পাকিস্তানী অল-রাউন্ডা আব্দুল রাজ্জাকের মতে বাবর অন্য খেলোয়াড়দের খেলাও নষ্ট করে দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শফিক ভাল ব্যাটিং করছিল, কিন্তু বাবর আসার পরই তার খেলা পাল্টে যায়। এ সম্পর্কে রাজ্জাক বলেন, ‘যখন বাবর ধীর গতিতে ব্যাটিং করে তখন স্বাভাবিক ভাবেই অন্য খেলোয়াড়দের উপরও তার প্রভাব পড়ে। এই বিষয়টি এবারের টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের স্ট্রাইক রেটে প্রভাব ফেলেছে।’