বাসস
  ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ১৬:২২

সেমির পথে এগিয়ে যেতে চায় দক্ষিণ আফ্রিকা, জয়ের সন্ধানে পাকিস্তান

চেন্নাই, ২৬ অক্টোবর ২০২৩ (বাসস) : ৫ খেলায় ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেমিফাইনালের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবার লক্ষ্য নিয়ে আগামীকাল নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। টানা তিন ম্যাচ হেরে সেমির দৌড় থেকে পিছিয়ে পড়েছে পাকিস্তান। ৫ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চমস্থানে আছে পাকরা। হারের বৃত্ত ভেঙ্গে জয়ের ধারায় ফিরতে মরিয়া পাকরা। এমন লক্ষ্য নিয়ে চেন্নাইতে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে মাঠে নামবে এই দু’দল।
দুর্দান্তভাবে বিশ^কাপ শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। শ্রীলংকার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেটে ৪২৮ রান করে প্রোটিয়ারা। যা বিশ^কাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় রান। রেকর্ড গড়া ম্যাচ ১০২ রানের ব্যবধানে জিতে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। 
দ্বিতীয় ম্যাচে পাঁচবারের বিশ^ চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে লড়াই করার সুযোগই দেয়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৩৪ রানে অসিদের বিধ্বস্ত করে প্রোটিয়ারা। টানা দুই ম্যাচে দুর্দান্ত জয়ের পর বড়সড় ধাক্কা খায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ১২ বছর ও দুই আসর পর বিশ^কাপে খেলার সুযোগ পাওয়া নেদারল্যান্ডসের কাছে ৩৮ রানে হেরে বড় অঘটনের শিকার হয় প্রোটিয়ারা। 
নেদারল্যান্ডসের কাছে হার হৃদয় ভাঙলেও, ভড়কে যায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। পরের দুই ম্যাচে আরও তেঁতে উঠে তারা। বর্তমান বিশ^ চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে রান বন্যায় ভাসিয়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথমে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ৩৯৯ রান করে প্রোটিয়ারা। ইংল্যান্ডকে ১৭০ রানে গুটিয়ে ২২৯ রানের বিশাল জয় ঝুলিতে ভরে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর সর্বশেষ ম্যাচে বাংলাদেশকেও রান বন্যায় ভাসিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা। ৫ উইকেটে ৩৮২ রানের পাহাড় গড়ে তারা। জবাবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ১১১ রানের কারনে বড় জয়ের স্বাদ পায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। 
পাঁচ ম্যাচ খেলে চারটিতেই ৩শর বেশি এবং তিনটি সাড়ে ৩শর বেশি রান করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ^কাপের প্রথম দল হিসেবে এক আসরে তিনবার ৩৫০এর বেশি রান করার রেকর্ডও গড়ে প্রোটিয়ারা। এতেই বুঝা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা তুখোড় ফর্মে রয়েছে। 
এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৬টি সেঞ্চুরি করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা। এরমধ্যে ৩টি সেঞ্চুরিতে ৪০৭ রান নিয়ে বিশ^কাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের তালিকায় শীর্ষে কুইন্টন ডি কক। নিজের বিদায়ী বিশ^কাপটা ভালোভাবেই রাঙাচ্ছেন ডি কক। পাকিস্তানের বিপক্ষেও আরও একবার জ¦লে উঠার প্রত্যাশায় ডি কক, ‘দলের জন্য যেভাবেই খেলছি, এই ফর্ম ধরে রাখতে চাই। পাকিস্তানের বোলিং লাইন-আপ শক্তিশালী। কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে আমাদের। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানের বোলারদের লাইন-লেংথ নষ্ট করে আরও একবার বড় স্কোর করতে চাই।’
পয়েন্ট টেবিলে ভালো অবস্থায় থাকলেও পাকিস্তানের বিপক্ষেও জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবছে না দক্ষিণ আফ্রিকা। ডি কক বলেন, ‘আমরা পয়েন্ট টেবিলে ভালো অবস্থায় আছি। কিন্তু এখনও আমাদের সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়নি। এজন্য আমরা যেভাবে খেলছি, জয়ের জন্য ঠিক সেভাবেই খেলবো। আমাদের প্রধান লক্ষ্য জয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা।’
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৮১ রানের জয় দিয়ে বিশ^কাপ শুরুর পর, শ্রীলংকার বিপক্ষে রেকর্ড জয়ের স্বাদ নেয় পাকিস্তান। শ্রীলংকার ছুঁেড় দেয়া ৩৪৫ রানের টার্গেট স্পর্শ করে পাকরা। বিশ^কাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়ে পাকিস্তান। এ ম্যাচে পাকিস্তানের আব্দুল্লাহ শফিক ১১৩ ও মোহাম্মদ রিওজয়ান অনবদ্য ১৩১ রান করেন। 
শ্রীলংকার বিপক্ষে দুর্দান্ত জয়ের পর পথ হারায় পাকিস্তান। এরপর টানা তিন ম্যাচ হারে তারা। ভারতের কাছে ৭ উইকেটে, অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৬২ রানে এবং সর্বশেষ আফগানিস্তানের কাছে ৮ উইকেটে হেরে যায় পাকিস্তান। ওয়ানডে ক্রিকেটে আফগানিস্তানের কাছে প্রথমবারের মত হারের লজ্জা পায় পাকিস্তান। ঐ হারের ধাক্কা কাটিয়ে উঠার পথ খুঁজছে পাকরা। দলের ওপেনার ইমাম উল হক বলেন, ‘আফগানদের কাছে হার আমাদের জন্য সত্যিই হতাশার। আমরা ভালো ক্রিকেট খেলিনি। বিশেষভাবে আমাদের বোলিংটা ভালো হচ্ছে না। আশা করবো, বোলাররা দ্রুতই নিজেদের ছন্দে ফিরবে।’
পাকিস্তানের ব্যাটিং আশানুরুপ হলেও, বোলাররা নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছে না। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৮২ রান করলেও, প্রতিপক্ষের মাত্র ২ উইকেট শিকার করতে পারে পাক বোলাররা। বিশ^কাপের মঞ্চে বিশে^র অন্যতম সেরা বোলিং লাইনের অফ-ফর্ম অবশ্যই চিন্তার বড় কারন। 
এবার রানের বন্যায় প্রতিপক্ষের বোলারদের ভাসিয়ে দেয়া দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের সামনে বড় পরীক্ষা দিতে হবে পাকিস্তানকে। পরীক্ষা মঞ্চ যেমনই হোক না কেন, জয়ই প্রধান লক্ষ্য পাকিস্তানের। ইমাম বলেন, ‘টানা তিন ম্যাচ হেরে আমরা অনেক বেশি চাপে পড়ে গেছি। এমন চাপকে সড়াতে হয়ে জয় ছাড়া অন্য কোন পথ নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামবো আমরা।’
এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে ৮২বার মুখোমুখি হয়েছে পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা। এরমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ৫১টিতে, পাকিস্তানের জয় ৩০টিতে এবং ১টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। ২০২১ সালের এপ্রিলে সর্বশেষ ওয়ানডেতে দেখা হয়েছিলো দু’দলের। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিলো পাকরা। 
বিশ^কাপে পাঁচবারের দেখায় দক্ষিণ আফ্রিকা জিতেছে ৩বার, পাকিস্তানের জয় ২টিতে। সর্বশেষ দুই দেখায় জয় আছে পাকিস্তানেরই। 
পাকিস্তান দল : বাবর আজম (অধিনায়ক), শাদাব খান, ফখর জামান, ইমাম-উল-হক, আবদুল্লাহ শফিক, মোহাম্মদ রিজওয়ান, সৌদ শাকিল, ইফতিখার আহমেদ, আঘা সালমান, মোহাম্মদ নাওয়াজ, উসামা মির, হারিস রউফ, হাসান আলি, শাহিন শাহ আফ্রিদি ও মোহাম্মদ ওয়াসিম।
দক্ষিণ আফ্রিকা দল : টেম্বা বাভুমা (অধিনায়ক), জেরার্ল্ড কোয়েৎজি, কুইন্টন ডি কক, রেজা হেনড্রিকস, মার্কো জানসেন, এনরিচ ক্লাসেন, কেশব মহারাজ, আইডেন মার্করাম, ডেভিড মিলার, লুঙ্গি এনগিডি, আন্দিলে ফেলুকুওয়াও, কাগিসো রাবাদা, তাবরিজ শামসি, রাসি ভ্যান ডার ডুসেন ও লিজার্ড উইলিয়ামস।