শিরোনাম
ধর্মশালা, ২৮ অক্টোবর ২০২৩ (বাসস) : ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রানের ম্যাচে দারুন জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৭৭১ রান হওয়া টান-টান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে আজ অস্ট্রেলিয়া ৫ রানে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ডকে। এবারের বিশ^কাপের ২৭তম ম্যাচে আজ প্রথমে ব্যাট করে ৩৮৮ রান করে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ৯ উইকেটে ৩৮৩ রান করে ম্যাচ হারে নিউজিল্যান্ড। দু’দলের ইনিংস মিলিয়ে মোট রান হয়েছে ৭৭১। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ রানের বিশ্বরেকর্ড এটি। এতে ভেঙে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলংকার রেকর্ড। গত ৭ অক্টোবর এই বিশ্বকাপের চতুর্থ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলংকা মিলে ৭৫৪ রান করেছিলো।
রাচিন রবীন্দ্রর সেঞ্চুরি ম্লান করে ট্রাভিস হেডের ঝড়ো শতকে চলমান ওয়ানডে বিশ^কাপে নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে চতুর্থ ও বিশ^কাপ ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে শততম ম্যাচ খেলতে নেমে স্মরনীয় জয়ের সাক্ষী হলো অস্ট্রেলিয়া। এই জয়ে ৬ খেলায় ৮ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে পিছিয়ে থেকে টেবিলের চতুর্থস্থানে থাকলো অস্ট্রেলিয়া। ৬ খেলায় ৮ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে থেকে টেবিলের তৃতীয়স্থানেই থাকলো নিউজিল্যান্ড।
ধর্মশালাতে টস জিতে প্রথমে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় নিউজিল্যান্ড। ডেভিড ওয়ার্নারকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে দারুন সূচনা এনে দেন ইনজুরি থেকে সুস্থ হয়ে প্রথমবারের মত এই বিশ^কাপে খেলতে নেমে ট্রাভিস হেড। দু’জনের ঝড়ো হাফ-সেঞ্চুরিতে ১০ ওভারে বিনা উইকেটে ১১৮ রান পেয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। যা ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম ১০ ওভারে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান।
২৮ বলে ওয়ানডেতে ৩২তম ও বিশ^কাপে টানা তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেন ওয়ার্নার। ২৫ বলে ওয়ানডেতে ১৬তম ও এবারের বিশ^কাপে দ্রুততম হাফ-সেঞ্চুরির নজির গড়েন হেড। ১৫তম ওভারে দেড়শ রান স্পর্শ করে অস্ট্রেলিয়া। ওয়ানডেতে উদ্বোধনী জুটিতে দ্রুত দেড়শ রান স্পর্শে এটিই এখন সেরা। ওভারপ্রতি ৯ দশমিক ১৩ রান তুলেছেন তারা। ১৭তম ওভারে স্পিনার রাচিন রবীন্দ্রর বলে ৭৫ রানে থাকা হেডের ক্যাচ ফেলেন গ্লেন ফিলিপস।
২০তম ওভারের প্রথম বলে অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন স্পিনার গ্লেন ফিলিপস। ৫টি চার ও ৬টি ছক্কায় ৬৫ বলে ৮১ রান করে বিদায় নেন ওয়ার্নার। হেডের সাথে ১১৭ বলে ১৭৫ রান যোগ করেন ওয়ার্নার। বিশ^কাপে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে যা চতুর্থ সর্বোচ্চ রান। ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে এটি দ্বিতীয় সেরা।
ওয়ার্নার ফেরার পর ২২তম ওভারে ওয়ানডেতে চতুর্থ সেঞ্চুরি করেন ৫৯ বল খেলা হেড। অসিদের পক্ষে ওয়ানডেতে চতুর্থ দ্রুততম সেঞ্চুরি এটি। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে বিশ^কাপ অভিষেকে সেঞ্চুরি করা পঞ্চম ব্যাটার হলেন হেড। সেঞ্চুরি পূর্ন করার এক ওভার পর ফিলিপসের দ্বিতীয় শিকার হন ১০টি চার ও ৭টি ছক্কায় ৬৭ বলে ১০৯ রান করা হেড।
দলীয় ২শ রানে হেড ফেরার পর ছোট-ছোট ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন মিডল অর্ডার ব্যাটাররা। হেড ফেরায় ওপেনিং থেকে তিন নম্বরে নেমে ৫১ বলে ৩৬ রান করেন মিচেল মার্শ। ১৮ রান করে থামেন স্টিভেন স্মিথ ও মার্নাস লাবুশেন। এতে ৩৯তম ওভারে ২৭৪ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া।
এরপর ষষ্ঠ উইকেটে আগের ম্যাচে ঝড়ো সেঞ্চুরি করা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের সাথে ৩৮ বলে ৫১ এবং সপ্তম উইকেটে অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের সাথে ২২ বলে ৬২ রান যোগ করেন উইকেটরক্ষক জশ ইংলিশ। পেসার জেমস নিশামের করা ৪৮তম ওভারে দু’জনে দু’বার জীবন পেয়ে ৪টি ছক্কায় ২৭ রান তুলেন কামিন্স ও ইংলিশ।
৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৪ বলে ৪১ রান করেন ম্যাক্সওয়েল। ইংলিশ ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৮ বলে করেন ৩৮ রান। কামিন্সের ১৪ বলে ৩৭ রানের ক্যামিও ইনিংসে ২টি চার ও ৪টি ছক্কা ছিলো। এতে ৪ বল বাকী থাকতে সব উইকেট হারিয়ে ৩৮৮ রানের পাহাড় গড়ে অস্ট্রেলিয়া। বিশ^কাপে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রান অসিদের। শেষ ১০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১০৯ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া।
পুরো ইনিংসে ২০টি ছক্কা মারেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা। বিশ^কাপে এক ইনিংসে এটিই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছক্কা। তবে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে এটিই অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ১০ ওভার করে বল করে ফিলিপস ৩৭ ও বোল্ট ৭৭ রানে ৩টি করে উইকেট নেন।
৩৮৯ রানের বিশাল টার্গেটে ৬১ রানের সূচনা করেন নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার ডেভন কনওয়ে ও উইল ইয়ং। কিন্তু দলীয় ৭২ রানের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার পেসার জশ হ্যাজেলউডের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে তারা। কনওয়ে ২৮ ও ইয়ং ৩২ রান করেন।
তৃতীয় উইকেটে বড় জুটির লক্ষ্যে সফল হন রবীন্দ্র ও ড্যারিল মিচেল। ৮৬ বলে ৯৬ রান যোগ হবার পর রবীন্দ্র-মিচেল জুটি ভাঙ্গেন অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার এডাম জাম্পা। পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৫১ বলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫৪ রানে আউট হন মিচেল।
এরপর চতুর্থ উইকেটে অধিনায়ক টম লাথাামের সাথে ৫৪ ও পঞ্চম উইকেটে ফিলিপসের সাথে ৪৩ রান যোগ করেন রবীন্দ্র। লাথাম ২১ ও ফিলিপস ১২ রানে আউট হলেও, ৩৭তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মেরে ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা পান ৭৭ বল খেলা রবীন্দ্র। এতে বিশ^কাপে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে দ্রুততম সেঞ্চুরিতে নিজের রেকর্ডই ভাঙ্গেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আহমেদাবাদে ৮২ বলে শতক করেছিলেন রবীন্দ্র।
এবারের বিশ^কাপেই ক্যারিয়ারের দু’টি সেঞ্চুরি করেন রবীন্দ্র। প্রথমটি বিশ^কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটার। এতে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে একই বিশ^কাপে সর্বোচ্চ ২টিতে সেঞ্চুরিতে গ্লেন টার্নার-মার্টিন গাপটিল ও কেন উইলিয়ামসনের রেকর্ড স্পর্শ করেন রবীন্দ্র। আর বয়স ২৬ বছর হবার আগে একই বিশ^কাপে ২টি সেঞ্চুরিতে ভারতের শচীন টেন্ডুলকারের পরই নাম লেখালেন তিনি। টেন্ডুলকার ২২ বছর ও রবীন্দ্র ২৩ বছর বয়সে এই নজির গড়েন।
সেঞ্চুরির পর ইনিংস বড় করার চেষ্টায় বেশি দূর যেতে পারেননি রবীন্দ্র। অস্ট্রেলিয়ান পেসার কামিন্সের শিকার হবার হন ৯টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৮৯ বলে ১১৬ রান করা এই ব্যাটার।
৪১তম ওভারে দলীয় ২৯৩ রানে ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে রবীন্দ্রর আউটের পর নিউজিল্যান্ডের জয়ের আশা ধরে রেখেছিলেন জেমস নিশাম। সপ্তম উইকেটে মিচেল স্যান্টনারের সাথে ১৯ বলে ২৭ এবং অষ্টম উইকেটে ম্যাট হেনরির সাথে ১৯ বলে ২৬ রান যোগ করেন তিনি। স্যান্টনার ১৭ ও হেনরি ৯ রানে ফিরেন।
জয়ের জন্য শেষ ৩ ওভারে ৪৩ রানের সমীকরন দাঁড় করায় নিউজিল্যান্ড। ৪৮তম ওভারে ১১ এবং ৪৯তম ওভারে ১৩ রান আসে। এতে শেষ ওভারে ১৯ রান প্রয়োজন পড়ে কিউইদের। স্টার্কের করা শেষ ওভারের প্রথম ৪ বলে ১২ রান পায় নিউজিল্যান্ড। শেষ ২ বলে ৭ রানের সমীকরণ নিউজিল্যান্ডের সামনে। পঞ্চম বলে ২ রান নিতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষক ইংলিশের দারুণ দক্ষতায় রান আউট হলে নিশামের ৩টি করে চার-ছক্কায় ৩৯ বলে ৫৮ রানের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। শেষ বলে ছক্কার প্রয়োজনে কোন রান পাননি শেষ ব্যাটার লুকি ফার্গুসন। ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩৮৩ রান করে ম্যাচ হারে নিউজিল্যান্ড।
অস্ট্রেলিয়ার জাম্পা ৭৪ রানে ৩টি, হ্যাজেলউড-কামিন্স ২টি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
অস্ট্রেলিয়া : ৩৮৮/১০, ৪৯.২ ওভার (হেড ১০৯, ওযার্নার ৮১, ফিলিপস ৩/৩৭)।
নিউজিল্যান্ড : ৩৮৩/৯, ৫০ ওভার (রবীন্দ্র ১১৬, নিশাম ৫৮, জাম্পা ৩/৭৪)।
ফল : অস্ট্রেলিয়া ৫ রানে জয়ী।