শিরোনাম
কোলকাতা, ৩১ অক্টোবর, ২০২৩ (বাসস) : ব্যাটিং-বোলিং নৈপুন্যে নিজেদের সপ্তম ম্যাচে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ওয়ানডে বিশ^কাপের সেমিফাইনালের দৌঁড়ে ভালোভাবেই টিকে থাকলো পাকিস্তান। টানা চার ম্যাচ হারের পর টুর্নামেন্টে তৃতীয় জয়ে ৭ খেলায় ৬ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে টেবিলের পঞ্চমস্থানে উঠলো পাকিস্তান। ৮ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় ও চতুর্থস্থানে আছে যথাক্রমে- নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। পাকিস্তানের সমান ৬ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠস্থানে আছে আফগানিস্তান।
পাকিস্তানের কাছে হেরে যাওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ^কাপের লিগ পর্ব থেকে বিদায় নিশ্চিত হলো বাংলাদেশের। টানা ষষ্ঠ হারে ৭ খেলায় ২ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে টেবিলের নবমস্থানে থাকলো বাংলাদেশ। ৬ খেলায় ২ পয়েন্ট আছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডেরও। কিন্তু রান রেটে পিছিয়ে টেবিলের তলানিতে ইংলিশরা।
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাফ-সেঞ্চুরি সত্বেও নিজেদের সপ্তম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৪৫ দশমিক ১ ওভারে ২০৪ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। পাঁচ নম্বরে নেমে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৬ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। জবাবে আব্দুল্লাহ শফিকের ৬৮ ও ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া ফখর জামানের ৮১ রানের কল্যাণে ১০৫ বল বাকী রেখে জয়ের লক্ষে পৌঁছে পাকিস্তান। এই নিয়ে চতুর্থবার বিশ^কাপে ১শর বেশি বল বাকী রেখে ম্যাচ জিতলো পাকিস্তান।
কোলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আগের ম্যাচের একাদশ থেকে একটি পরিবর্তন মাহেদি হাসানের জায়গায় তাওহিদ হৃদয়কে অন্তর্ভুক্ত করে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ।
ব্যাট হাতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। রানের খাতা খোলার অগেই পাকিস্তান পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে লেগ বিফোর আউট হন তানজিদ হাসান। রিভিউ নিলেও লাভ হয়নি তানজিদের।
তানজিদকে ফিরিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে ওয়ানডেতে দ্রুততম ১শ উইকেট শিকারের মালিক হন আফ্রিদি। এজন্য ৫১ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ৪২ ম্যাচে ১শ উইকেট নিয়ে এই রেকর্ডের মালিক নেপালের সন্দীপ লামিচানে। তবে অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ককে পিছনে ফেলে পেস বোলার হিসেবে এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে দ্রুত একশ উইকেটের মালিক বনে যান আফ্রিদি।
দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে রানের খাতা খোলেন তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত। পরের ওভারে আফ্রিদির বলে মিড উইকেটে উসামা মীরকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৪ রান করা শান্ত।
ব্যাটিংয়ে প্রমোশন পেয়ে চার নম্বরে নামা মুশফিকুর রহিমও সুবিধা করতে পারেননি । পেসার হারিস রউফের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ৫ রান করা মুশফিক।
২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এ ম্যাচ নিয়ে এবারের বিশ^কাপে পাওয়ার প্লেতে সবচেয়ে ১৬ উইকেট হারালো টাইগাররা।
উইকেট পতন ঠেকাতে ইনফর্ম মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে পাঁচ নম্বরে পাঠায় বাংলাদেশ দল। উইকেটে গিয়ে আরেক ওপেনার লিটন দাসের সাথে জুটি বাঁধেন মাহমুদুল্লাহ। দেখেশুনে খেলে দলের রানের চাকা সচল করেন তারা। ১২তম ওভারে ৫০ রান পায় বাংলাদেশ। দলের রান অর্ধশতকে পৌঁছে দিয়ে স্বাচ্ছেন্দ্যে খেলতে থাকেন লিটন ও মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু ২১তম ওভারে খেই হারান লিটন। স্পিনার ইফতিখারের বলে মিড অনে আাগ সালমানকে ক্যাচ দিলে ৬টি চারে ৬৪ বলে ৪৫ রান করা লিটনের বিদায় ঘটে। মাহমুদুল্লাহ-লিটন জুটি ৮৯ বলে ৭৯ রান করেন।
লিটনের বিদায়ে ক্রিজে আসেন সাকিব। মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে আবারও বড় জুটির চেষ্টা করেন সাকিব। ২৬তম ওভারের শেষ বলে ওয়ানডেতে ২৮তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান মাহমুদুল্লাহ। এজন্য ৫৮ বল খেলেছেন তিনি।
৩১তম ওভারে আফ্রিদির বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা মাহমুদুল্লাহ। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৭০ বলে ৫৬ রান করেন অভিজ্ঞ এ ব্যাটার।
মাহমুদুল্লাহর বিদায়ে ক্রিজে আসেন গত দুই ম্যাচ একাদশে সুযোগ না পাওয়া হৃদয়। ৩২তম ওভারে স্পিনার মীরের দ্বিতীয় বলে স্লগ সুইপে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারেন হৃদয়। পরের ডেলিভারিতে স্লিপে ইফতিখারকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ৭ রান করা হৃদয়।
১৪০ রানে ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে হৃদয়ের আউটের পর মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন সাকিব। ৩৭তম ওভারে ইফতিখারের তিন বলে টানা তিনটি চার মেরে এবারের আসরে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন টাইগার দলপতি।
কিন্তুদলীয় ১৮৫ রানে রউফের শর্ট বলে তুলে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে সালমানকে ক্যাচ দেন সাকিব। ৪টি চারে ৬৪ বল খেলে এবারের আসরে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন তিনি।
সপ্তম ব্যাটার হিসেবে ৪০তম ওভারে সাকিবের আউটের পর, পাকিস্তানের পেসার পেসার মোহাম্মদ ওয়াসিমের তোপে বেশি দূর যেতে পারেনি বাংলাদেশ। লোয়ার অর্ডারের শেষ ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ৪৫ দশমিক ১ ওভারে ২০৪ রানে অলআউট কর দেন ওয়াসিম। ১৯ রানে শেষ ৪ উইকেট হারায় টাইগাররা। লোয়ার অর্ডারে ১টি করে চার-ছক্কায় ৩০ বলে ২৫ রান করেন মিরাজ। পাকিস্তানের আফ্রিদি ২৩ রানে ও ওয়াসিম ৩১ রানে ৩টি করে উইকেট নেন।
২০৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে তাড়াহুড়া না করে ধীরে-সুস্থে খেলে পাকিস্তানের দুই ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ও ফখর জামান ১০ ওভারে ৫২ রান তোলেন। তবে দলকে ১২৭ বলে ১২৮ রানের সূচনা এনে দেন শফিক ও জামান। বিশ^কাপে এই নিয়ে ষষ্ঠবারের মত উদ্বোধনী জুটিতে শতরান পেল পাকিস্তান। এরমধ্যে পাঁচবারই রান তাড়ায়।
২২তম ওভারের প্রথম বলে শফিককে লেগ বিফোর আউট করে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন মিরাজ। ওয়ানডেতে চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংসে ৬৯ বল খেলে ৯টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৮ রান করেন শফিক।
তিন নম্বরে সুবিধা করতে পারেননি পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। মিরাজের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অনে মাহমুদুল্লাহকে ক্যাচ দেন ১৬ বলে ৯ রান করা বাবর।
শফিক ও বাবরের পর জামানকে শিকার করে বাংলাদেশের সপ্তম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ১শ উইকেট পূর্ণ করেন মিরাজ। নিজেদের প্রথম ম্যাচের পর পাকিস্তান একাদশে জায়গা হারানো জামান ৭৪ বল খেলে ৩টি চার ও ৭টি ছক্কায় ৮১ রান করেন।
জামান যখন ফিরেন জয় থেকে ৩৬ রান দূরে ছিলো পাকিস্তান। চতুর্থ উইকেটে ৩০ বলে অবিচ্ছিন্ন ৩৬ রান তুলে চার ম্যাচ পর পাকিস্তানকে জয়ের স্বাদ দেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার। ৪টি চারে রিজওয়ান ২৬ ও ২টি বাউন্ডারিতে ইফতিখার ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের মিরাজ ৬০ রানে ৩ উইকেট নেন।
আগামী ৬ নভেম্বর দিল্লিতে নিজেদের অষ্টম ম্যাচে শ্রীলংকার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
স্কোর কার্ড : (টস-বাংলাদেশ)
বাংলাদেশ ইনিংস :
তানজিদ এলবিডব্লু ব আফ্রিদি ০
লিটন ক সালমান ব ইফতিখার ৪৫
শান্ত ক মীর ব আফ্রিদি ৪
মুশফিক ক রিজওয়ান ব রউফ ৫
মাহমুদুল্লাহ ব আফ্রিদি ৫৬
সাকিব ক সালমান ব রউফ ৪৩
হৃদয় ক ইফতিখার ব মীর ৭
মিরাজ ব ওয়াসিম ২৫
তাসকিন ব ওয়াসিম ৬
মুস্তাফিজুর ব ওয়াসিম ৩
শরিফুল অপরাজিত ১
অতিরিক্ত (লে বা-৪, ও-৫) ৯
মোট (অলআউট, ৪৫.১ ওভার) ২০৪
উইকেট পতন : ১/০ (তানজিদ), ২/৬ (শান্ত), ৩/২৩ (মুশফিক), ৪/১০২ (লিটন), ৫/১৩০ (মাহমুদুল্লাহ), ৬/১৪০ (হৃদয়), ৭/১৮৫ (সাকিব), ৮/২০০ (মিরাজ), ৯/২০১ (তাসকিন), ১০/২০৪ (মুস্তাফিজুর)।
পাকিস্তান বোলিং :
আফ্রিদি : ৯-১-২৩-৩ (ও-২),
ইফতিখার : ১০-০-৪৪-১,
রউফ : ৮-০-৩৬-২ (ও-২),
ওয়াসিম : ৮.১-১-৩১-৩,
মীর : ১০-০-৬৬-১ (ও-১)।
পাকিস্তান ইনিংস :
শফিক এলবিডব্লু ব মিরাজ ৬৮
জামান ক হৃদয় ব মিরাজ ৮১
বাবর ক মাহমুদুল্লাহ ব মিরাজ ৯
রিজওয়ান অপরাজিত ২৬
ইফতিখার অপরাজিত ১৭
অতিরিক্ত (লে বা-২, ও-২) ৪
মোট (৩ উইকেট, ৩২.২ ওভার) ২০৫
উইকেট পতন : ১/১২৮ (শফিক), ২/১৬০ (বাবর), ৩/১৬৯ (জামান)।
বাংলাদেশ বোলিং :
তাসকিন : ৬-১-৩৬-০,
শরিফুল : ৪-১-২৫-০ (ও-১),
মিরাজ : ৯-০-৬০-৩,
মুস্তাফিজুর : ৭-০-৪৭-০ (ও-১),
সাকিব : ৫.৩-০-৩০-০,
শান্ত : ১-০-৫-০।
ফল : পাকিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী।