বাসস
  ০১ নভেম্বর ২০২৩, ২২:১৯

২৪ বছর পর বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমির আরও কাছে দক্ষিণ আফ্রিকা

পুনে, ১ নভেম্বর ২০২৩ (বাসস) : কুইন্টন ডি কক ও রাসি ভ্যান ডার ডুসেনের জোড়া সেঞ্চুরিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের সপ্তম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ১৯০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।  এই জয়ে  সেমিফাইনালের আরও কাছে পৌঁছে গেছে প্রোটিয়ারা।  রান বিবেচনায় প্রোটিয়াদের কাছে এটিই সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হার নিউজিল্যান্ডের। ১৯৯৯ সালের পর বিশ^কাপে এই প্রথমবার নিউজিল্যান্ডকে হারালো দক্ষিণ আফ্রিকা।
৭ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে থেকে শীর্ষে উঠে সেমির দ্বারপ্রান্তে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৬ খেলায় ১২ পয়েন্ট আছে ভারতেরও। রান রেটে পিছিয়ে দ্বিতীয়স্থানে নেমে গেল ভারত। ৭ খেলায় ৮ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে পিছিয়ে পড়ায় চতুর্থস্থানে নেমে গেল নিউজিল্যান্ড। এ ম্যাচ হারলেও সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ এখনও আছে নিউজিল্যান্ডের।
ডি ককের ১১৪ ও ডুসেনের ১৩৩ রানের ভর প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ৩৫৭ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের তোপে ৮৭ বল বাকী থাকতে ১৬৭ রানে গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড।
পুনেতে টস জিতে প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় নিউজিল্যান্ড। ইনফর্ম কুইন্টন ডি কককে নিয়ে উদ্বোধনী জুটিতে ৫১ বলে ৩৮ রান তুলে ফিরেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক তেম্বা বাভুমা। ইনিংসের নবম ওভারে নিউজিল্যান্ডের পেসার ট্রেন্ট বোল্টের শিকার হবার আগে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৮ বলে ২৪ রান করেন বাভুমা।
অধিনায়ক ফেরার পরের ওভারে পেসার টিম সাউদির বলে গ্লেন ফিলিপসের হাতে জীবন পান ১২ রানে থাকা ডি কক। জীবন পেয়ে রাসি ভ্যান ডার ডুসেনকে নিয়ে ২১তম ওভারে দলের রান ১শতে নেন ডি কক। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের দারুনভাবে সামাল দিয়ে দলের রানের চাকা সচল রেখে ৩৬তম ওভারের শেষ বলে ছক্কা মেরে এবারের বিশ^কাপে চতুর্থ ও ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২১তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ডি কক। সেঞ্চুরি পূরন করতে  ১০৩ বল খেলেন এ তারকা ব্যাটার। এ ইনিংসের মাধ্যমে  বিশ^কাপের এক আসরে  দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চার সেঞ্চুরি করা  শ্রীলংকার কুমার সাঙ্গাকারার রেকর্ড স্পর্শ করেন  ডি কক। ২০১৫  ৪টি সেঞ্চুরি করেছিলেন সাঙ্গাকারা। সর্বোচ্চ ৫টি সেঞ্চুরির মালিক ভারতের রোহিত শর্মা।
সেঞ্চুরির পর নিজের ইনিংসটি খুব বেশি বড় করতে পারেননি ডি কক। ৪০তম ওভারে সাউদির বলে আউট হন ১০টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১১৬ বলে ১১৪ রান করা ডি কক। এই ইনিংসের সুবাদে এবারের আসরে  এ পর্যন্ত  সর্বোচ্চ  ৫৪৫ রানের মালিক হন ডি কক।  বিশ^কাপের এক আসরে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও গড়লেন তিনি। এছাড়া এক আসরে উইকেটরক্ষক হিসেবে সর্বোচ্চ রান ও সর্বোচ্চ ছক্কা মালিকও এখন ডি কক।
দ্বিতীয় উইকেটে ডুসেনের সাথে ১৮৯ বলে ২০০ রান যোগ করেন ডি কক। ওয়ানডেতে যেকোন উইকেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এটি সর্বোচ্চ রানের জুটি দক্ষিণ আফ্রিকার। এই নিয়ে এবারের আসরে দ্বিতীয়বার ২শ রানের জুটি গড়লেন ডি কক-ডুসেন। এর আগে শ্রীলংকার বিপক্ষে ১৭৪ বলে ২০৪ রান করেছিলেন তারা। এতে এক আসরে সর্বোচ্চ দু’বার জুটিতে ২শ রান করার ক্ষেত্রে শ্রীলংকার তিলকরতেœ দিলশান ও উপুল থারাঙ্গার রেকর্ড স্পর্শ করেন  ডি কক-ডুসেন। ২০১১ সালের বিশ^কাপে দু’বার জুটিতে ২শ রান করেছিলেন দিলশান ও থারাঙ্গা।
এবারের আসরে এই নিয়ে রেকর্ড সপ্তম সেঞ্চুরির জুটি গড়লো প্রোটিয়ারা। অন্য কোন দল চারটির বেশি সেঞ্চুরির জুটি গড়তে পারেনি।
৪২তম ওভারে ওয়ানডেতে ষষ্ঠ ও এবারের বিশ^কাপে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন  ১০১ বল খেলা ডুসেন। ভারত বিশ^কাপে  আট সেঞ্চুরির করলো দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা। এতে এক আসরে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিতে শ্রীলংকার পাশে বসলো প্রোটিয়ারা। ২০১৫ সালেও আটটি সেঞ্চুরি করেছিলো শ্রীলংকার ব্যাটাররা।
সেঞ্চুরির পর নিউজিল্যান্ডের বোলারদের উপর চড়াও হন ডুসেন। তার সাথে দ্রুত রান তোলায় মনোযোগী হন ডেভিড মিলার। এতে ৪৬তম ওভারে ৩শ রান পেয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
৪৮তম ওভারে সাউদির  প্রথম বলে  আউট হওয়ার আগে  ৯টি চার ও ৫টি ছক্কায় ১৩৩ রান করেন ডুসেন। মিলারের সাথে ৪৩ বলে ৭৮ রানের ঝড়ো জুটি গড়েন ডুসেন।
দলীয় ৩১৬ রানে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে ডুসেন ফেরার পর হেনরিচ ক্লাসেনের সাথে ১৬ বলে ৩৫ রান যোগ করে দক্ষিণ আফ্রিকার রান সাড়ে ৩শ পার করেন মিলার। ২৯ বলে ওয়ানডেতে ২৪তম অর্ধশতক করেন মিলার। ইনিংসের শেষ ওভারের পঞ্চম বলে পেসার জেমস নিশামের বলে আউট হন তিনি। ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৩০ বলে ৫৩ রান করেন মিলার। নিশামের করা শেষ ওভারে ১৮ রান পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ ১০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১১৯ রান যোগ করে তারা। এতে ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ৩৫৭ রানের বড় সংগ্রহ পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এটিই সর্বোচ্চ দলীয় রান প্রোটিয়াদের। বিশ^কাপে এই নিয়ে  ইনিংসে সর্বোচ্চ ৯বার সাড়ে ৩শ রান করে অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড স্পর্শ করলো  প্রোটিয়ারা।
এ ম্যাচে ১৫টিসহ বিশ^কাপের এক আসরে সর্বোচ্চ ৮২টি ছক্কা বিশ^রেকর্ড গড়ে প্রোটিয়ারা। ২০১৯ সালে ৭৬টি ছক্কা মেরে বিশ^রেকর্ডের মালিক হয়েছিলো ইংল্যান্ড।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে বল হাতে সাউদি ২টি, বোল্ট-নিশাম ১টি করে উইকেট নেন।
৩৫৮ রানের টার্গেটে ভালো শুরু করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার মার্কো জানসেনের করা তৃতীয় ওভারে দলীয় ৮ রানে বিদায় নেন কিউই ওপেনার ডেভন কনওয়ে(২)।
শুরুর ধাক্কা সামলে উঠতে বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলেন আরেক ওপেনার উইল ইয়ং ও রাচিন রবীন্দ্র। কিন্তু জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরিও পার করতে পারেননি তারা। জানসেনের দ্বিতীয় আঘাতে ব্যক্তিগত  ৯ রানে আউট হন রবীন্দ্র। দ্বিতীয় উইকেটে ৩৬ বলে ৩৭ রান যোগ করেন ইয়ং-রবীন্দ্র।
দলীয় ৪৫ রানে রবীন্দ্র ফেরার পর নিয়মিত বিরতি দিয়ে উইকেট হারাতে থাকে নিউজিল্যান্ড। স্পিনার কেশব মহারাজ, দুই পেসার কাগিসো রাবাদা ও জেরাল্ড কোয়েৎজির তোপে ১শ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। ইয়ংকে ৩৩ রানে কোয়েৎজি, ড্যারিল মিচেলকে ২৪ রানে ও স্যান্টনারকে ৭ রানে মহারাজ এবং অধিনায়ক টম লাথামকে ৪ রানে রাবাদা আউট করেন।  
১শর পরপরই গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়লেও, গ্লেন ফিলিপসের ৫০ বলে ৬০ রানের সুবাদে বিশ^কাপে রেকর্ড হারের লজ্জা থেকে রক্ষা পায় নিউজিল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত ৩৫ দশমিক ৩ ওভারে ১৬৭ রানে গুটিয়ে যায় কিউইরা। দক্ষিণ আফ্রিকার মহারাজ ৪ ও জানসেন ৩ উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
দক্ষিণ আফ্রিকা : ৩৫৭/৪, ৫০ ওভার (ডুসেন ১৩৩, ডি কক ১১৪, সাউদি ২/৭৭)।
নিউজিল্যান্ড : ১৬৭/১০, ৩৫.৩ ওভার (ফিলিপস ৬০, ইয়ং ৩৩, মহারাজ ৪/৪৬)।
ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯০ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: রাসি ভ্যান ডার ডুসেন(দক্ষিণ আফ্রিকা)।