শিরোনাম
মুম্বাই, ২ নভেম্বর ২০২৩ (বাসস) : প্রথম দল হিসেবে চলমান ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে স্বাগতিক ভারত। ব্যাটিং-বোলিং নৈপুন্যে ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের সপ্তম ম্যাচে আজ ভারত ৩০২ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে শ্রীলংকাকে। রান বিবেচনায় বিশ^কাপ ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় বড় জয়।
এই জয়ে লিগ পর্বে ২ ম্যাচ বাকী থাকতে ৭ খেলায় অংশ নিয়ে সবগুলোতে জিতে ১৪ পয়ন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে উঠে সেমির টিকিট নিশ্চিত করেছে ভারত। ৭ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের সপ্তমস্থানে আছে শ্রীলংকা। সেমির আশা অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে লংকানদের।
তিন ব্যাটারের হাফ-সেঞ্চুরির উপর ভর করে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৫৭ রান করে স্বাগতিক ভারত। শুভমান গিল ৯২, বিরাট কোহলি ৮৮ ও শ্রেয়াস আইয়ার ৮২ রান করেন। শ্রীলংকার বাঁ-হাতি পেসার দিলশান মাদুশঙ্কা ১০ ওভারে ৮০ রানে ৫ উইকেট নেন। জবাবে মোহাম্মদ সামির আগুন বোলিংয়ে ১৯ দশমিক ৪ ওভারে ৫৫ রানে অলআউট হয় শ্রীলংকা। বিশ^কাপে এটিই সর্বনি¤œ রান শ্রীলংকার। ১৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন সামি।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় শ্রীলংকা। ইনিংসের প্রথম বলেই বাউন্ডারি মারেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। পরের ডেলিভারিতে পেসার দিলশান মাদুশঙ্কার বলে বোল্ড হন ৪ রান করা রোহিত। এই বিশ^কাপে প্রথম ওভারে আউট হওয়া পঞ্চম ব্যাটার হলেন রোহিত।
রোহিতের বিদায়ে ক্রিজে আরেক ওপেনার শুভমান গিলের সঙ্গী হন বিরাট কোহলি। পঞ্চম ওভারে মাদুশঙ্কার বলে গিলের ক্যাচ ফেলেন চারিথ আসালঙ্কা। পরের ওভারের প্রথম বলে নিজের ডেলিভারিতে নিজেই কোহলির ক্যাচ মিস করেন মাদুশঙ্কা।
কোহলি ১০ ও গিল ৮ রানে জীবন পেয়ে স্বাচ্ছেন্দ্যে ভারতের রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন। ১৭তম ওভারে ভারতের রান ১শতে নেন তারা। ঐ ওভারে ওয়ানডেতে ৭০তম ও বিশ^কাপে ১৩তম হাফ-সেঞ্চুরি পূরন করেন ৫০ বল খেলা কোহলি। বিশ^কাপে সর্বোচ্চ হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংসে দ্বিতীয়স্থানে উঠেছেন তিনি। ২১টি হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংস নিয়ে সবার উপরে ভারতের শচীন টেন্ডুলকার।
১৯তম ওভারে ওয়ানডেতে ১১তম অর্ধশতক করেন গিল। এজন্য ৫৫ বল খেলেছেন তিনি।
হাফ-সেঞ্চুরির পর নিজেদের ইনিংস বড় করার দিকে মনোযোগী হন গিল-কোহলি। ২৯তম ওভারের মধ্যে আশির ঘরে পৌঁছে যান তারা। ৩০তম ওভারের শেষ বলে মাদুশঙ্কার বলে আপার কাট শট খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ১১টি চার ও ২টি ছক্কায় ৯২ বলে ৯২ রান করা গিল । দ্বিতীয় উইকেটে কোহলি-গিল ১৭৯ বলে ১৮৯ রান যোগ করেন।
গিলকে হারানোর হতাশা ভুলতে না ভুলতে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন কোহলি। ৩২তম ওভারে মাদুশঙ্কার স্লোয়ারে পাথুম নিশাঙ্কাকে ক্যাচ দেন ১১টি চারে ৯৪ বলে ৮৮ রান করা কোহলি । এই ইনিংস খেলার পথে এ বছর ১ হাজার রান পূর্ণ করেন কোহলি। এই নিয়ে অষ্টমবার এক বছরে ১হাজার রান করলেন তিনি। এর মাধ্যমে ভাঙলো টেন্ডুলকারের বিশ^ রেডর্ক ভাঙ্গেন কোহলি। এর আগে সাত বছর ১ হাজার রান করে সবার ওপড়ে ছিলেন টেন্ডুলকার।
দলীয় ১৯৬ রানের মধ্যে গিল-কোহলি ফেরার পর মিডল অর্ডারে দ্রুত দুই উইকেট হারায় ভারত। লোকেশ রাহুল ২১ ও সূর্যকুমার যাদব ১২ রানে ফিরেন। তবে এক প্রান্ত আগলে ভারতের বড় সংগ্রহের পথ তৈরি করছিলেন চার নম্বরে নামা শ্রেয়াস আইয়ার। চতুর্থ উইকেটে রাহুলের সাথে ৪৭ বলে ৬০ রানের জুটির পর ষষ্ঠ উইকেটে রবীন্দ্র জাদেজার সাথে ৩৬ বলে ৫৭ রান যোগ করেন আইয়ার।
৪৩তম ওভারে ওয়ানডেতে ১৬তম ও এই বিশ^কাপে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে ৩৬ বল খেলেন আইয়ার। হাফ-সেঞ্চুরির পরও দ্রুত রান তুলতে থাকেন তিনি। ৪৮তম ওভারের প্রথম দুই বলে দু’টি ছক্কা মারেন আইয়ার। তৃতীয় বলে মাদুশঙ্কার পঞ্চম শিকার হওয়ার আগে ৩টি চার ও ৬টি ছক্কায় ৫৬ বলে ঝড়ো ৮২ রান করেন আইয়ার।
শেষদিকে জাদেজার ১টি করে চার-ছক্কায় ২৪ বলে ৩৫ রানের কল্যাণে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে বিশ^কাপ ইতিহাসে শ্রীলংকার বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৫৭ রানের সংগ্রহ পায় ভারত।
শ্রীলংকার সফল বোলার ছিলেন মাদুশঙ্কা ১০ ওভারে ৮০ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন । ১৩ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এই প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন মাদুশঙ্কা। শ্রীলংকার চতুর্থ বোলার হিসেবে বিশ^কাপে ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন তিনি। এ ম্যাচের দুর্দান্ত বোলিংয়ে এই বিশ^কাপে ১৮ উইকেট নিয়ে এখন সবার উপরে এখন এই বাঁ-হাতি পেসার।
৩৫৮ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ভারতীয় পেসারদের তোপের মুখে পড়ে শ্রীংলংকা। চতুর্থ ওভারে ৩ রানে ৪ উইকেট হারায় তারা। ইনিংসের প্রথম বলেই নিশাঙ্কাকে শূণ্যতে ফেরান জসপ্রিত বুমরাহ। এরপর দিমুথ করুনারতেœকে শূণ্য, অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসকে ১ ও সাদিরা সামারাবিক্রমাকে খালি হাতে বিদায় দেন মোহাম্মদ সিরাজ।
বুমরাহ-সিরাজের পর তোপের পর শ্রীলংকার মিডল অর্ডারে ধ্বস নামা মোহাম্মদ সামি। শ্রীলংকার পরের ৫ উইকেট তুলে নেন তিনি। এতে ৪৯ রানে ৯ উইকেট হারায় শ্রীলংকা।
শ্রীলংকার শেষ ব্যাটার মাদুশঙ্কাকে ৫ রানে বিদায় দেন জাদেজা। এতে ১৯ দশমিক ৪ ওভারে ৫৫ রানে অলআউট হয় লংকানরা। গত সেপ্টেম্বর এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ১৫ দশমিক ২ ওভারে ৫০ রানে অলআউট হয়েছিলো শ্রীলংকা।
এ ম্যাচে শ্রীলংকার পক্ষে সর্বোচ্চ ১৪ রান করেন রাজিথা। ভারতের সামি ৫ ওভারে ১৮ রানে ৫ উইকেট নেন তিনি। ৯৭ ম্যাচের ওয়ানডেতে চতুর্থবারের মত ও এবারের বিশ^কাপে দ্বিতীয়বারের মত ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন সামি। এতে বিশ^কাপ ইতিহাসে ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৫ উইকেটের মালিক এখন সামি। বিশ^কাপে সর্বোচ্চ ৩বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্কের রেকর্ড স্পর্শ করলেন সামি। এছাড়া সিরাজ ৩টি, বুমরাহ-জাদেজা ১টি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ভারত : ৩৫৭/৪, ৫০ ওভার (গিল ৯২, কোহলি ৮৮, মাদুশঙ্কা ৫/৮০)।
শ্রীলংকা : ৫৫/১০, ১৯.৪ ওভার (রাজিথা ১৪, ম্যাথুজ ১২, সামি ৫/১৮)।
ফল : ভারত ৩০২ রানে জয়ী।