বাসস
  ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ২৩:৩২
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:৩৮

ম্যাক্সওয়েলের মহাকাব্যিক ডাবল-সেঞ্চুরিতে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

মুম্বাই, ৭ নভেম্বর ২০২৩ (বাসস) : গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের মহাকাব্যিক ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংসে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার পর তৃতীয় দল হিসেবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত হলো পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার। আজ নিজেদের অষ্টম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেটে হারিয়েছে আফগানিস্তানকে।
আফগানিস্তানের ছুঁড়ে দেয়া ২৯২ রানের জবাবে ৯১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। সেখানে থেকে অষ্টম উইকেটে অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে নিয়ে ১৭০ বলে অবিচ্ছিন্ন ২০২ রান যোগ করে দলকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দেন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া ম্যাক্সওয়েল। বিশ^কাপে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ ১২৮ বলে ২০১ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন এ তারকা ব্যাটার।
এই জয়ে ৮ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয়স্থানে থেকে সেমির টিকিট পেল টুর্নামেন্টে প্রথম দুই ম্যাচে হেরে যাওয়া অস্ট্রেলিয়া। এ ম্যাচ হারলেও সেমির আশা এখনও বেঁচে আছে আফগানিস্তানের। ৮ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ষষ্ঠস্থানে আছে আফগানরা।
মুম্বাইয়ে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত নেয় আফগানিস্তান। দলকে ভালো শুরু এনে দেয়ার পথে ছিলেন আফগান দুই ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম। ৮ ওভারে ৩৮ রান যোগ হবার পর বিচ্ছিন্ন হন তারা। ২টি চারে ২১ রান করা গুরবাজকে শিকার করেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার জশ হ্যাজেলউড।
এরপর অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন ইব্রাহিম ও ইনফর্ম রহমত শাহ। ১৮তম ওভারে ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরি করেন জাদরান। তার ৬২ বলের হাফ-সেঞ্চুরিতে ২১তম ওভারে ১শ রান পার করে আফগানিস্তান।
২৫তম ওভারে অস্ট্রেলিয়াকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন স্পিনার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ৩০ রান করা রহমতকে শিকার করেন ম্যাক্সওয়েল। দ্বিতীয় উইকেটে ১০০ বলে ৮৩ রানের জুটি গড়েন রহমত-ইব্রাহিম। চলতি বিশ্বকাপে এই নিয়ে তৃতীয়বার দ্বিতীয় উইকেটে হাফ-সেঞ্চুরির জুটি গড়লেন তারা।
রহমত ফেরার পর ক্রিজে ইব্রাহিমের সঙ্গী হন অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শাহিদি। এই জুটি থেকেও হাফ-সেঞ্চুরি আসে। কিন্তু জুটিতে ধীরলয়ে খেলেছেন দু’জনই। ৪৩ বলে ২৬ রান করা শাহিদিকে বোল্ড করে জুটি ভাঙ্গেন পেসার মিচেল স্টার্ক। এই আউটে বিশ^কাপে সবচেয়ে বেশি ২৬বার প্রতিপক্ষ ব্যাটারকে বোল্ড করা বোলার হিসেবে রেকর্ড দখলে নেন স্টার্ক। শাহিদি-ইব্রাহিম ৭৬ বলে ৫২ রান যোগ করেন। সর্বশেষ চার ম্যাচেই তৃতীয় উইকেটে আফগানরা হাফ-সেঞ্চুরি পেয়েছিলো।
পাঁচ নম্বরে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন আজমতুল্লাহ ওমরজাই। স্টার্ক ও স্পিনার এডাম জাম্পাকে ২টি ছক্কাও মারেন তিনি। কিন্তু ভালো শুরুর পরও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি তিনি। জাম্পার বলে শিকার হবার আগে ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৮ বলে ২২ রান করেন ওমরজাই।
ওমরজাই ফেরার পর ৪৪তম ওভারে ২৭ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে পঞ্চম সেঞ্চুরি পূর্ন করেন ইব্রাহিম। বিশ^কাপে প্রথম আফগান ব্যাটার হিসেবে সেঞ্চুরি করতে ১৩১ বল খেলেন তিনি। আফগানিস্তানের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫টি সেঞ্চুরি করলেন ইব্রাহিম। বয়স বিবেচনায় ২১ বছর ৩৩০ দিনে সর্বকনিষ্ট ব্যাটার তালিকায়  বিশ^কাপ সেঞ্চুরিতে চতুর্থস্থানে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।
সেঞ্চুরির পর দলের রান গতি বাড়িয়েছেন ইব্রাহিম। পাশাপাশি ইনিংসের শেষ দিকে ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন রশিদ খান। এতে ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ২৯১ রানের বড় সংগ্রহ পায় আফগানিস্তান। বিশ^কাপ এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডেতে এটিই সর্বোচ্চ রান আফগানদের।
৮টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১৪৩ বলে  ১২৯ রানে অপরাজিত থাকেন  ইব্রাহিম। ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় মাত্র ১৮ বলে ৩৫ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন রশিদ। অস্ট্রেলিয়ার হ্যাজেলউড ২টি, স্টার্ক-ম্যাক্সওয়েল ও জাম্পা ১টি করে উইকেট নেন।
২৯২ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই ধাক্কা খায় অস্ট্রেলিয়া। ৩টি চারে ১৮ রান করা ট্রাভিস হেডকে ফিরিয়ে দেন পেসার নাভিন উল হক। মিচেল মার্শকে নিয়ে শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠেন আরেক ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। মারমুখী মেজাজে দ্রুত রান তুলতে থাকেন তারা।
১১ বলে ২৪ রান করে মারমুখি হয়ে ওঠা মার্শকে  ষষ্ঠ ওভারে থামিয়ে আফগানিস্তানকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন নাভিন। ওয়ার্নার-মার্শ  জুটিতে  ২৬ বলে ৩৯ রান যোগ করেন।
দলীয় ৪৩ রানে মার্শের আউট পর বিপদ বাড়ে অস্ট্রেলিয়ার। নিয়মিত বিরতি দিয়ে উইকেট হারিয়ে ৯১ রানে সপ্তম ব্যাটারকে হারায় অসিরা। ওয়ার্নারকে ১৮ ও জশ ইংলিশকে খালি হতে বিদায় দেন পেসার ওমরজাই। ওয়ার্নার-ইংলিশকে পরপর দু’বলে আউট করে হ্যাট্টিকের সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি ওমারজাই। এই নিয়ে ষষ্ঠবার বিশ্বকাপে ৫০ রানের আগে চার ব্যাটারকে হারালো অস্ট্রেলিয়া।
উইকেটে সেট হয়ে রান আউটের ফাঁদে পড়েন ২টি চারে ২৮ বলে ১৪ রান করা মার্নাস লাবুশেন।
দুই পেসার নাভিন ও ওমরজাইর তোপে দিশেহারা অস্ট্রেলিয়াকে হারের মুখে ঠেলে দেন স্পিনার রশিদ। মার্কাস স্টয়নিসকে ৬ রানে ও স্টার্ককে ৩ রানে আউট করেন রশিদ।
১শ রানের আগে সাত ব্যাটারের পতনে অস্ট্রেলিয়ার গুটিয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আফগানিস্তানকে চাপে ফেলতে আগ্রাসী হয়ে উঠেন ম্যাক্সওয়েল। ২৬তম ওভারে হাফ-সেঞ্চুরির পর ৩৩ম ওভারে ওয়ানডেতে চতুর্থ ও এই বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পুর্ন করেন ১০টি চার ও ৩টি ছক্কা মারা ম্যাক্সওয়েল। শতক হাঁকাতে ৭৬ বল খেলেছেন ব্যক্তিগত ৩৩ রানে মুজিবের হাতে জীবন পাওয়া এই ডান-হাতি ব্যাটার।
সেঞ্চুরির পরও অবলীলায় রান তুলেছেন ম্যাক্সওয়েল। সেঞ্চুরির পর দেড়শতে পৌঁছাতে ২৮ বল খেলেন তিনি। ৪৬ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার দরকার পড়ে ২১ রান। ১৭৯ রানে ব্যাট করছিলেন ম্যাক্সওয়েল। মুজিবের করা ৪৭তম ওভারের দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম বলে ৩টি ছক্কা ও ১টি চার মেরে অস্ট্রেলিয়াকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দেন ম্যাক্সওয়েল। পঞ্চম বলে ছক্কা মেরে ক্যারিয়ারে প্রথম ও বিশ্বকাপে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে ডাবল-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১২৮ বল খেলা ম্যাক্সওয়েল। ২১টি চার ও ১০টি ছক্কায় ১২৮ বলে ২০১ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। রান তাড়ায় বিশ^কাপে কোন ব্যাটারের এটিই সর্বোচ্চ রান।
ম্যাক্সওয়েলকে সঙ্গ দেয়া কামিন্স ৬৮ বল খেলে ১টি চারে ১২ রানে অপরাজিত থাকেন। অষ্টম উইকেটে ১৭০ বলে অবিচ্ছিন্ন ২০২ রান যোগ করেন ম্যাক্সওয়েল ও কামিন্স। বিশ^কাপে অষ্টম উইকেটে এটিই সর্বোচ্চ রান। আফগানিস্তানের নাভিন-ওমরজাই ও রশিদ ২টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন ম্যাক্সওয়েল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
আফগানিস্তান : ২৯১/৫, ৫০ ওভার (ইব্রাহিম ১২৯*, রশিদ ৩৫*, হ্যাজেলউড ২/৩৯)।
অস্ট্রেলিয়া : ২৯৩/৭, ৪৬.৫ ওভার (ম্যাক্সওয়েল ২০১*, মার্শ ২৪, রশিদ ২/৪৪)।
ফল : অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেটে জয়ী।