বাসস
  ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:২১

দ্রুত বিকশিত হচ্ছে ভারতের বেসরকারি মহাকাশ খাত

প্যারিস, ১ অক্টোবর, ২০২৩ (বাসস ডেস্ক): ভারতীয় উদ্যোক্তা আওয়াইস আহমেদ যখন ২০১৯ সালে বেঙ্গালুরুতে তার স্যাটেলাইট স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠা করেন, তখনও তার দেশ বেসরকারি খাতে মহাকাশ শিল্প উন্মুক্ত করা থেকে পিছিয়ে ছিল। 
পিক্সেলের প্রতিষ্ঠাতা আওয়াইস আহমেদ বলেন, ‘যখন আমরা শুরু করি, তখন একেবারেই কোনো সমর্থন ছিল না, কোনো গতি ছিল না।’ এই কোম্পানি আর্থ ইমেজিং স্যাটেলাইটগুলোর একটি নক্ষত্রমন্ডলীয় অবস্থান নির্দিষ্ট করছে।  
এই কোম্পানির শুরুর পর থেকে, বেসরকারী মহাকাশ খাত ভারতে নতুন উদ্যমে যাত্রা শুরু এবং এটি দ্রুত বিকাশমান বিশ্ব বাজারে প্রবেশ করেছে।
এখন ১৯০টি ভারতীয় মহাকাশ স্টার্ট-আপ রয়েছে, যা এক বছরের আগের তুলনায় দ্বিগুণ, ২০২১ এবং ২০২২-এর মধ্যে বেসরকারী বিনিয়োগ ৭৭ শতাংশ বেড়েছে। বিজনেস কনসালটিং প্রতিষ্ঠান ডেলয়টি কনসালটেন্সি এ হিসাব প্রকাশ করেছে।
এএফপি’র সাথে এক সাক্ষাৎকারে আহমেদ বলেন, ‘অনেক ভারতীয় বিনিয়োগকারী মহাকাশ প্রযুক্তির দিকে তাকাতে ইচ্ছুক ছিলেন না। কারণ এটি আগে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।’ 
তিনি বলেন, ‘এখন আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে আরও বেশি সংখ্যক কোম্পানি ভারতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে এবং আরও অনেক কোম্পানি এখন আসতে শুরু করেছে।  
পিক্সেল হাইপারস্পেকট্রাল ইমেজিং স্যাটেলাইট তৈরি করে, এটি এমন প্রযুক্তি যা সাধারণ ক্যামেরায় অদৃশ্য সেটির বিশদ বিবরণ প্রদান করতে আলোর বিস্তৃত বর্ণালী ক্যাপচার করে।
সংস্থাটি বলেছে, এটি এই ‘গ্রহের জন্য একটি স্বাস্থ্য মনিটর’। এর মাধ্যমে জলবায়ু ঝুঁকি যেমন বন্যা, দাবানল বা মিথেন লিকের মতো ঘটনা শনাক্ত করা যাবে। 
পিক্সেল প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালিত ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) থেকে রকেট ব্যবহার করতে চেয়েছিল।
আহমেদ বলেন, ‘আমার মনে আছে ইসরোর (আইএসআরও) তে একজনের সাথে কথোপকথন হয়েছিল। আমরা একটি উৎক্ষেপণ বুক করার চেষ্টা করছিলাম এবং তারা বলেছিল, ‘দেখুন, ভারতীয়ের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য আমাদের কোনো ব্যবস্থা নেই। কিন্তু আপনি যদি একটি বিদেশী কোম্পানি হতেন, তাহলে সেটা সম্ভব হতো। এমন অবস্থায় আমরা কাজ শুরু করেছিলাম।’ 
পিক্সেলকে তার প্রথম দুটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য মার্কিন রকেট ফার্ম স্পেসএক্স নিয়োগ করতে হয়েছিল।
পিক্সেল বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৭১ মিলিয়ন অর্থ সংগ্রহ করেছে, যার মধ্যে গুগল থেকে ৩৬ মিলিয়ন রয়েছে, যা কোম্পানিটিকে পরের বছর আরও ছয়টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সুযোগ তৈরি করবে। 
স্টার্ট-আপটি হাইপারস্পেকট্রাল ইমেজ প্রদানের জন্য একটি মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা, ন্যাশনাল রিকনেসেন্স অফিসের সাথে একটি চুক্তিও সম্পাদন করেছে। 
ফ্রান্সের জাতীয় বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্রের ভারতীয় মহাকাশ খাতের বিশেষজ্ঞ ইসাবেল সোর্বেস-ভারজার বলেছেন, ২০২০ সালে এই খাত শুরুর আগে ‘সমস্ত ভারতীয় মহাকাশ কার্যক্রম ইসরোর তত্ত্বাবধানে ছিল, ইসরো সবকিছু পরিচালনা করত।’ 
২০২২ সালে ইসরোর বাজেট ছিল ১.৯ বিলিয়ন ডলার, যা চীনা মহাকাশ কর্মসূচির চেয়ে ছয়গুণ ছোট।
সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও, ভারতের মহাকাশ প্রোগ্রামটি বিশাল অগ্রগতি অর্জন করেছে, আগস্ট মাসে চাঁদের অনাবিষ্কৃত দক্ষিণ মেরুতে একটি রোভারের সফল অবতরণ সম্ভব হয়েছে। 
দেশটি এই মাসের শুরুতে সূর্যের দিকে একটি অনুসন্ধানী প্রোব পাঠিয়েছে, আগামী বছর পৃথিবীর কক্ষপথে তিন দিনের ক্রু মিশন পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। 
ইসরো নীতিগত সংস্কারের আগে, বেসরকারী সংস্থাগুলো শুধুমাত্র সংস্থার সরবরাহকারী হিসাবে কাজ করতে পারত।
এপ্রিলে ইসরোর এই সংস্কার একটি নতুন মহাকাশ নীতি উন্মোচন করেছে যা ‘মহাকাশ অর্থনীতিতে বেসরকারী খাতের বৃহত্তর অংশগ্রহনের সুযোগ তৈরি করবে।  
ভারত বলেছে, ৩৮৬ বিলিয়ন বৈশ্বিক মহাকাশ অর্থনীতির এই খাতে ভারতের অংশগ্রহণ মাত্র দুই শতাংশ। ২০৩০ সালের মধ্যে এটি নয় শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০৪০ সালের মধ্যে বাজারটি দাঁড়াবে ১ ট্রিলিয়ন ডলার।