শিরোনাম
প্যারিস, ৬ এপ্রিল, ২০২৪ (বাসস ডেস্ক): এখন থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পৃথিবী থেকে ৩ হাজার আলোকবর্ষ দূরে একটি বিশাল বিস্ফোরণে রাতের আকাশ জ্বলে উঠবে, যা অপেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জীবনে একবার মহাকাশের এই বিস্ময়কর ঘটনার সাক্ষী হওয়ার সুযোগ দেবে।
করোনা বোরিয়ালিস (টলেমির তালিকাভুক্ত) নক্ষত্রমন্ডলের বাইনারি তারা সিস্টেম নর্দান ক্রাউন বা ‘উত্তর মুকুট’ সাধারণত খালি চোখে দেখা যাবে না।
কিন্তু, প্রতি ৮০ বছর বা তার পরে এর দু’টি তারার মধ্যে শক্তির বিনিময় ঘটে। এটি একটি মারাত্মক আলিঙ্গনের মতো আবদ্ধ। যা পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটায়।
এই বিস্ফোরণ থেকে আলোর ঝলকানি মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। সেই উজ্জ্বলতা হঠাৎ করেই আমাদের রাতের আকাশে কয়েক দিনের জন্য দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
এটি অন্তত তৃতীয়বারের মতো হবে। যে মানুষ এই ঘটনাটি প্রথম প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি হলেন আইরিশ পলিম্যাথ জন বার্মিংহাম। ১৮৬৬ সালে তিনি এটি আবিস্কার করেন। তারপর ১৯৪৬ সালে পুনরায় সেই উজ্জ্বলতা আবির্ভূত হয়েছিল।
অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী সুমনার স্টারফিল্ড এএফপি’কে বলেছেন, তিনি নোভার ‘আউটবার্স্ট’ দেখে খুব উত্তেজিত।
সর্বোপরি, তিনি ‘ব্লেজ স্টার’ উজ্জ্বল তারকা হিসেবে পরিচিত ‘টি কোরোনেই বোরিয়ালিস’ নিয়েই কাজ করেছেন।
স্টারফিল্ড বর্তমানে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করছেন যা ভবিষ্যদ্বাণী করে যে, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা পুনরাবৃত্ত নোভা সম্পর্কে জানতে পারবেন, যখনই পরবর্তী পাঁচ মাসে এটি প্রদর্শিত হবে।
স্টারফিল্ড ব্যাখ্যা করেছেন যে, মিল্কিওয়ে এবং আশেপাশের গ্যালাক্সিতে প্রায় ১০টি পুনরাবৃত্ত নোভা রয়েছে।
তিনি বলেন, সাধারণ নোভা বিস্ফোরিত হয় ‘সম্ভবত প্রতি ১ লক্ষ বছরে।’ কিন্তু পুনরাবৃত্ত নোভাগুলো তাদের দুই নক্ষত্রের মধ্যে একটি অদ্ভুত সম্পর্কের কারণে মানুষের টাইমলাইনে তাদের বিস্ফোরণের পুনরাবৃত্তি করে।
একটি হল একটি শীতল মৃতপ্রায় নক্ষত্র যাকে লাল দৈত্য (রেড জায়ান্ট) বলা হয়। যেটি তার হাইড্রোজেনের মাধ্যমে জ্বলে উঠেছে এবং ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে। এর ভাগ্য যা প্রায় পাঁচ বিলিয়ন বছরে আমাদের নিজের সূর্যের পরিণতির মতোই অপেক্ষমান।
অন্যটি একটি শ্বেত বামন, একটি নক্ষত্রের মৃত্যুর পরের পর্যায়ে, সমস্ত বায়ুমন্ডল উড়িয়ে দেওয়ার পরে এবং শুধুমাত্র অবিশ্বাস্যভাবে ঘনীভূত কেন্দ্রীয় অংশটি অবশিষ্ট থাকে।
স্টারফিল্ড বলেন, তাদের আকারের বৈষম্য এতটাই বিশাল যে ‘টি কোরোনেই বোরিয়ালিস’ এর শ্বেত বামন তারাটির রেড জায়ান্ট প্রদক্ষিণ করতে ২২৭ দিন সময় লাগে।
দুটি এত কাছাকাছি যে রেড জায়ান্ট নির্গত পদার্থ শ্বেত বামন তারার পৃষ্ঠে আছড়ে পড়ে এবং সেটি টেনে নেয়।
স্টারফিল্ড বলেন,একবার মোটামুটি পৃথিবীর সমান ভর শ্বেত বামনের ওপর তৈরি হয়ে গেলে, যা প্রায় ৮০ বছর সময় নেয়। এতে একটি কিকস্টার্ট রানওয়ে থার্মোনিউক্লিয়ার প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। দ্রুত তাপ ও চাপ বৃদ্ধি পেয়ে বিষ্ফোরণ ঘটে
একজন অবসরপ্রাপ্ত জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী যিনি নোভা নিয়ে গবেষণা করেছেন, জোয়াকিম ক্রাউটার বলেছেন, এটি একটি ‘বড় বিস্ফোরণ এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তাপমাত্রা ১০০-২০০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াসে’ শেষ হয়।
ক্রাউটার এএফপি’কে বলেছেন, জমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপসহ অসংখ্য টেলিস্কোপ ক্যামেরা এখন টি করোনা বোরিয়ালিসের বিস্ফোরণের দিকে চোখ রাখছে।
ক্রাউটার বলেন, কিন্তু এই বিরল ঘটনার সাক্ষী হতে আপনার এমন উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন নেই। যখনই এটি ঘটবে ‘আপনাকে কেবল বাইরে যেতে হবে এবং করোনা বোরিয়ালিসের দিকে তাকাতে হবে।’
কিছু সৌভাগ্যবান আকাশ পর্যবেক্ষণকারীরা ইতোমধ্যেই সোমবার বছরের সবচেয়ে বড় জ্যোতির্বিদ্যার ঘটনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্ট্রিপ জুড়ে একটি বিরল পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ ঘটবে।