শিরোনাম
তেহরান, ২৩ মে, ২০২৪ (বাসস ডেস্ক) : প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি’র শেষ বিদায় অনুষ্ঠানের দিনে বৃহস্পতিবার ইরানে হাজারো মানুষের ঢল নেমেছিল। বিভিন্ন শহরে শোকার্ত মানুষেরা মিছিল করে রাস্তায় নেমেছে। হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার কয়েকদিন পর, আজ নিজ শহরে তাঁর দাফন সম্পন্ন হবে। রাইসি (৬৩) রোববার তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্য ছয়জনের সাথে ওই দূর্ঘটনায় নিহত হন। আজারবাইজান সীমান্তবর্তী একটি বাঁধ উদ্বোধন থেকে ফেরার পথে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। খবর এএফপি’র।
প্রেসিডেন্টকে বিদায় জানাতে বৃহস্পতিবার সকালে প্ল্যাকার্ড ও পতাকা নেড়ে হাজার হাজার মানুষ পূর্বাঞ্চলীয় নগরী বিরজান্দে মিছিল করে। কট্টর রক্ষণশীল প্রেসিডেন্টের জন্মস্থান উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় নগরী মাশহাদ এর প্রধান শিয়া কবরস্থান ইমাম রেজার মাজার শরীফে তিনি চির নিদ্রায় শায়িত হবেন।
বুধবার ইরানি গণমাধ্যমে প্রকাশিত চিত্রে মাশহাদের কর্মকর্তাদের দাফনের প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। ইরানের দ্বিতীয় নগরীর রাস্তায়, বিশেষ করে ইমাম রেজার মাজারের চারপাশে রাইসির বড় বড় ছবি, কালো পতাকা ও শিয়া প্রতীক স্থাপন করা হয়েছে।
মিডিয়ায় ‘শহীদ’ অভিহিত প্রেসিডেন্টকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বুধবার রাজধানী তেহরানে একটি দাফনের মিছিলের জন্য বিপুল জনতা জড়ো হয়। রাইসির সাফল্য নিয়ে ব্যাপক আশাবাদী সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি দুর্ঘটনায় নিহত আটজনের কফিনের সামনে হাঁটু গেড়ে প্রয়াত প্রেসিডেন্টের জন্য প্রার্থনার নেতৃত্ব দেন।
দুর্ঘটনায় নিহত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানকেও বৃহস্পতিবার রাজধানীর দক্ষিণে শাহর-রে শহরে শাহ আবদোল-আজিমের মাজারে দাফন করা হবে। তাঁর দাফনের আগে তেহরানে এক অনুষ্ঠানে প্রয়াত এই শীর্ষ কূটনীতিককে শ্রদ্ধা জানান ইরানি কর্মকর্তা ও বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা দি ইসলামিক রিপাবলিক নিউজ এজেন্সি(আইআরএনএ) জানিয়েছে, তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদ ও কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল-থানি বুধবার রাইসির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে এক শোক সভায় যোগ দেন। বিশ্বের ৬০টি দেশ ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলি সেখানে অনুপস্থিত ছিল, তবে সদস্য নয়, এমন বেলারুশ ও সার্বিয়ার মতো কিছু দেশের প্রতিনিধিরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
ইরানে চূড়ান্ত কর্তৃত্বের অধিকারী খামেনি পাঁচ দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবারকে (৬৮) ২৮ জুন রাইসির উত্তরসূরি নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন।
ইরানে পরের বছর পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রত্যাশিত ছিল না এবং রোববারের দুর্ঘটনার পর, রাইসির উত্তরাধিকারী কে হবে তা নিয়ে কিছু সংশয় সৃষ্টি হয়েছে, কেউ কেউ এব্যাপারে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন।
তেহরানে বুধবারের দাফনে শরীক হওয়া ৩১ বছর বয়সী মোহসেন বলেন, ‘আমি কীভাবে তার মতো কাউকে খুঁজে পাব? আমি সত্যিই এটি নিয়ে চিন্তিত। আমি যতদূর জানি, আমাদের কাছে তার সমকক্ষ কেউ নেই।’
রাইসি ২০২১ সালে মধ্যপন্থী হাসান রুহানির স্থলাভিষিক্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ওই সময় পারমাণবিক কর্মকান্ডের জন্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাঁর মৃত্যুর পর, রাশিয়া ও চীন এবং ন্যাটো তাদের শোকবার্তা পাঠায় এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এক মিনিট নীরবতা পালন করে। সিরিয়া সরকার, হামাস ও হিজবুল্লাহসহ ইরানের এতদঞ্চলের মিত্রদের কাছ থেকেও সমবেদনার বার্তা আসে।