বাসস
  ২১ আগস্ট ২০২৪, ১৫:৪২

নেপালি কিশোরের ৮ হাজার মিটার চূঁড়ায় আরোহণের স্বপ্নযাত্রা

কাঠমান্ডু, ২১ আগস্ট, ২০২৪ (বাসস ডেস্ক): মাত্র ১৮ বছর বয়সে নেপালি পর্বতারোহী নিমা রিনজি শেরপা একটি অসাধারণ কৃতিত্বের দ্বারপ্রান্তে।
ইতোমধ্যেই তিনি বিশ্বের ১৩টি সর্বোচ্চ শৃঙ্গে আরোহণের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। তিনি এখন ৮ হাজার মিটার (২৬,২৪৭ ফুট) উঁচু পর্বতারোহণের মাধ্যমে ১৪টি পর্বত জয় করে সর্বকনিষ্ঠ পর্বতারোহী হিসেবে রেকর্ড সৃষ্টির কাছাকাছি রয়েছেন।
নিমা রিনজি শেরপা ইতোমধ্যেই কয়েক ডজন শৃঙ্গের আরোহণের একাধিক রেকর্ড ধারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে এবং পর্বতারোহণের নতুন সংজ্ঞা’ দেওয়ার মিশনে রয়েছেন।
তার চূড়ান্ত চ্যালেঞ্জ যদি চীন অনুমতি দেয় তাহলে তিব্বতের শিশাপাংমা পর্বত চূঁড়ায় আগামী মাসে তিনি তার অভিযাত্রা শুরু করবেন।
‘আট-হাজার’ মিটার উচ্চতার ১৪টি পর্বতারোহণ তার উচ্চাকাক্সক্ষার প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।
ইতালীয় পর্বতারোহী রেইনহোল্ড মেসনার প্রথম ১৯৮৬ সালে এই কৃতিত্ব সম্পন্ন করেছিলেন এবং মাত্র ৪০ জন পর্বতারোহী সফলভাবে তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। আরও অনেক বিখ্যাত পর্বতারোহী এই প্রচেষ্টা চালাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
সমস্ত পর্বত হিমালয় এবং পার্শ্ববর্তী কারাকোরাম রেঞ্জে অবস্থিত, যা নেপাল, চীন, ভারত এবং পাকিস্তানে বিস্তৃত রয়েছে।
প্রতিটি শিখরে পৌঁছানোর জন্য ‘মৃত্যু অঞ্চল’ হালকা বাতাসে প্রবেশ করতে হবে। সেখানে দীর্ঘ সময় জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন নেই।
‘আমি যখন পাহাড়ে থাকি, যে কোনো সময় আমার মৃত্যু হতে পারে’ একথা উল্লেখ করে শেরপা বলেন, ‘আপনাকে বুঝতে হবে আপনার জীবন কতটা ঝুঁকিপূর্ণ।’
শেরপা বলেন, পাহাড় তাকে শান্ত থাকতে শিখিয়েছে। ‘মানসিকভাবে আমি নিজেকে বোঝাতে পেরেছি যখন আমি তুষারপাত, খারাপ আবহাওয়া, পাহাড়ে একটি দুর্ঘটনা দেখি তখন আমি তাড়াহুড়ো করি না,আমি ঘাবড়ে যাই না।’
নিমা রিনজি শেরপা বলেন, ‘আমি নিজেকে নিশ্চিত করেছি; পাহাড়ে এটাই স্বাভাবিক। আমি মনে করি এটি আমাকে অনেক সাহায্য করেছে।’
শেরপা জাতিগোষ্ঠী থেকে আসা পর্বতারোহণের দক্ষতার জন্য বিখ্যাত এই কিশোর পর্বতারোহীর কাছে এই অভিযানে যে কোন মুহূর্তে প্রাণ হারানো বিষয়টি অজানা নয়।  
তার চাচা, মিংমা গিয়াবু ‘ডেভিড’ শেরপা,বর্তমানে সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তির ১৪টি চূঁড়ায় আরোহণের রেকর্ড রয়েছে। তিনি ২০১৯ সালে ৩০ বছর বয়সে এটি অর্জন করেছিলেন।
তার বাবা,তাশি শেরপা তার ভাইবোনদের সাথে কিশোর বয়সে পর্বতারোহণে যোগ দেওয়ার আগে প্রত্যন্ত শঙ্কুয়াসভা জেলায় বড় হয়েছিলেন।
নেপালের সবচেয়ে বড় পর্বত অভিযান কোম্পানি সেভেন সামিট ট্রেকস এবং এর সহযোগী কোম্পানি ১৪টি পর্বত চূঁড়ায় অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
‘আমি একটি বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত পরিবার থেকে এসেছি’ উল্লেখ করে কিশোর আরোহী বলেন, ‘পাহাড়ে যাওয়া আমাকে শিখিয়েছে কষ্ট কি এবং জীবনের আসল মূল্য’।
ব্যস্ত রাজধানী কাঠমান্ডুতে বেড়ে ওঠা শেরপা প্রথমে ফুটবল খেলতে পছন্দ করতেন।
তিনি তার বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করার চেয়ে চিত্রগ্রহণ এবং ফটোগ্রাফিতে বেশি আগ্রহী ছিলেন।
শেরপা বলেন, ‘আমার পুরো পরিবার পর্বতারোহণ থেকে এসেছে। আমি সবসময় পর্বতারোহণ এবং অভিযানের কাছাকাছি ছিলাম’ কিন্তু আমি কখনোই পর্বতারোহণে নিজেকে যুক্ত করতে চাইনি।’
পরিবর্তে তিনি স্কুল ছুটির সময় তার ক্যামেরা নিয়ে পাহাড়ে যেতেন।
কিন্তু দুই বছর আগে তিনি পর্বতারোহণের জন্য তার ক্যামেরা রেখে পর্বতারোহণ শুরু করেন এবং তারপর থেকে রেকর্ড ভেঙে চলেছেন।
আগস্ট ২০২২-এ, শেরপা ১৪টি শৃঙ্গের মধ্যে তার প্রথম চূঁড়া জয় করেছিলেন। ১৬ বছর বয়সে বিশ্বের অষ্টম সর্বোচ্চ মাউন্ট মানালু (৮,১৬৩ মিটার) শীর্ষে পৌঁছেছিলেন।
তিনি যে শেষ পর্বতটি ছুঁয়েছিলেন তা ছিল জুন মাসে কাঞ্চনজঙ্ঘা। এর মাধ্যমে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতে আরোহণের জন্য সর্বকনিষ্ঠের রেকর্ড গড়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রকৃতি,মানবদেহ, মানব মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছি’। ‘পৃথিবীর সব কিছু আমি পাহাড় থেকে শিখেছি।’
যখন পাহাড়ে থাকেন না তিনি। প্রতিদিন ট্রেডমিলে দৌঁড়ান এবং জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলেন।
‘আপনার বড় পর্বত আরোহণের জন্য শারীরিক এবং মানসিকভাবে খুব ফিট হওয়া উচিত’ একথা উল্লেখ করে নিমা রিনজি শেরপার বাবা তাশি শেরপা বলেছেন, তিনি তাকে বছরের পর বছর ধরে চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত করতে সহায়তা করছেন। তিনি আরও বলেন, তিনি নতুনদের অনুপ্রাণিত করবেন।