শিরোনাম
ঢাকা, ৮ অক্টোবর, ২০২৪ (বাসস) : দশ বছর পর জম্মু-কাশ্মীরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জয়লাভ করেছে ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) ও কংগ্রেসের জোট। মঙ্গলবারের (৮ অক্টোবর) নির্বাচনে ৯০ আসনের মধ্যে ৪৯টি আসনে জয়ী হয়েছেন এই জোটের প্রার্থীরা।
এরই মধ্যে ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রধান ওমর আবদুল্লাহকে জম্মু-কাশ্মীরের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। নির্বাচনে এনসি ৫৬ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল, তার মধ্যে ৪২টিতেই জয়ী হয়েছে তারা। আর কংগ্রেস ৩৯টি আসনে প্রার্থী দিয়ে জয় পেয়েছে মাত্র ছয়টি আসনে।
পাঁচ বছর ধরে নানা চেষ্টা সত্ত্বেও জম্মু-কাশ্মীরে নির্বাচনে হেরে গেল বিজেপি। সেখানে ক্ষমতায় আসতে পারল না কেন্দ্রের শাসক দল। নরেন্দ্র মোদির ‘কাশ্মীর নীতি’ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে কাশ্মীরের জনগণ। সেখানে ক্ষমতায় আসতে চলেছে ন্যাশনাল কনফারেন্স (এসি), কংগ্রেস ও সিপিএমের জোট।
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বিজেপি ২৯টিতে এগিয়ে রয়েছে। নির্বাচনে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি) মাত্র তিনটি আসন পেয়েছে, যা আগের নির্বাচনের তুলনায় ২৫টি কম। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির কন্যা ইলতিজা হেরে গেছেন। পিপলস কনফারেন্সের সাজ্জাদ লোন ছাড়া আওয়ামী ইত্তেহাদ পার্টির এক প্রার্থী এগিয়ে রয়েছেন।
এনসি নেতা ফারুক আবদুল্লাহ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ রায় দিয়েছে। ওমর আবদুল্লাহই হবেন মুখ্যমন্ত্রী। ওমর গান্দরবাল ও বদগাম দুই আসন থেকেই জিতেছেন।
নির্বাচনের ফল দেশে তো বটেই, আন্তর্জাতিক স্তরেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাবে মোদির কাশ্মীর নীতিকে। কারণ এই ভোট এক অর্থে ছিল ৩৭০ অনুচ্ছেদ–সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গণভোট। মোদি এই রাজ্যকে এনসি, কংগ্রেস ও পিডিপির হাত থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন। তাঁর সেই ইচ্ছাও ব্যর্থ হলো।
জম্মু-কাশ্মীরের ভোটের ফল মোদি সরকারের কাশ্মীর নীতি অসারত্ব প্রমাণ করে দিল। সাবেক এই রাজ্যের জনগণ স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিলেন, যে লক্ষ্যে পাঁচ বছর আগে বিজেপি এই রাজ্য দ্বিখ-িত করেছিল, সংবিধান প্রদত্ত ৩৭০ অনুচ্ছেদের বিশেষ মর্যাদা খারিজ করেছিল, পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সৃষ্টি করেছিল, জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। সেই অর্থে এই ফল নিশ্চিতভাবে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে গণভোট।
অথচ কেন্দ্রীয় সরকার চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রাখেনি। লোকসভা ও বিধানসভার কেন্দ্রগুলোর সীমানা পুননির্ধারণ করে সাতটি আসন বাড়িয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ৬টি হিন্দু প্রধান জম্মুতে, মুসলমান প্রধান কাশ্মীর উপত্যকায় মাত্র ১টি। দুই অঞ্চলের আসনের মধ্যে যেখানে ৯ আসনের ফারাক ছিল, তা কমিয়ে করা হয় ৪টি। শুধু তাই নয়, আইন করে উপরাজ্যপালকে বিধানসভায় পাঁচজনকে মনোনীত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়, যাঁদের মধ্যে তিনজন থাকবেন নারী।
মন্ত্রিসভাকে এড়িয়ে সেই মনোনয়নের চেষ্টা গতকাল সোমবার রাতেই শুরু হয়, যার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার হুমকি দিয়েছে এনসি। এত চেষ্টা সত্ত্বেও এনসি-কংগ্রেস জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতার পথে। এই ফল মোদির কাশ্মীর নীতির পরাজয় ছাড়া আর কিছু নয়।